ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে আশ্রয় নিশ্চিত ছিল মোশতাকের

মেহেদী হাসান
মেহেদী হাসান
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে আশ্রয় নিশ্চিত ছিল মোশতাকের
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজররা বাংলাদেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ পাঠান মোশতাক। পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানান। প্রাণ বাঁচানোর প্রয়োজনে মোশতাকের জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টারকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে খুনি মেজররা দেশ ছাড়ার আগে জেলহত্যার কথা জানতেন না খালেদ মোশাররফ। অভ্যুত্থানের তিন দিনের মাথায় পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে তাঁর বিপক্ষে ‘ভারতপন্থী’ প্রচারণাও জোরালো হয়ে উঠেছিল। নিউ ইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক বি জেড খসরুর ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ গ্রন্থে এসব বিষয় উঠে এসেছে। নয়াদিল্লির রূপা পাবলিকেশনস এ বছরই ওই বইটি প্রকাশ করে।
এর আগে খসরু ‘মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার, হাউ ইন্ডিয়া, চায়না অ্যান্ড ইউএসএসআর শেইপড দ্য আউটকাম’ নামে গ্রন্থ লিখেছিলেন।
‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের (ক্যু) আগাম ইঙ্গিত পেয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২১ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে উৎখাত করা মেজরদের সঙ্গে মোশাররফের বিরোধ শুরু হয় ৩ নভেম্বরের প্রথম প্রহরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর কয়েকজন সহকর্মীর পদোন্নতি হলেও খালেদ মোশাররফের পদোন্নতি হয়নি।
এতে তিনি বিরক্ত হন। যে মেজররা খন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়েছিলেন তাঁরাই মোশাররফকে বরখাস্ত করেন।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ‘মোশাররফ বা আরো অনেকে ওই বিরোধ সূচনা করেছিলেন কি না সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। বিশ্বাসযোগ্য একটি সূত্র আমাদের বলেছে যে তিনি কেবল তাঁর অধীনস্থদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর অধীনস্থরাই মোশতাক সরকারে ওই মেজরদের বিশেষ ভূমিকা শেষ করতে চেয়েছিলেন।
ওই মেজরদের ভূমিকা অনেক সামরিক কর্মকর্তার হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
ওই সূত্রের বরাত দিয়ে তারবার্তায় আরো বলা হয়েছিল, খালেদ মোশাররফের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বড় ধরনের রক্তপাত ছাড়াই অধীনদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। নিজের মহিমার বিষয়ে তিনি সজাগ ছিলেন।
মোশাররফ ও তাঁর মিত্ররা ৩ নভেম্বর ভোরে বঙ্গভবনের আশপাশের নিয়ন্ত্রণ নেন। রাষ্ট্রপতি মোশতাককে চারটি শর্ত দেন মোশাররফ- ১. চিফ অব স্টাফ (সেনাপ্রধান) পদ থেকে জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে তাঁকে (মোশাররফ) সে পদে বসানো, ২. মেজরদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার আওতায় আনা, ৩. সরকার অনুগত ট্যাংক বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ৪. রাষ্ট্রপতি পদে মোশতাককে বহাল রাখা।
অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে যান মোশতাক, সর্বোপরি তিনি চেয়েছিলেন রক্তপাত এড়াতে। তাঁর আশঙ্কা ছিল, রক্তপাত হলে ভারতের হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বাড়বে। মোশাররফের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়েন। সেই সমঝোতার আলোকেই মোশতাককে ক্ষমতায় বসানো মেজর ও তাঁর সহকর্মীদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
ওই সমঝোতার আগে মোশতাক কুমিল্লা সেনানিবাসের সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কুমিল্লার অধিনায়ক তা নাকচ করে বলেন, তিনি কেবল চিফ অব আর্মি স্টাফ (জিয়া, তখন তিনি বন্দি) বা চিফ অব জেনারেল স্টাফের (মোশাররফ) আদেশ মানবেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতার হত্যার ঘটনা ছিল সম্ভাব্য অন্য পরিকল্পনার একটি অংশ। মোশতাক নিহত হলে আওয়ামী লীগে তাঁর সহকর্মী, রাজনৈতিক বিরোধীদের মেরে ফেলার কথা ছিল। এ তালিকায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামারুজ্জামান।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ‘এক বা একাধিক মেজরের নির্দেশে সোমবার (১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর) ভোরে ঢাকা কারাগারে ওই নেতাদের হত্যা করা হয়েছে।’
