<p>পোশাক সভ্যতা, ভদ্রতা ও শালীনতার পরিচায়ক। পোশাকের মধ্য দিয়েই মানুষ তার সংস্কৃতি, জাতীয়তা, ধর্ম, ব্যক্তিত্ব ও রুচির পরিচয় দিয়ে থাকে। যেসব বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্বের গুণে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা, পোশাক তার অন্যতম। লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা যদিও পোশাক পরিধানের প্রধান উদ্দেশ্য। তথাপি কাঠফাটা রোদ আর হাড়কাঁপানো শীত থেকে বাঁচার জন্যও মানুষ এ পোশাকেরই আশ্রয় নেয়। সৌন্দর্য, আভিজাত্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশেও পোশাকের জুড়ি নেই। জন্মগতভাবে মানুষ বস্ত্র পরিহিত হয়ে দুনিয়ায় আসে না; কিন্তু মানুষের স্বভাব, ফিতরাত ও প্রকৃতি নগ্নতা ও বস্ত্রহীনতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না। তাই ধীরে ধীরে সেই বস্ত্রহীন শিশু বস্ত্রের আবরণে ঢাকা পড়ে যায়। বাড়ন্ত বয়স মানুষের কাছে নগ্নতা ও বস্ত্রহীনতাকে নেতিবাচক ও নিন্দনীয় করে তোলে। আবরণ ও আচ্ছাদন দিয়ে মানুষ নিজেকে ঢেকে রাখার তাগিদ অনুভব করেছিল সে আদিম আমলেই। কোরআনের ভাষ্য দেখুন—‘অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষফলের স্বাদ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজেদের আবৃত করতে লাগল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২২)</p> <p>লজ্জাশীলতা ও নগ্নতাকে ঢেকে ফেলার এই প্রবণতা মানুষের মজ্জাগত বলেই আদিম থেকে আধুনিক—সব যুগেই পোশাক পরিধানকে সভ্যতার অংশবিশেষ ভাবা হয়। হাল আমলের আমাজন জঙ্গলের গুহাবাসী মানুষদেরও দেখা যায়, লতাপাতা কিংবা পশুর চামড়া দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতে। এভাবেই পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সভ্যতা, শালীনতা ও ধার্মিকতা।</p> <p><strong>পোশাকের ইসলামী নীতিমালা</strong></p> <p>ইসলাম তার সর্বব্যাপ্ত কর্মপন্থা ও পরিপূর্ণতার আলোকে পোশাকের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তবে এটা সত্য যে ইসলাম পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। যেমন—ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, (শরিয়তের সীমারেখায় অবস্থান করে) ‘নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুসারে পানাহার করো এবং পোশাক পরিধান করো।’ (বুখারি)</p> <p>পোশাকের ইসলামী নীতিমালা হলো—১. পোশাকের আসল উদ্দেশ্য সতর আবৃত করা। ২. সৌন্দর্য ও সুরুচিবোধের অনুকূলে পোশাক পরিধান করা। ৩. বিজাতির অন্ধ অনুকরণ থেকে বেঁচে থাকা। ৪. অহংকার ও প্রদর্শনের মানসিকতা পরিহার করে পোশাক পরিধান করা। ৫. পুরুষরা টাখনুর ওপর পোশাক পরিধান করা। ৬. নারী-পুরুষের পোশাকে পার্থক্য বজায় রাখা। ৭. পুরুষরা রেশমি কাপড় পরিহার করা। ৮. জাফরান, লাল ও হলুদ রঙের পোশাক পরিধান না-করা উত্তম। ৯. ইসরাফ ও অপচয় থেকে বিরত থাকা। ১০. পরিষ্কার ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা। এ ১০টি মূলনীতির পেছনে শরিয়তে পর্যাপ্ত প্রমাণাদি রয়েছে।