<p>বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবল লিডারশিপ আয়োজিত ‘ইউনিলিভার তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০১৮’ পেলেন লাইট অব হোপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া। লাইট অব হোপ তাদের নিজস্ব গবেষণালব্ধ পণ্য ‘স্পুটনিক’-এর জন্য এই পুরস্কার পায়। সারা বিশ্বে ২১২০ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে পুরস্কার পাওয়া আটটি উদ্যোগের একটি ‘স্পুটনিক’।</p> <p>ইউনিলিভার পরিবেশ এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানের পেছনে কাজ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার চালু করে। এবারই প্রথম বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এই পুরস্কার পেল।</p> <p>জানা গেছে, ২০১৮ সালে সারা বিশ্ব থেকে রেকর্ডসংখ্যক আবেদন পায় ইউনিলিভার। সর্বমোট ২১২০ আবেদনের মধ্য থেকে আটজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই আট বিজয়ী প্রত্যেকে আগামী অক্টোবরের ২৫ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কেমব্রিজে বিশেষ অ্যাকসেলারেটর প্রগ্রামে অংশ নেবে।</p> <p>লাইট অব হোপের কর্মকর্তারা জানান, স্পুটনিকের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া সম্ভব। এতে থাকছে একটি মিনি রিচার্জেবল প্রজেক্টর, ইন্টেল কম্পিউটিং স্টিক, ইন্টারনেট মডেম এবং ব্লু-টুথ লাউড স্পিকার। যার সব কিছুই চলবে পোর্টেবল সোলার প্যানেলের সাহায্যে। এ ছাড়া রয়েছে স্পুটনিকের বিশেষ পাওয়ার হাব, যার মাধ্যমে এই সব কিছু কানেক্টেড থাকবে এবং তিন ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো বাহ্যিক বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে পুরো সিস্টেমটি। এর সব কিছু বহন করা যাবে কাঁধে, স্পুটনিক ব্যাকপ্যাকের সাহায্যে। স্পুটনিকের নিজস্ব ডিজাইনের প্রজেক্টর স্ক্রিন খুবই হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেখানেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অথবা ট্রেইনিং সেশন নেওয়া যাবে এই সিস্টেমটির মাধ্যমে।</p> <p>ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ডিজিটাল স্কুলের মাধ্যমে, যেখানে স্কুলে সোলার প্যানেল, ল্যাপটপ ও মিনি প্রজেক্টরের মাধ্যমে মাত্র ৬০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া যেত। এরপর আমরা এই প্রযুক্তিটিকে আরো উন্নত করার কাজ শুরু করি। প্রথমেই মাথায় আসে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা বা প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে স্থায়ী স্থাপনা থাকার সম্ভাবনা কম, সেখানে আমরা চেষ্টা করতে থাকি পুরো সিস্টেমটা একটা ব্যাগে নিয়ে যাওয়ার।’</p> <p>বর্তমানে সিসিমপুর বাংলাদেশ, সেইভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, জাগো ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্পুটনিক ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে। লাইট অব হোপের প্রধান প্রকৌশলী তাইজুল ইসলাম অনিক এই প্রডাক্টটি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বাইরেও অস্ট্রেলিয়াতেও ব্যবহৃত হচ্ছে স্পুটনিক। ওয়াই গ্যাপ নামের মেলবোর্নভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাইট অব হোপের কাছ থেকে দুটি স্পুটনিক সংগ্রহ করেছে।</p> <p>কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত এই পুরস্কারে আর্থিক সহায়তা ছাড়াও থাকবে মেনটরিং এবং ভবিষ্যতে এই কাজকে বিশ্বে জনপ্রিয় করার সুযোগ।</p> <p>স্পুটনিকের পাশাপাশি লাইট অব হোপের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে আছে বাচ্চাদের আফটার স্কুল প্রগ্রাম-কিডস টাইম, টিচার ট্রেইনিং পোর্টাল-টিচারস টাইম বিডি, প্রাইমারি স্কুলে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করার প্রকল্প ‘পড়ুয়া’। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে আছে পোর্টেবল সায়েন্সল্যাব। তাদের আছে বিশাল এক ইউটিউব চ্যানেল যেখানে বাচ্চাদের জন্য মজার মজার সব শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা যাবে। বাংলাদেশের লাইট অব হোপের পাশাপাশি অন্যান্য বিজয়ীরা হলো প্লাস্টিকস ফর চেঞ্জ, লেটারস টু স্ট্রেঞ্জারস, ইকো স্যোপ ব্যাংক, হেলথ সেট গো, মাদারস ডেলিভারি কিট, গার্ভ টয়লেট এবং ইমপ্যাক্ট ভিশন।</p>