তারবার্তায় আরো বলা হয়, ‘জেলহত্যার ঘটনায় জড়িত মেজরদের দেশ ছাড়ার ব্যাপারে মোশাররফের রহস্যময় মৌন সম্মতি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। অন্য একটি পক্ষ বলছে, সোমবার রাতে মেজরদের নিয়ে বিমানের ঢাকা ছাড়ার কথা তিনি জানতেন না। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, ওই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতপন্থী সরকারের নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
১৯৭৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সায়েম বলেছেন, মেজরদের বাংলাদেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার সময় মোশাররফ জেলহত্যার বিষয়ে জানতেন না। ঘটনা জানার পর হতভম্ব মোশাররফ সায়েমের কাছে ছুটে গিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার, এটি কিভাবে হলো?’
জেলহত্যার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুরো মন্ত্রিসভা মোশতাকের অধীনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে জিয়াউর রহমান মোশতাককে রাষ্ট্রপতি পদে থাকার আহ্বান জানালে এ কারণে তিনিও থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। মেজরদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর শাহ মোয়াজ্জেম ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহ মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের কারণ তেমন স্পষ্ট ছিল না। তবে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে আগস্টের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা জানতেন সন্দেহে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে থাকতে পারেন।
৩ নভেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে মোশতাক যখন মোশাররফের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তখন তাঁর (মোশতাক) মুখ্যসচিব মাহবুবুল আলম চাষী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টারকে জানান, পরিস্থিতির প্রয়োজনে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে কি না তা জানতে চেয়েছেন মোশতাক। কয়েকজন বলতে ফারুক ও রশীদের কথা বলছিলেন মুখ্য সচিব চাষী।
ওয়াশিংটনের নির্দেশনায় রাষ্ট্রদূত বোস্টার মুখ্য সচিব চাষীকে জানান, ‘বিদেশে আশ্রয় দেওয়া আমাদের স্বাভাবিক চর্চার মধ্যে পড়ে না। আর এ কারণে তাঁকে (মোশতাক) আশাব্যঞ্জক উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তাঁর মুখ্য সচিব এর খোঁজ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বোস্টার এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজি হন। চাষী বলেন, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।
বোস্টার জানতে চান, কতটা সময় আছে। জবাবে মাহবুবুল আলম চাষী বলেন, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা আর ওয়াশিংটন সময় ৩ নভেম্বর সকাল ৬টা ১৮ মিনিটের মধ্যে তিনি উত্তর পেতে চান। এরপর চাষী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে জানান, ‘দুই মেজর (ফারুক ও রশীদ) ছাড়াও রাষ্ট্রপতি মোশতাক দেশ ছাড়তে চান।’
রাষ্ট্রদূত বোস্টার খন্দকার মোশতাকের মুখ্য সচিব চাষীকে আবারও বিষয়টি বলতে বলেন। চাষী বলেন, রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী ওই সময়ের পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ জানাতে চান। বোস্টার ওয়াশিংটনকে এসব কথা জানান। ৫ মিনিট পর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে মুখ্য সচিব চাষী রাষ্ট্রদূত বোস্টারকে টেলিফোন করে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলমান আলোচনার কথা জানান। বোস্টারের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার আগে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে সামরিক আশ্রয় নিতে চান। তৃতীয় দেশটি যে যুক্তরাষ্ট্রই হতে হবে এমন নয়। তিনি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কথাও বলেন। এর বাইরে অন্য কোনো দেশকে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কি না বোস্টার জানতে চাইলে চাষী তা নাকচ করেন।
নির্দেশনা চেয়ে হেনরি কিসিঞ্জারকে পাঠানো তারবার্তায় বোস্টার লিখেছেন, ‘তিনি (চাষী) বলেছেন, অতীতে প্রেসিডেন্ট (যুক্তরাষ্ট্রের) ও তাঁর সরকারের কাছে সহমর্মিতা পাওয়ার কথা মনে রেখেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। আমি তাঁকে (চাষী) সতর্ক করে বলেছি, এ ধরনের অনুরোধ বিবেচনা করার জন্য এটি খুব অল্প সময়। এর পরও আমি যত দ্রুত সম্ভব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
বোস্টার যখন কিসিঞ্জারের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন তখন রাত ৮টা ২০ মিনিটে খুনি মেজররা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন। বোস্টার মুখ্য সচিব চাষীকে ফোন করে জানতে চান, ওই মেজরদের দেশ ছাড়ার পর আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধটি কি এখনো আছে? চাষী উত্তর দেন, ওই অনুরোধের অংশ হিসেবেই মেজররা দেশ ছেড়েছেন। রাষ্ট্রপতি মোশতাকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধটি এখনো বহাল আছে কি না তাও বড় প্রশ্ন। চাষী বলেন, ভবিষ্যতে যে দেশ চালাবেন তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেই রাষ্ট্রপতি মোশতাক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তা না হলে মোশতাককে সুরক্ষা দেওয়া নিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দিতে পারে।