</p> <p><strong>বাঙালির পোশাক সংস্কৃতি</strong></p> <p>স্বার্থান্বেষী একটি মহলকে দেখা যায়, এ দেশের আপামর জনতার ধর্মীয় পরিচয়, বিশেষত মুসলমানিত্ব আড়াল করার জন্য বাঙালিত্বের ধুয়া তুলে মুখে ফেনা বের করে ফেলেন। অথচ তাঁরাই বাঙালির হাজার বছরের পোশাক সংস্কৃতিকে ‘গঙ্গার জলে বিসর্জন’ দিয়ে বিজাতির বোল-চাল, বেশভূষা গ্রহণে যারপরনাই কোশিশে রত আছেন। তাঁদের চরিত্রের দ্বৈততা, বৈচিত্র্য ও স্ববিরোধিতা দেখে বেরসিক লোকদেরও রসবোধ জাগে। হাজার বছরের বাঙালির পোশাক সংস্কৃতি কী ছিল, একজন সেক্যুলার বাঙালি গবেষকের ভাষায় শুনুন—‘মুকুন্দরামের লেখা থেকে জানা যায় যে তাঁর আমলের অর্থাৎ ১৬ শতকের শেষ দিকের সচ্ছল মুসলমানরা ইজার অথবা পায়জামা পরতেন। ধর্মমঙ্গলে লাউসেনকেও ইজার পরতে দেখা যায়। তা ছাড়া ধর্মমঙ্গলে মুসলমানদের লম্বা জামা এবং পাগড়ি পরার কথা লেখা হয়েছে।’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ, অবসর প্রকাশনী, পৃ. ৪৬৬)</p> <p>‘১৭ শতকের শাহনামার পাণ্ডুলিপিচিত্রে সবারই মাথা ঢাকা দেখা যায়। ১৮ শতকের যেসব ছবি পাওয়া গেছে, তা থেকেও প্রায় সবার মাথায় বস্ত্র দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৬৪)</p> <p>১৯ শতক সম্পর্কে তিনি লেখেন, ইংরেজদের আগমন সত্ত্বেও ১৯ শতকের প্রথম কয়েক দশকে পোশাকে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, সেকালের সবচেয়ে অভিজাত এবং নেতৃস্থানীয় লোকেরাও লম্বা কোর্তা, চাপকান, জুব্বা ও মাথায় হয় পাগড়ি, নয়তো টুপি ছিল। এটাই ছিল অভিজাতদের ভদ্র পোশাক।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৬৯)</p> <p>ইংরেজ আমল নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ইংরেজ আমলেও পোশাকের প্রতি সমাজের যে রক্ষণশীলতা থাকে, তার জন্য পাশ্চাত্য পোশাক বাঙালি সমাজে ঢুকতে পারেনি। মেয়েদের ব্যাপারে এই রক্ষণশীলতার মাত্রা আরো বেশি ছিল। ২০ শতকের শেষেও নারী ও পুরুষদের পোশাক তুলনা করলে নারীদের পোশাকে রক্ষণশীলতা দেখা যায়।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭০)</p> <p>নারীদের পোশাক নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নবাবি অথবা ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকেও কোনো বাঙালি নারীকে শাড়ি ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরতে দেখা যায়নি।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭৩)</p> <p>এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা দরকার যে ‘মুসলমান মেয়েরা সালোয়ার-কামিজও পরত আর পরত ওড়না।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮০)</p> <p>সাবেক সচিব এ জেড এম শামসুল আলম লিখেছেন, ‘বাঙালি মুসলিম ভদ্র শ্রেণির অতীতের পোশাক ছিল পায়জামা, পাঞ্জাবি। সাধারণ মানুষের পোশাক ছিল লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি। আর মুসলিম মেয়েরা ওড়না বা বোরকাজাতীয় অতিরিক্ত বস্ত্রে তাদের দেহ, বিশেষ করে বক্ষদেশ ঢেকে রাখতে চেষ্টা করেন।’ (বাঙালি সংস্কৃতি, এ জেড এম শামসুল আলম, মুহাম্মদ ব্রাদার্স, পৃ. ৮৩ ও ৮৭) সুতরাং বর্তমানে ‘শিক্ষিত’ ও উচ্চবিত্ত বাঙালি নারী-পুরুষের যে পোশাক দেখা যায়, তা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।</p> <p><strong>বাঙালির পোশাক সংস্কৃতির বিবর্তনধারা </strong></p> <p>ইংরেজ বেনিয়াদের অধীনতার শিকল—বেড়ি থেকে বাঙালি এখন মুক্ত, কিন্তু তাদের শোষণ, শাসন ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের অংশ হিসেবে তারা পূর্বঘোষণা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের চেতনা ও সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে বাঙালির জীবনে-মননে। বাঙালির জাগতিক ও আর্থিক অনগ্রসরতাকে কাজে লাগিয়ে তারা সে ঘোষণা অনুসারে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করে, যার মাধ্যমে এমন এক সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে, যারা রক্তে, বর্ণে হিন্দুস্তানি; কিন্তু চিন্তা-চেতনা, ভাষা ও মানসিকতায় ইংরেজ।