কম্পানির নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন, নানা রকমের দলিল ও সার্টিফিকেট দেওয়াসহ প্রায় ৩৬ ধরনের সেবার ফি বা চার্জ দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে যৌথ মূলধনী (জয়েন্ট স্টক) কম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার (আরজেএসসি)। ইতিমধ্যে সেবা ফি দ্বিগুণ করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল সার্টিফিকেট সরবরাহ করবে আরজেএসসি। এই সনদের ফি এক হাজার টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন পেতে পারে। আট বছরেরও বেশি সময় পর ফি বৃদ্ধির এ উদ্যোগ কার্যকর হলে সংস্থাটির বছরে আয়ও দ্বিগুণ হয়ে ১৫০ কোটিতে দাঁড়াবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, কম্পানি আইনের তফিসল-২-এর আওতায় সংস্থাটি বিভিন্ন সেবা ফি আদায় করে থাকে। ১৯৯৪ সালে কম্পানি আইন প্রণয়নের সময় যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল, প্রায় ১৪ বছর পর ২০০৭ সালে তা একবার বাড়ানো হয়। এরপর আট বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মকাণ্ড বাড়ায় সরকারের ব্যয়ও বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের আদায়যোগ্য করবহির্ভূত রাজস্ব এত দিন বাড়ানো হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর আরজেএসসি থেকে বিদ্যমান ফি দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর যৌক্তিকতা যাচাই করে গত সেপ্টেম্বর মাসে অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রও পাওয়া গেছে। ২০০৪ সালে মন্ত্রিসভা বৈঠকের এক সিদ্ধান্তে আরজেএসসির ফি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই ফি বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফি বাড়লে ব্যবসার খরচও বাড়ে। অনেক দিন পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে ফিগুলো বাড়িয়ে দ্বিগুণ না করে, পর্যায়ক্রমে বাড়ালে ভালো হয়।’
শেয়ার মূলধনী কম্পানির ফি
মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া সারসংক্ষেপের তথ্য অনুযায়ী, এখন শেয়ার মূলধনসম্পন্ন কম্পানির মূলধন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে এর নিবন্ধন ফি দিতে হয় ৩৬০ টাকা, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে।
মূলধনের পরিমাণ আরো বেশি হলে প্রথম ২০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে প্রতি ১০ হাজার বা এর অংশবিশেষের জন্য বর্তমানে ফি রয়েছে ১৮০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।
প্রথম ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০ হাজার টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য ফি বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হচ্ছে। এখন এর পরিমাণ ৪৫ টাকা।
মূলধনের পরিমাণ প্রথম ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০ হাজার টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য ফি বহাল রয়েছে ২৪ টাকা। এটি বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হচ্ছে। আর প্রথম ৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণ মূলধনের ক্ষেত্রে প্রতি এক লাখ টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য বিদ্যমান ফি ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
রিসিভারের দাখিল করা সংঘ-স্মারক বা কম্পানি অবলুপ্তির ক্ষেত্রে লিকুইডেটর রেজিস্ট্রারের কাছে যে বিবৃতি দাখিল করেন, তা বাদে কম্পানি আইনের আওতায় যেকোনো দলিল দাখিলের ফি ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর রেজিস্ট্রার দ্বারা কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করানোর ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হচ্ছে।
কম্পানি আইন অনুযায়ী বন্ধক বা ডিবেঞ্চার ও চার্জ নিবন্ধনের জন্যও ফি দিতে হয়। বন্ধক, ডিবেঞ্চার বা চার্জের দ্বারা নিশ্চয়তা বিধান করা মোট অর্থের পরিমাণ অনধিক পাঁচ লাখ হলে, সে ক্ষেত্রে এখন ফি দিতে হয় ১৫০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। প্রথম পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি পাঁচ লাখ বা এর অংশবিশেষের জন্য ফি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হচ্ছে। আর প্রথম ৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণ টাকার ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ লাখ টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য নির্ধারিত ফি ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া বন্ধক ও চার্জের নিবন্ধন বহি পরিদর্শনের ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ এবং রিসিভার নিয়োগ নিবন্ধনের ফি ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা টাকা হচ্ছে। কম্পানি আইন অনুযায়ী বন্ধক, চার্জ বা ডিবেঞ্চার প্রথমবার নিবন্ধনের পর নিশ্চয়তা দেওয়া অর্থের পরিমাণ পরে বর্ধিত করা হলে আবার ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ লাখ টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য একই হারে ফি দিতে হবে, যেন বর্ধিত অর্থ মূল অর্থের অংশ ছিল।
শেয়ার মূলধনবিহীন ও ২৮ ধারার কম্পানির ফি