‘আগামীতে যে দেশ চালাবেন’ এমন শব্দগুচ্ছের বিষয়ে বোস্টার জানতে চাইলে মাহবুবুল আলম চাষী বলেন, এ পর্যায়ে এর বেশি ব্যাখ্যা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি আশ্বাস দেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় এমন ব্যবস্থাই করা হবে।
এরপর কিসিঞ্জারকে পাঠানো তারবার্তায় বোস্টার রাষ্ট্রপতি মোশতাকের আশ্রয়ের অনুরোধের বিষয়ে দ্রুত নির্দেশনা চান। কিসিঞ্জার বোস্টারের কাছে নির্দেশনা পাঠান। এতে বলা হয়, ‘আপনি (বোস্টার) রাষ্ট্রপতি মোশতাককে আশ্বাস দিতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁর ব্যক্তিগত কল্যাণের বিষয়ে সজাগ। রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আপনি মোশতাককে বলতে পারেন, তিনি চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে পারেন। আপনি আপনার বিচার বিবেচনা অনুযায়ী তাঁকে এ-ও জানাতে পারেন যে, জীবন বিপন্ন হলে আমরা তাঁকে দূতাবাসেও সাময়িক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশ ছাড়ার আগে মোশতাক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেও বোস্টারকে নির্দেশনা দেন কিসিঞ্জার। তবে বাংলাদেশ ছাড়তে মোশতাক যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিমান পাঠানোর অনুরোধে করেছিলেন তাতে বিচলিত হয়েছিলেন তিনি। বোস্টারকে কিসিঞ্জার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর (বিমান পাঠানো) প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতায় যাঁরা আসবেন তাঁরা যদি মোশতাককে দেশের বাইরে পাঠাতে চান তাহলে সামরিক ও বেসামরিক বিমান আছে। মোশতাকের নির্বাসন বিষয়ে সমঝোতা না হলে কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিমান পাঠাতে পারবে না।
মেজরদের দেশ ছাড়ার ফলে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছিল। খন্দকার মোশতাক ও খালেদ মোশাররফ ৪ ও ৫ নভেম্বর আলোচনা চালিয়ে যান। ওই আলোচনার ফলে ৪ নভেম্বর রাতে মোশাররফ সেনাপ্রধান হন এবং ৬ নভেম্বর ভোরে ক্ষমতা ছাড়েন মোশতাক। পাশাপাশি নির্দলীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সায়েম রাষ্ট্রপতি হন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। জেল হত্যার প্রতিবাদে মন্ত্রিসভার সদস্যরা আগেই পদত্যাগ করেছেন।
১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর মোশাররফ নিজেকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেন। মেজরদের দেশ ত্যাগ ও জিয়াকে বরখাস্ত করার পর তিনি সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন। তবে তা স্থায়ী হয়নি। ৪ নভেম্বর অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর আসতে থাকে যে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও যশোর থেকে জিয়ার অনুগত সেনারা রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মোশাররফের এই ক্ষমতা গ্রহণ যে সেনাবাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি তা খুব শিগগিরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মোশাররফের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন পান জিয়াউর রহমান।
মোশাররফ ভারতঘেঁষা বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা ছিল। ৪ নভেম্বর শেখ মুজিবের পক্ষে মিছিল সমাবেশ হয়। জেল হত্যার প্রতিবাদে ৫ নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘট মোশাররফকে নিয়ে ওই ধারণাকে আরো পোক্ত করে। ৬ নভেম্বর ভোরে সেনাবাহিনীর নিম্নপদস্থরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এরপর মোশাররফ দ্রুত ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হন। ৬ নভেম্বর সারা রাত ও ৭ নভেম্বর সারা দিন রাজধানীজুড়ে গুলির শব্দ শোনা যায়। এর বেশির ভাগই ছিল মোশাররফকে উৎখাতের ঘটনা উদ্‌যাপন।
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে দুজনসহ তিন জেলায় চার খুন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে দুজনসহ তিন জেলায় চার খুন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লায় ঘুমন্ত নারীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। দিনাজপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান ও আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন, চাঁদ উদ্যান সড়কের লাউতলায় আল আমিন (৩০) নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

