<p>পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের কিনার ঘেঁষে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী, আয়তনে পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরব। ভূ-রাজনৈতিকভাবে এর উত্তরে জর্দান ও ইরাক, উত্তর-পূর্বে কুয়েত, পূর্বে কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। দক্ষিণ-পূর্বে ওমান ও দক্ষিণে ইয়েমেন অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর ১৪তম দেশ সৌদি আরব। এর আয়তন ২১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯০ বর্গকিলোমিটার। এর প্রায় সবটুকুই জলভাগ। বেশির ভাগই বালুকাময় মরুভূমি। দেশটির সীমান্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র সাতটি—ইরাক, জর্দান, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। দেশটির স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য চার হাজার ২৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ইরাকের সঙ্গে ৮১১ কিলোমিটার, জর্দানের সঙ্গে ৭৩১ কিলোমিটার, কুয়েতের সঙ্গে ২২১ কিলোমিটার, ওমানের সঙ্গে ৬৫৮ কিলোমিটার, কাতারের সঙ্গে ৮৭ কিলোমিটার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ৪৫৭ কিলোমিটার এবং ইয়েমেনের সঙ্গে লেগে আছে এক হাজার ৩০৭ কিলোমিটার স্থলসীমা। সমুদ্রতটরেখার দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৬৪০ কিলোমিটার। দেশটির রাজধানীর নাম রিয়াদ। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা তিন কোটি ৩৩ লাখ দুই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে এক কোটি ৮৩ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি (৫৫.২%) পুরুষ এবং এক কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি (৪৪.৮%) মহিলা ।</p> <p>১৯৮০ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের প্রদেশ ছিল ছয়টি। ১. নজদ (মধ্যাঞ্চল), ২. হেজাজ (পশ্চিমাঞ্চল), ৩. শাম্মার (উত্তরাঞ্চল), ৪. আছির (দক্ষিণাঞ্চল), ৫. রুবআল খালি (দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল) এবং ৬. আল আহসা (পূর্বাঞ্চল)। তবে বর্তমান সৌদি আরবের রয়েছে ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চল বা প্রদেশ। যেগুলোকে আরবিতে মানাতিকু ইদারিয়্যাহ বলা হয়। প্রতিটি প্রদেশ কয়েকটি গভর্নরেটর বা মুহাফাজাতে বিভক্ত। বিভক্ত অঞ্চলগুলোর (মুহাফাজা) আঞ্চলিক রাজধানীকে বলা হয় আমানাহ। সেগুলো মেয়র বা আমিন দ্বারা পরিচালিত। প্রদেশগুলো হলো—১. আল কাসিম। এর রাজধানী বুরাইদাহ। এতে রয়েছে ১১টি গভর্নরেটর। ২. রিয়াদ। রিয়াদে রয়েছে ২০টি গভর্নরেটর। ৩. তাবুক। এতে রয়েছে ছয়টি গভর্নরেটর। ৪. মদিনা। এর রাজধানী মদিনা মুনাওয়ারা। এতে রয়েছে সাতটি গভর্নরেটর। ৫. মক্কা। রাজধানী মক্কা মুকাররমা। এর গভর্নরেটর ১২টি। ৬. উত্তর সীমান্ত। এতে রয়েছে তিনটি গভর্নরেটর। ৭. আল জাওফ। রাজধানী সাকাকাহ। গভর্নরেটর তিনটি। ৮. হায়েল। রাজধানীও হায়েল। এতে রয়েছে চারটি গভর্নরেটর। ৯. আল বাহা। রাজধানীও আল বাহা। গভর্নরেটর সাতটি। ১০. জাজান। রাজধানীও জাজান। গভর্নরেটর সংখ্যা ১৪টি। ১১. আছির। রাজধানী আবহা। গভর্নরেটর ১২টি। ১২. নাজরান। রাজধানীও নাজরান। গভর্নরেটর সংখ্যা ৮টি। ১৩. পূর্বাঞ্চল প্রদেশ। রাজধানী দাম্মাম। গভর্নেরটর ১১টি।</p> <p>ভৌগোলিকভাবে সৌদি আরবই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। পৃথিবীর প্রথম ভূমিই মক্কা বা বাক্কা। ইসলাম আসার বহু আগ থেকে মক্কা ঐতিহাসিক নগরী। বহু নবী-রাসুলের পদচিহ্ন লেগে আছে এই পুণ্যভূমিতে। কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকেই চতুর্দিকে বিস্তৃতি লাভ করেছে। প্রথমে একটি বিশাল মহাদেশ সৃষ্টি হয়। এ কারণে মক্কা শরিফকে উম্মুল কুরা বা নগরীগুলোর মূল বলে অভিহিত করা হয়েছে। (তারিখে তাবারি : ১/৪৯; আল-বাদউ ওয়াত্তারিখ : ৪/৮১-৮২)। উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল আরাবিয়া : ২৩ জুলাই, ২০১২)। আরেকটি বিষয় আমরা জানি যে বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে সূর্য ঠিক মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায় ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন—২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপরে। (কালের কণ্ঠ : ২৮ মে, ২০১৪)। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না।</p> <p>মূলত সৌদি আরব একটি পেট্রোলিয়ামভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। পেট্রোলিয়াম পদার্থ ছাড়াও দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস, মূল্যবান লৌহ ধাতু, স্বর্ণ, তামাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে ভরপুর। পৃথিবীর মোট পেট্রোলিয়ামের প্রায় ১৬ শতাংশই সৌদি আরবের দখলে। দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ৯০ শতাংশই আসে তেলশিল্প থেকে। প্রায় ৬০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করে নিজেদের ও সৌদি আরবের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীর বৃহত্তম নদীবিহীন দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতিতে কৃষির ভূমিকা একেবারেই নগণ্য। তবে কৃষিজাত ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ৮০.৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৯.১ শতাংশই চারণভূমি। দেশটির মোট আয়তনের ২ শতাংশেরও কম ভূমি ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। চাষাবাদের উপযোগী জমির প্রায় অর্ধেক বৃষ্টিপুষ্ট শুষ্ক কৃষিজমি। দুই-পঞ্চমাংশ ভূমিতে উদ্ভিদ এবং অবশিষ্ট ভূমি হলো সেচের। বেশির ভাগ সেচের ভূমিই রিয়াদ ও আল কাসিম জেলায়। খেজুর, দুগ্ধ পণ্য, ডিম, মাছ, ফলফলাদি, সবজি ও ফুল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য দেশেও সেগুলো রপ্তানীকরণে তারা বেশ মনোযোগী হয়েছে।</p> <p>লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব</p>