</p> <p>তারপর ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হলো। নারীবাদী লেখিকা মালেকা বেগম মনে করেন, ইউরোপীয় শিক্ষা ও ভাবধারার সংস্পর্শে বাঙালি সমাজ নতুনভাবে জীবনকে উপলব্ধি করতে শুরু করে।’ (আমি নারী, ৩০০ বছরের বাঙালি নারীর ইতিহাস, পৃ. ২০৬)</p> <p>শামসুল আলম লিখেছেন, ‘বাঙালি মুসলিমের আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সহজ, সরল, সাদাসিধা পোশাক পাঞ্জাবির আবেদন দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের প্যান্ট, শার্ট বাঙালি মুসলমানের দেহে দৃঢ় আসন গেড়ে বসে আছে।’ (বাঙালি সংস্কৃতি, পৃ. ৮৭)</p> <p>ড. গোলাম মুরশিদ লেখেন, ‘১৯ শতক শেষ হওয়ার আগেই ইংরেজি শিক্ষিতদের মধ্যে পশ্চিমা পোশাক অথবা সে পোশাকের কিছু উপকরণ অনুপ্রবেশ করেছিল।’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃ. ৪৭৩)</p> <p>পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে নারীদের পোশাকেও। এ বিষয়ে মালেকা বেগম লিখেছেন, ‘বাঙালি নারীর পোশাকে আধুনিকতার স্পর্শ লাগে ১৯ শতকের ষাটের দশকে। তবে নারীর পোশাকের শোভনতা নিয়ে শিক্ষিত সমাজে আলোচনা ওঠার পর নারীরা সব ধরনের পোশাক পরতেই শুরু করে। আশির দশক থেকে নারীদের পোশাকে ইউরোপীয় ও দেশীয় ঢঙের অদ্ভুত মিশ্রণ লক্ষ করা যায়।’ (আমি নারী, পৃ. ৮৯-৯১)</p> <p>বর্তমানে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। ড. মুরশিদ মনে করেন, ‘শহরের শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে অসনাতনি (অবাঙালি) পোশাকের প্রচলন শুরু হলেও পা এবং বুক যথেষ্ট ঢেকে রাখার রীতি বাঙালি সমাজে এখনো যথেষ্ট জোরালো। সে জন্য নামমাত্র হলেও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে এখনো তাদের ওড়না পরতে হয়, তা সে ওড়নায় বক্ষদেশ ঢাকুক অথবা না-ই ঢাকুক। ট্রাউজার-টপ পরা মেয়েরা অবশ্য ওড়না পরে না।’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃ. ৪৮০)</p> <p>বর্তমানের ফ্যাশন ডিজাইন, মডেলিং, স্টাইলিং, আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার জোয়ারে নারীরাও শার্ট, প্যান্ট, জিন্স, ফতুয়া, কাতুয়া, টি-শার্ট, গেঞ্জি, ওড়না ছাড়া উন্মুক্ত বক্ষেই চলে এবং শর্ট কামিজ পরতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি কতটা বদলে গেল? নারীবাদী লেখিকা মালেকা বেগম লেখেন, আধুনিক নারীর প্রগতি দেখে অনেকে বিস্মিত, অনেকে উপমহাদেশীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে একে মেলাতে পারছেন না কিংবা কেউ কেউ একে জাতীয় ভাবধারার বিরোধী বলে মনে করছেন। (আমি নারী, পৃ. ২০৭)</p> <p>এভাবেই ব্রিটিশদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে বাঙালি শুধু মুসলমানিত্বকেই ছুড়ে ফেলেনি, বাঙালিত্বকেও বিসর্জন দিয়েছে।