এর এক ঘণ্টা পর আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে ইব্রাহিম নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আদাবর থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সজীব ও রুবেল নামের দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

কুমিল্লা : দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘুমন্ত নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ঝরনা বেগম (৪৮) সাইলচর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুল করিমের স্ত্রী।

ঝরনা বেগমের স্বামী আব্দুল করিম জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অসুস্থতার কারণে স্ত্রী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। আগের রাতে ঝরনা তাঁকে আটটি ঘুমের বড়ি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে উঠে দেখেন স্ত্রীর লাশ। তাঁর মাথা থেঁতলানো এবং রক্তাক্ত।

দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহীন বলেন, ‘ওই নারীর মাথায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে, যেগুলো ইলেকট্রিক প্লায়ার্স বা স্ক্রু ড্রাইভারের আঘাত হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নানামুখী, আমরা তদন্ত করছি।’

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৩ নম্বর ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

গতকাল সকালে রাস্তা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত আসাদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার যুগীহারীখাড়িপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।

নিহতের বড় ভাই মকবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে পুরনো ভ্যান বিক্রি করে নতুন ভ্যান কেনেন আসাদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সেই ভ্যান চালাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।

রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আগলা গ্রামে ঘাসের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মো. আবরার (৬) ওই এলাকার ডা. শওকত শরীফের ছেলে। ডা. শওকত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কিশোরী হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি সুমন কাদেরী এসব তথ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।

 

মন্তব্য

সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ

শেয়ার
সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ
গতকাল শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল। আজ সকালে দেশে ফেরার আগে এই ট্রফি হাতে উদযাপনটাও সেরে নিয়েছেন লিটন দাস, তানজিদ হাসানরা। ছবি : মীর ফরিদ, কলম্বো থেকে

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়, ১৯৮৬ এশিয়া কাপ দিয়ে। তখন পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর সময় গড়িয়েছে, কালের বিবর্তনে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সব ফরম্যাটে জয়ও আছে।

কিন্তু কোনো ফরম্যাটে সিরিজ জেতা হয়নি। গতকাল প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৮ উইকেটের জয়ে নতুন ইতিহাস লিখল লিটন দাসের বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়েও বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাতাসে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম।
তবে ডাগ আউট সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশথেকে ছুটে কেউ মাঠে ঢুকে পড়েননি। আনন্দের প্রকাশ আছে, তবে তাতে যেন মিশে দূর ভবিষ্যতের প্রত্যয়। আজ ঢাকায় ফিরেই যে ঢুকে পড়তে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে!

জেতার জন্য ১৩৩ রান টি-টোয়েন্টিতে বড় লক্ষ্য নয়। তবে অলিখিত ফাইনালের চাপ, ব্যাটিংয়ের ফাঁকফোকর আর প্রেমাদাসার উইকেট বিবেচনায় এটা আবার আয়েশে পাড়ি দেওয়া দূরত্বেরও নয়।

