<p>প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার আল্লাহ তাআলার নির্দেশকে সামনে রেখে মুহাম্মদ (সা.) মক্কার সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে সব গোত্রের নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু কয়েকটি কারণে তারা এ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে—১.  কাবার চারপাশে যে মূর্তি স্থাপিত ছিল তাতে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থটি বড় ছিল। ২.    তারা এর দ্বারা বাইরের মুলুকে সম্মানিত ছিল। ৩. ঘরে-বাইরে তারা আলাদা নিরাপত্তা পেত। ৪. পৌত্তলিক সর্বস্ব ধর্মের কারণে তাদের নেতৃত্ব সবাই মানত। ৫.  মুহাম্মদ যে একত্মবাদ প্রচার করছেন, তাতে বহু দেবতার মূর্তি থাকবে না। ৬. পূর্বপুরুষদের ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।</p> <p>মক্কার কাফিররা বিস্মিত হয়ে বলছিল যে ‘আশ্চর্য! মুহাম্মদ সকল ঈশ্বরকে টানিয়া আনিয়া একমাত্র ঈশ্বরে পরিণত করিল, আমাদের এতগুলি ঈশ্বর, তাহাদের দ্বারাই আমাদের কার্য সুশৃঙ্খলভাবে চলিতেছে না, মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা কেমন করিয়া তা হইতে পারে? [গিরিশচন্দ্র সেনের তাফসির, সুরা সাফফাত, আয়াত ৪, কোরআন শরিফ, ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য ভবন সংস্করণ, ২০১৪, পৃষ্ঠা ৪২৮]।</p> <p><strong>কাফিরদের উদ্ভট দাবি</strong></p> <p>কাফির ও মুশরিকরা মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে লাগল—১. তোমার কথায় বিশ্বাস করব, যদি তুমি মক্কায় একটি ঝরনাধারা প্রবাহিত করে দিতে পার। ২. খেজুর আর আঙুরের বাগানের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত করে দেখাও। ৩. ভগ্ন আকাশের টুকরা আমাদের ওপর নিক্ষেপ করো। ৪. আল্লাহ ও ফেরেশতাদের আমাদের সম্মুখে এনে দাঁড় করাও। ৫. আল্লাহকে বলো, তোমার জন্য একটি স্বর্ণ নির্মিত ঘর করে দিক। ৬. তুমি আকাশে আরোহণ করে আমাদের সামনে আসো।</p> <p>ইহুদি পণ্ডিতরা সাধারণ মানুষকে শিখিয়ে দিল, মুহাম্মদকে জিজ্ঞেস করো—</p> <p>১. আসহাবে কাহফ কারা?</p> <p>২. জুলকারনাইন কে?</p> <p>৩. রুহের স্বরূপ কী?</p> <p><strong>মুহাম্মদ (সা.)-এর বাগ্মিতা</strong></p> <p>উত্তরে মুহাম্মদ (সা.) বললেন, আমি একজন মানুষ। রাসুলের অধিক কিছুই নই।</p> <p>ইহুদিদের প্রশ্নগুলোরও উম্মি (নিরক্ষর) নবী উত্তর দিলেন। আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে প্রাচীন অনেক জাতির উত্থান, পতন ও ধ্বংসের ইতিহাস তিনি বর্ণনা করে শোনালেন। নবী (সা.) নিরক্ষর ছিলেন, এটা আরবের সবাই জানত, ফলে যখন তিনি বিলুপ্ত বিভিন্ন জাতির নামধামসহ ঘটনাগুলো বলে দিলেন, তখন হৃদয়বান অনেকেই বিস্মিত হয়ে পড়ল। অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করল। অনেকে দাম্ভিকতায় পুরনো বিশ্বাস নিয়ে আঁকড়ে থাকতে চাইল।</p> <p>মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার ওহি কাফিরদের আবৃত্তি করে শোনালেন। বললেন, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের তোমরা উপাসনা করো, তারা সবাই মিলে একটি তুচ্ছ মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। এই তুচ্ছ মাছি তোমাদের কিছু নিয়ে গেলে তোমাদের দেবতাদের তা উদ্ধার করে দেওয়ারও ক্ষমতা নেই। [সুরা হজ, আয়াত ৭৩]।</p> <p>পরবর্তী সময়ে এ কথাগুলো সুরা হজে অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যত্র এসেছে, ‘এসব দেবতা তো (লাত, উজজা, মানাত ইত্যাদি) কেবল কতগুলো কল্পিত নাম, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে নামে তাদের নামকরণ করেছে।’ [সুরা নজ্ম, আয়াত ২৩]।</p> <p>পরবর্তী সময়ে এই ওহিটুকু সুরা নজেম অন্তর্ভুক্ত হয়।</p> <p>দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কাফিররা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসে প্রস্তাব দিল, এক বছর আমরা তোমার আল্লাহর ইবাদত করব, পরের বছর তুমি আমাদের দেবতাদের অর্চনা করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র কোরআনের ওহি নাজিল হলো। মুহাম্মদ (সা.) কাফিরদের আবৃত্তি করে শুনিয়ে দিলেন আল্লাহর কথা : (হে মুহাম্মদ, আপনি) বলেন, হে কাফিররা, আমি তার ইবাদত করি না, যার উপাসনা তোমরা করো। আর তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। আর আমি (কখনোই) তার ইবাদতকারী হব না, যার উপাসনা তোমরা করে আসছ। আর তোমরা ইবাদতকারী হবে না, যার ইবাদত আমি করছি। তোমাদের বিশ্বাস তোমাদের, আমার ধর্ম আমার।</p> <p>ওহিটি পরে সুরা কাফিরুন নামে পরিচিত হয় [আয়াত ১-৬]।</p> <p>কাফিররা মুহাম্মদ (সা.)-এর এই আপসহীন মনোভাবে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে চরম হতাশা জেগে ওঠে। অনেকে দলে দলে ইসলামের পতাকাতলেও শামিল হতে থাকে।</p> <p>৬১৬ খ্রিস্টাব্দ : নবী (সা.)-এর দাওয়াত পেয়ে যাঁরা মুসলিম হয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আরব পৌত্তলিকদের জুলুম মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, এর পরই মুসলিমদের প্রথম হিজরত শুরু হয়। মোট ৮৩ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারীর এক জামাত হিজরত করে আবিসিনিয়া-হাবশায় হাজির হলেন। বাদশাহ নাজ্জাশি তখনো ইসলাম গ্রহণ না করলেও হিজরতকারীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন।</p> <p> </p> <p>লেখক : সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর</p>