</p> <p><strong>পর্দা, শালীনতা ও আধুনিকতা</strong></p> <p>পূর্বসূরিদের রক্ত দেহে ধারণ করেও বাঙালি নারীরা এখন অনেক শিক্ষিত হয়েছে, আধুনিক হয়েছে, স্মার্ট হয়েছে, নিজেদের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছে, এখন তারা পড়শির সঙ্গে ভাববিনিময় করতে শিখেছে, প্রেম, প্রণয় ও পরকীয়া করতে শিখেছে। আর এসবের ক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে ভারী ও প্রতিবন্ধক ভাবছে সেই পূর্বসূরিদের পোশাককে। তাই তারা ধীরে ধীরে নিজ পোশাককে টুকরো টুকরো করে নগ্নতার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু নগ্নতা ও বস্ত্রহীনতা মানেই কি আধুনিকতা? অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা ড. জিনিয়া জাহিদের মতে, ‘আধুনিকতার নগ্ন স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে নারীরাই নিজেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। নগ্নতা আর যৌনতাই যদি হয় নারীস্বাধীনতা ও সমানাধিকারের মাপকাঠি, তাহলে আমাদের নারীদের আবার ভেবে দেখতে হবে। আসলেই আমরা কেমন স্বাধীনতা চাই।’ (ড. জিনিয়া জাহিদের কলাম, ‘নগ্ন মডেল, একজন তসলিমা ও নারীস্বাধীনতা’, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম : ৯-৩-১৪)</p> <p>আসলে নগ্নতাই যদি সভ্যতা ও আধুনিকতা হয়, তাহলে আদিম প্রস্তরযুগের গুহাবাসীদের অসভ্য, বর্বর ও অনাধুনিক বলার যুক্তি নেই। কারণ তারা আরো বেশি বস্ত্রহীন ছিল। বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া নারীর পোশাক কেমন হওয়া চাই, এ বিষয়ে বলেন, ‘কেউ কেউ বোরকা ভারী বলিয়া আপত্তি করেন। কিন্তু তুলনায় দেখা গিয়াছে ইংরেজ মহিলাদের প্রকাণ্ড হ্যাট অপেক্ষা আমাদের বোরকা অধিক ভারী নহে।’ (রোকেয়া রচনাবলী, পৃ. ৫৭)</p> <p>‘বোরকা’ প্রবন্ধের সব শেষে তিনি বলেন, ‘আশা করি, এখন আমাদের উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত ভগ্নিরা বুঝিতে পারিয়াছেন যে, বোরকা জিনিসটা মোটের উপর মন্দ নহে।’ (রোকেয়া রচনাবলী, পৃ. ৬৩)</p> <p>বাঙালি আধুনিক নারীরা শুধু তাদের রক্তের পূর্বসূরিদের পথ থেকেই সরে যায়নি, তারা তাদের আদর্শের পূর্বসূরি বেগম রোকেয়ার সঙ্গেও বেঈমানি করেছে।</p> <p>বেদনাদায়ক সত্য হলো, আমাদের কোনো জাতীয় পোশাক নীতিমালা নেই। শত শত বছর ধরে সাধারণ বাঙালি মুসলমান লুঙ্গি ও ফতুয়া পরেছে। কালের পরিবর্তনে একসময় তারা ফতুয়ার নিচে গেঞ্জি পরতে শুরু করে। উচ্চবিত্তের মুসলিমরা পাঞ্জাবি, পায়জামা ও মাথায় এক ধরনের টুপি (কিস্তি বা তুর্কি টুপি) পরত। বিশেষ অনুষ্ঠানে তারা শেরওয়ানি পরিধান করত। মেয়েরা শাড়ি দিয়ে গোটা শরীর ঢেকে রাখত। ব্লাউজ ও পেটিকোটের তখনো প্রচলন হয়নি। মুসলমানদের আগমনের পর তারা ব্লাউজ ও পেটিকোট পরতে শুরু করে। হিন্দুরা মুসলমানদের পোশাক গ্রহণ করেনি। তাই হাজার বছরের হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি একও নয়। নিম্নবর্ণের হিন্দুরা মালকোঁচা দিয়ে ধুতি বা কাপড় পরত। তারা শীতকালে গায়ে চটের ছালা পরত আর ১২ মাস খালি গায়ে থাকত। সাধারণ হিন্দুরা লুঙ্গি ও ফতুয়া পরত আর উচ্চবর্ণের হিন্দুরা লুঙ্গি বা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পাঞ্জাবি, পায়জামা ও মুজিব কোট পরতেন। তখন এটাই ছিল আমাদের জাতীয় পোশাক। মোশতাক সরকার ক্ষমতায় এসে মুজিব কোট বাদ দিয়ে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শেরওয়ানি ও তুর্কি টুপি পরার বিধান জারি করেছে। এ দেশের জাতীয় পোশাক হিসেবে এখনো উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে, ‘পুরুষদের জন্য পায়জামা, লুঙ্গি, কোর্তা, পাঞ্জাবি। নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ।’ দেখুন-http://en. wikipedia.org/wiki/ national castume# south_Asia _Bangladesh)</p> <p>কিন্তু সমাজবাস্তবতা সে কথার সত্যায়ন করে না।</p> <p><strong>লেখক :</strong> শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা নবাবপুর, ঢাকা।</p>