কিছুটা ধাঁধার মতো। সতর্ক শুরু করলে আকস্মিক রানের চাপ বাড়তে পারে। আবার উড়িয়ে মারার ঝুঁকি আছে প্রেমাদাসায়। তাই মধ্যপন্থায় এগিয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে পারভেজ হোসেনকে হারানোর পর তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস আক্রমণ করেছেন, তবে নিজেদের রক্ষণ আলগা করে নয়।
তাতে এই দুজনের গড়া ৮৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি অজানা আশঙ্কা দূর করে দিয়েছে। কামিন্ডু মেন্ডিসকে সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ না দিলে হয়তো ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছাড়তে পারতেন লিটন। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে দল পরিচালনা এবং শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানোর জন্য এটুকু তাঁর প্রাপ্য ছিল। যাওয়ার আগে অবশ্য দলকে ভরসা দিয়ে গেছেন নুয়ান থুসারাকে র‌্যাম্প শটে বাউন্ডারি মেরে। তবে ম্যাচের সেরা শট তানজিদের। মাহিশ থিকশানাকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে মারা তাঁর ছক্কার শটটি ইউটিউবে বিপুল ভিউ পাবে নিশ্চিত! এর আগে-পরে আরো চার, ছক্কা এবং এক বাউন্ডারিতে ২৭ বলে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিজের পঞ্চম ফিফটি পূর্ণ করেছেন তানজিদ। বাঁহাতি এই ওপেনারের এমন দাপুটে ব্যাটিংয়ের কারণে কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি তাওহিদ হৃদয়কে। ওদিকে চাপের মুখে যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং করেছে লঙ্কানরা, ব্যক্তিগত ৬০ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তানজিদ। এরপর আর আউটই হননি তিনি। ৪৭ বলে ১ বাউন্ডারি আর ৬ ছক্কায় ৭৩ রান করে অপরাজিত থেকেছেন তানজিদ। আর উইনিং স্ট্রোক খেলেছেন ২৭ রানে অপরাজিত থাকা তাওহীদ হৃদয়।

মাস তিনেক আগে ঘটা করে তাঁকে টি-টোয়েন্টির সহ-অধিনায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম সফরে নীরবে নতুন দায়িত্বের সঙ্গে একাদশেও জায়গা হারিয়েছিলেন শেখ মেহেদী। তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটায় আর সবার চেয়ে তাঁর ওপর চাপ ছিল বেশি। যদিও মাঠে সে রকম কিছু মনে হয়নি। বরং মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন মেহেদী, যা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা টি-টোয়েন্টি বোলিংও। এর মধ্যে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে করা ২ ওভারে ২ উইকেট নিয়েছেন। নিজের কোটা পূর্ণ করেছেন ফিল্ডিং বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর। সে স্পেলেও জোড়া শিকার মেহেদীর। আর উইকেটগুলো যথাক্রমে কুশল পেরেরা, দীনেশ চান্ডিমাল, চারিথ আশালঙ্কা ও পাথুম নিশাঙ্কারবকলমে যাঁরা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাদ পড়া মুস্তাফিজুর রহমান গতকালও উজাড় করে দিয়েছেন। পাওয়ার প্লেতে নিখুঁত নিশানায় দুই ওভার করেছেন। পরের স্পেলে স্লোয়ার আর কাটারে ধন্দে রেখেছেন লঙ্কান ব্যাটারদের। তাতে ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান গুনেছেন মুস্তাফিজ, সঙ্গে আঁটসাঁট বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে একটি শিকার। এর মধ্যে শামীম হোসেনকে দিয়ে দুই ওভার বোলিং করিয়ে নিয়েছেন লিটন দাস। এই সিরিজে যেন অধিনায়ককে বিমুখ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শামীম! ১০ রানের বিনিময়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার মুখে কামিন্ডু মেন্ডিসকে থামিয়েছেন তিনি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে কাচটি দারুণ দক্ষতায় নিয়েছেন এক ম্যাচ বিরতির পর একাদশে ফেরা তানজিম হাসান। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়েছেন। তবে এক দিনে সবার তো আর সব হয় না। বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে যেমন শরিফুল ইসলাম রান গুনেছেন ৫০! তাতে শ্রীলঙ্কার ইনিংসও শেষ দিকে দাসুন শানাকার ঝটকায় এক শ ছাড়িয়ে যায়। ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার।

অবশ্য ম্যাচের নির্ঘণ্ট করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আশালঙ্কা একটা কথাই বারবার করেছেন, মেহেদী দারুণ বোলিং করেছে। টি-টোয়েন্টির একাদশে প্রত্যাবর্তনের রোমাঞ্চকর গল্প লিখলেন এই অফস্পিনার অলরাউন্ডার।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এক দিনে ৫৫ জনকে পুশ ইন

নিজস্ব প্রতি‌বেদক ও মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
নিজস্ব প্রতি‌বেদক ও মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
শেয়ার
সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এক দিনে ৫৫ জনকে পুশ ইন

ভারত থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি সীমান্তপথে ৫৫ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, ৩৩ জন নারী এবং ১০টি শিশু।

গতকাল বুধবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে এই পুশ ইনের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক।

এর আগে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ভারতীয় অংশে অবৈধভাবে অবস্থান করা সাত বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক আবু হানিফ মো. সিহানুক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিজিবি।সিলেট বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা যায়, নোয়াকোট, কালাইরাগ, তামাবিল ও শ্রীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে চারটি গ্রুপে এসব বাংলাদেশিকে পুশ ইন করা হয়। পরে সীমান্ত এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের সবাইকে আটক করেন।

 

বিজিবি সূত্র জানায়, সিলেট জেলার কালাইরাগ সীমান্তে সাতটি পরিবারের ১৯ জনকে আটক করা হয়। শ্রীপুর সীমান্তের মোকামপুঞ্জি এলাকা দিয়ে পুশ ইন করা হয় ১৩ জনকে। তামাবিল বিওপির নলজুরি থেকে দুজনকে আটক করা হয়। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপি এলাকার ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয় ২১ জনকে।

পুশ ইন হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে নড়াইলের ২৩ জন, যশোরের ১২ জন, সাতক্ষীরার ১০ জন, সিলেটের চারজন, বরিশালের দুজন এবং কুষ্টিয়া, খুলনা, হবিগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকার একজন করে রয়েছে। সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক  জানান,  আটককৃত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর  : ঝিনাইদহের মহেশপুর বিজিবির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক ভারত থেকে বাংলাদেশ আসার সময় বিএসএফ তাদের আটক করে। পরে মহেশপুর সীমান্তের বাগাডাঙ্গা বিওপিকে অবগত করে তারা। আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছ থেকে তাদের গ্রহণ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এই সাতজনের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী এবং তিনটি শিশু রয়েছে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

কুমিল্লায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নারীকে, দিনাজপুরে ভ্যানচালককে হত্যা

    রাজশাহীতে শিশুর লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
কুমিল্লায় ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নারীকে, দিনাজপুরে ভ্যানচালককে হত্যা

কুমিল্লায় ঘুমন্ত নারীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। দিনাজপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহীর পুঠিয়ায় পাওয়া গেছে ছয় বছরের এক শিশুর লাশ। কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

কুমিল্লা : দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘুমন্ত নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ঝরনা বেগম (৪৮) সাইলচর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুল করিমের স্ত্রী।

ঝরনা বেগমের স্বামী আব্দুল করিম জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অসুস্থতার কারণে স্ত্রী তাঁকে প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খাওয়াতেন। আগের রাতে ঝরনা তাঁকে আটটি ঘুমের বড়ি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে উঠে দেখেন, স্ত্রীর লাশ। তাঁর মাথা থেঁতলানো এবং রক্তাক্ত। ঘটনার পর থেকে ঝরনা বেগমের বড় ছেলে সবুজ নিখোঁজ রয়েছে।

দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহীন বলেন, ওই নারীর মাথায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে।

যেগুলো ইলেকট্রিক প্লায়ার্স বা স্ক্রু ড্রাইভারের আঘাত হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নানামুখী, আমরা তদন্ত করছি।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৩ নম্বর ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামে চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে রাস্তা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত আসাদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের যুগীহারীখাড়িপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।

নিহতের বড় ভাই মকবুল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে পুরনো ভ্যান বিক্রি করে নতুন ভ্যান কেনেন আসাদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সেই ভ্যান চালাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি।

রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিখোঁজ হওয়া এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আগলা গ্রামে ঘাসের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মো. আবরার (৬) ওই এলাকার ডা. শওকত শরীফের ছেলে। ডা. শওকত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কিশোরী হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি সুমন কাদেরী এসব তথ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে দুই কিশোরী আবরারকে খেলতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দুই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আবরারকে ঘাসের ভেতরে পাওয়া যাবে বলে তারা জানায়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