কম্পানি আইনের আওতায় শেয়ার মূলধনবিহীন কম্পানি ও ২৮ ধারার অধীন লাইসেন্সের ভিত্তিতে নিবন্ধন করা কম্পানির বিভিন্ন ধরনের ফিও দ্বিগুণ করা হয়েছে। সংঘবিধি অনুযায়ী কোনো কম্পানির সদস্যসংখ্যা ২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে নিবন্ধন ফি দিতে হবে এক হাজার ২০০ টাকা। এখন এর পরিমাণ ৬০০ টাকা। সদস্যসংখ্যা ২০-এর অধিক থেকে ১০০ জন হলে বিদ্যমান নিবন্ধন ফি এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করবে আরজেএসসি। আর সদস্যসংখ্যা ১০০ জনের বেশি হলে প্রথম ১০০ জনের জন্য তিন হাজার টাকা দেওয়ার পর পরবর্তী প্রথম ১০০ জন বা এর কম সংখ্যক সদস্যের জন্য ফি ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। আর সংঘবিধিতে কোনো কম্পানির সদস্যসংখ্যা অসীমিত বলে গণ্য হলে নিবন্ধনের জন্য ফি দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। এখন এর পরিমাণ চার হাজার ৫০০ টাকা। কম্পানি গঠনের সদস্যসংখ্যা বাড়লে বর্ধিত সদস্যসংখ্যার ক্ষেত্রে ওপরের হারে নিবন্ধন ফি দিতে হবে। তবে প্রথমবার নিবন্ধনের পর কোনো কম্পানির সদস্যসংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন, বর্ধিত সদস্যদের জন্য নিবন্ধন ফি চার হাজার ৫০০ টাকার বেশি হবে না।
রিসিভারের দেওয়া সংঘস্মারক বা সারাংশ কিংবা কম্পানি অবলুপ্তির ক্ষেত্রে লিকুইডেটর যেসব বিবৃতি দাখিল করেন, সেগুলো বাদে সব ধরনের প্রয়োজনীয় বা অনুমোদিত দলিল দাখিলের ফিও দ্বিগুণ করা হচ্ছে। সংঘস্মারকের জন্য ৩০০ টাকার ফি বাড়িয়ে ৬০০ টাকা এবং অন্যান্য দলিলের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার ফি বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হচ্ছে। আর কম্পানি আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় বা অনুমোদিত কোনো বিষয় রেজিস্ট্রার দ্বারা লিপিবদ্ধ করানোর ফি ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হচ্ছে।
শেয়ার মূলধনবিহীন কম্পানি বা কম্পানি আইনের ২৮ ধারায় লাইসেন্স পাওয়া কম্পানির বন্ধক, ডিবেঞ্চার বা চার্জ দ্বারা নিশ্চয়তা দেওয়া অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ফি বিদ্যমান ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা, প্রথম পাঁচ লাখের পরে ৫০ লাখ পর্যন্ত হলে প্রতি পাঁচ লাখের ক্ষেত্রে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা এবং প্রথম ৫০ লাখের ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ লাখ বা এর অংশবিশেষের জন্য বিদ্যমান ফি ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হচ্ছে। বন্ধক বা চার্জের নিবন্ধন বহি পরিদর্শন ফি ১০০ থেকে বেড়ে ২০০ এবং রিসিভার নিয়োগ নিবন্ধন ফি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা হচ্ছে। কম্পানি আইন অনুযায়ী বন্ধক, চার্জ বা ডিবেঞ্চার প্রথমবার নিবন্ধনের পর নিশ্চয়তা দেওয়া অর্থের পরিমাণ পরে বর্ধিত করা হলে আবার ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ লাখ টাকা বা এর অংশবিশেষের জন্য একই হারে ফি দিতে হবে, যেন বর্ধিত অর্থ মূল অর্থের অংশ ছিল।
বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি কম্পানির ফি
বাংলাদেশের বাইরে গঠিত যেসব কম্পানির ব্যবসা বাংলাদেশে আছে, সেসব কম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধি দাখিলের ফি এক হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা, অন্যান্য নথি দাখিল ফি ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা হচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বন্ধক, ডিবেঞ্চার বা চার্জের দ্বারা নিশ্চয়তা বিধান করলে সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান ফি ২০০ থেকে বেড়ে ৪০০ টাকা, প্রথম পাঁচ লাখ টাকার পর ৫০ লাখ পর্যন্ত প্রতি পাঁচ লাখের নিবন্ধন ফি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, প্রথম ৫০ লাখের পর যেকোনো পরিমাণ অর্থের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ লাখে ফি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বন্ধক, চার্জ বা নিবন্ধন বহি পরিদর্শন ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ এবং রিসিভার নিয়োগ নিবন্ধন ফি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করা হচ্ছে।
সাধারণ ফি
কম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত যেকোনো কম্পানির নথিপত্র পরিদর্শনের ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, নিয়মিতকরণ প্রত্যয়নপত্রের অনুলিপির জন্য ফি ১০০ থেকে ২০০ এবং কম্পানির কার্যাবলি আরম্ভের সনদের অনুলিপির জন্য ফিও ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ফি দেওয়া সাপেক্ষে দলিলের নকল গ্রহণের জন্য প্রতি ১০০ শব্দ বা এর অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা করে ফি দিতে হবে। প্রত্যেক দলিলের জন্য সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ফি দিলে যেকোনো দলিলের নকল মূল দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাবে। এ ক্ষেত্রেও প্রতি ১০০ শব্দ বা এর অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা করে দিতে হবে। কম্পানির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব নিবন্ধন করার জন্য কোনো প্রস্তাব পাওয়া গেছে কি না, সে তথ্য রেজিস্ট্রার হতে জানার জন্য আবেদন ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কম্পানি আইনের আওতায় যেসব দলিল দাখিল করা বা নিবন্ধন করা দরকার হয়, তা নির্ধারিত সময়ের পরে দাখিল করতে প্রতিদিনের জন্য দুই টাকা হারে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের