<div> বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা আনার জন্য রিকশাভ্যান নিয়ে ছুটে যায় মীর হোসেন। বাঁশি ফুঁ দিলে গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীরা জমানো আবর্জনা তুলে দেন তার হাতে। এগুলো সে রিকশাভ্যানে করে নিয়ে আসে। মাস শেষে কেউ দেয় ৫০ টাকা, কেউ ৪০ টাকা। এ টাকা দিয়ে চলে মীর হোসেনদের সংসার। কিন্তু মীর হোসেনের চোখে তখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। অভাবে পড়ে যখন লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তখন বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে, মানুষের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা সাহায্য নিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে কুমিল্লার মীর হোসেন। দিনভর বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে রিকশাভ্যানে করে নিয়ে ফেলে আসার পর যে সময় পেত, সেটুকু ব্যয় করত সে লেখাপড়ার কাজে। তার স্কুলের শিক্ষিকা সুমি আক্তার ওই ছেলেটাকে স্বপ্ন জয়ের পথ দেখান। শত বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন জয় করে মীর হোসেন শনিবার সকাল থেকে আবার কাজে নেমে পড়ে কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসিমপুর গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে মীর হোসেন। মা নাসিমা বেগম ও পাঁচ ভাই নিয়ে তাদের সংসার। দুই ভাই বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। আর মীর হোসেন তার মা ও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকে অশোকতলা এলাকায়। তার মা ও ছোট ভাই আমির হোসেনও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে।</div> <div> কুমিল্লা রেলওয়ে পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা সুমি আক্তার বলেন, তিনি খেয়াল করেছেন, মীর হোসেন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা আনার সময় কাউকে লেখাপড়া করতে দেখলে থেমে যেত। ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকত সেদিকে। একদিন মীর হোসেনের এই মূর্তি দেখে তিনি জানতে চান তার আকাঙ্ক্ষার কথা। পরে তিনি ৩০০ টাকা দিয়ে ভর্তি করে দেন রেলওয়ে পাবলিক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাকিমও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন। বিনা বেতনে ও উপবৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন মীর হোসেনের। সুমি আক্তার নিজেই পড়াতেন মীরকে। বেতন নিতেন না।</div> <div> মেধাবী শিক্ষার্থী মীর হোসেন বলে, ‘পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাবাও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে, রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। পরে আমি বাবার কাজটি করা শুরু করি। শিক্ষিকা সুমি আপা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন।’</div> <div> এলাকার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী আবদুর রহিম বলেন, মীর হোসেন ও তার মা আমার বাসা থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যেত। তাকে মাসে তিন শ টাকা দেওয়া হতো পুরো বাড়ির ময়লা পরিষ্কারের জন্য। কুমিল্লা রেলওয়ে পাবলিক স্কুল থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ পাওয়ার খবর জেনে মীর হোসেন গতকালই আবার লেগে পড়ে কাজে। সঙ্গে ছিলেন তার মা নাসিমা বেগম আর ছোট ভাই আমির হোসেন।</div> <div> মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘ছেলে পরীক্ষায় পাস করছে। এ প্লাস নাকি পাইছে।’ এ প্লাস কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানি না, দেখি নাই।’</div> <div> স্বপ্ন জয়ের প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মীর হোসেনের চোখে-মুখে আনন্দের চেয়ে এখন দুর্ভাবনাই বেশি। আর নিজে শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত না হয়েও অসহায় এক শিক্ষার্থীকে স্বপ্নের পথে এগিয়ে নিতে পেরে আনন্দে চোখ ছলছল করে ওঠে শিক্ষিকা সুমি আক্তারের।</div>