<p><span style="font-size:18px"><strong>প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন</strong></span></p> <p><strong>আল্লামা আবদুল হালিম বুখারি</strong></p> <p>আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বুখারি বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশকালে মুসলমানদের থেকে রাজত্ব ও শিক্ষা কেড়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও তাহজিব-তমদ্দুন রক্ষা এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামকে বেগবান করার লক্ষ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ ও তার চিন্তাধারায় কওমি মাদরাসাগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও কওমি মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি দিয়ে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন।</p> <p>আল্লামা বুখারি বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেশের লাখ লাখ আলেম ও ছাত্রসমাজের প্রাণের দাবি ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এ দাবি মেনে নেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে এ শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আর কওমি মাদরাসার নেজাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এমন পদক্ষেপ কখনো গ্রহণ করা হবে না।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:18px"><strong>স্বীকৃতির ফলে শিক্ষার্থীদের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাবে</strong></span></p> <p><strong>আল্লামা আহমদ শফী</strong></p> <p>কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) সমমর্যাদা দিয়ে জাতীয় সংসদে বিল অনুমোদন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি দেশের লাখো আলেম ও ছাত্রসমাজের প্রাণের দাবি ছিল। জাতীয় সংসদে বিলটি পাস হওয়ায় আমাদের দাবি পূর্ণতা পেল। এতে ভবিষ্যৎ বংশধরদের পথচলা আরো সুগম হলো। আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমর্যাদা দেওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্যে দুই বিষয়ের মাস্টার্সের মর্যাদা পাবে দাওরায়ে হাদিস। এর ফলে কওমি শিক্ষার্থীদের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সমাজে-দেশে দুর্নীতি, অনিয়ম, সুদ-ঘুষের প্রচলন হ্রাস পাবে।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:18px"><strong>সনদের স্বীকৃতি নাগরিক অধিকার</strong></span></p> <p><strong>আল্লামা সুলতান জওক নদভি</strong></p> <p><strong>সম্প্রতি কওমি সনদের স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন বা প্রতিক্রিয়া কী?</strong></p> <p><strong>উত্তর : </strong>বাংলাদেশে কওমি ধারার শিক্ষা মূল ইসলামী শিক্ষা। এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাগরিক অধিকার। এত দিন কওমি সনদধারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সংসদে স্বীকৃতির বিল পাস হওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যদের মোবারকবাদ জানাই।</p> <p> </p> <p><strong>এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে চাকরি নাকি রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার মর্যাদা—কোনটি মুখ্য?</strong></p> <p><strong>উত্তর </strong>: রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার মর্যাদাই মুখ্য।</p> <p> </p> <p><strong>এর মাধ্যমে আসলে সরকারি চাকরি করার সুযোগ কতটুকু?</strong></p> <p><strong>উত্তর </strong>: এ স্বীকৃতির মাধ্যমে সরকারি চাকরির সুযোগ আছে কি না তা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। সরকারি নীতিমালা দেখলে বোঝা যাবে।</p> <p> </p> <p><strong>কওমি মাদরাসার কিছু ছাত্র আগে আলিয়া মাদরাসা থেকে পরীক্ষা দিত। স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে এ প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন?</strong></p> <p><strong>উত্তর : </strong>না, মনে করি না। শুধু দাওরায়ে হাদিসের সনদ নয়; বরং ইবতেদায়ি থেকে দাওরা পর্যন্ত পুরো শিক্ষাক্রমে স্বীকৃতি দেওয়া হলে এ প্রবণতা থাকবে না। কেননা তখন অন্য কোথাও পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আর থাকবে না।</p> <p> </p> <p><strong>অতীতে দেশ-বিদেশে আমাদের আকাবির হজরত কওমি সনদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন—আপনার এমন কোনো স্মৃতি আছে?</strong></p> <p><strong>উত্তর </strong>: স্বাধীনতার আগে নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা—মাওলানা আতহার আলী, খতিবে আজম সিদ্দিক আহমদ, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহউদ্দিন প্রমুখ কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করেছেন।</p> <p>ভারতে ‘দেওবন্দি’ তথা কওমি ধারার শিক্ষাসনদ অনেক আগে থেকে স্বীকৃত। পাকিস্তানেও আলেমরা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন।</p> <p>বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়েখ দফায় দফায় বৈঠক করে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও অনেকবার বৈঠক হয়েছে। অবশেষে সরকার বিশাল এ জনগোষ্ঠীর প্রাপ্য দাবি মেনে নিয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong><span style="font-size:18px">স্বীকৃতি যেন আদর্শবিচ্যুত না করে</span></strong></p> <p><strong>আল্লামা মাহমুদুল হাসান</strong></p> <p>যাত্রাবাড়ী মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসান কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, দেওবন্দের আট মূলনীতি ও কওমির স্বকীয়তা রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার জন্য ইতিহাস তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।</p> <p>মনে রাখতে হবে, স্বীকৃতির কারণে যেন কওমি অঙ্গন তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হয়। তিনি আরো বলেন, মাদরাসার উদ্দেশ্য মূলত কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাজকে আলোকিত করা। এ উদ্দেশ্য সাধনে স্বীকৃতি যেন অধিক সহায়ক হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে।</p> <p>কোনোভাবেই স্বীকৃতি যেন কারো দুনিয়াবি স্বার্থে ব্যবহৃত হতে না পারে, সেদিকেও কওমি উলামায়ে কেরামের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong><span style="font-size:18px">চাকরির চেয়ে সামাজিক মর্যাদা মুখ্য</span></strong></p> <p><strong>আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ</strong></p> <p>কওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী—এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আনন্দিত যে কওমি সনদের স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এটি ছিল কওমি অঙ্গনের দীর্ঘদিনের দাবি।</p> <p>‘চাকরি নাকি সম্মান, কোনটি মুখ্য’—এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা মাসউদ বলেন, চাকরির চেয়েও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা মুখ্য। যদিও যেভাবে আইন হয়েছে, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পাবে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ তথা ধর্মীয় ক্ষেত্রে এখন থেকে কওমি শিক্ষার্থীরাও সরকারি চাকরির সুযোগ পাবে।</p> <p>‘বিষয়টাকে অনেকে রাজনৈতিকভাবে দেখছেন’—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এতে রাজনীতি দেখি না। ২০০৯ সাল থেকেই সরকার সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে আন্তরিক ছিল। সরকার সব আলেমের ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে। পরিশেষে দিতে সক্ষম হয়েছে। আর একটা বিষয় হলো, যারা রাজনীতি করে, তাদের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:18px"><strong>আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির গুরুত্ব আছে</strong></span></p> <p><strong>আল্লামা আরশাদ রহমানি</strong></p> <p>ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরার পরিচালক আল্লামা আরশাদ রহমানি বলেন, কওমি মাদরাসার শিক্ষা মূলত কোরআন-হাদিসকেন্দ্রিক। এ শিক্ষার স্বীকৃতি দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ এটাই এ শিক্ষাব্যবস্থার মূল স্বীকৃতি। তা সত্ত্বেও জাগতিক কারণে এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিশেষ গুরুত্ব আছে। এ স্বীকৃতি পেয়ে কওমি মাদরাসাসংশ্লিষ্টরা আনন্দিত।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:18px"><strong>স্বীকৃতি দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল</strong></span></p> <p><strong>আল্লামা আবদুল কুদ্দুস</strong></p> <p>বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস জাতীয় সংসদে কওমি সনদের স্বীকৃতির অনুমোদন প্রসঙ্গে বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে আমাদের মুরব্বিরা আন্দোলন করেছেন। এই স্বীকৃতি দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। অন্য সরকারের আমলে এ পড়াশোনার মূল্যায়ন করা হয়নি। বর্তমান সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, মূল্যায়ন করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।</p> <p>২০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড—বেফাক আয়োজিত শোকরিয়া মিছিলে তিনি এ কথা বলেন।</p> <p>তিনি আরো বলেন, এ দুনিয়ার ছোট্ট জীবনে আমাদের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি-খুশি করা। স্বীকৃতি যেন আমাদের উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:18px"><strong>স্বীকৃতি আমাদের অধিকার</strong></span></p> <p><span style="font-size:16px"><strong>মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ</strong></span></p> <p>শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের আকাবিরদের কষ্টের নদী পার করে জন্ম নিয়েছে কওমি মাদরাসা। এ মাদরাসার স্বকীয়তা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস আছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p>তিনি আরো বলেন, দেশের জন্য, দ্বিনের জন্য, ইসলামের জন্য কওমি মাদরাসার ত্যাগ আর আকাবিরদের ঘামঝরা ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে আছে। যে স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি, এটা আমাদের অধিকার। এতে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ খুশি হয়েছে।</p> <p> </p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ</strong></p>