<p>দেশে শেষ কবে হরতাল হয়েছে, তা অনেকে ভুলে গেছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির হরতাল-অবরোধের পর গত তিন বছর রাজনৈতিক পরিবেশ মোটামুটি শান্ত রয়েছে। তবে হরতালে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, দেশের গবেষণা সংস্থা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আলাদা গবেষণা করে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন। এক দিনের হরতালে পোশাক ব্যবসায়ীদের পরিবহন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা নিয়ে এই প্রথমবারের মতো একটি গবেষণা করেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। তাতে সংস্থাটি দেখিয়েছে, সাধারণ সময়ে পোশাক খাতের একজন ব্যবসায়ীর পরিবহন খাতে যেখানে ১০০ টাকা খরচ হতো, এক দিনের হরতালে ওই ব্যবসায়ীকে গুনতে হয় ১৬৯ টাকা। অর্থাৎ হরতালে পরিবহন ব্যয় বাড়ে ৬৯ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই হরতাল না হলে একজন ব্যবসায়ীকে ওই বাড়তি টাকা গুনতে হতো না। বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল সেকেন্ডারি ডাটা অর্থাৎ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। তাঁর সহযোগী ছিলেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ এন আহসান। আজ রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার কথা রয়েছে।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2016/print-2016/December/08-12-2016/kalerkantho-08-12-16-NS-07.jpg" style="float:left; height:559px; margin:8px; width:400px" />জানতে চাইলে বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতালে পোশাক রপ্তানির সময় কী ধরনের প্রভাব পড়ে, সেটি নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গবেষণা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, বিক্ষিপ্তভাবে এক দিন বা দুই দিন হরতাল হলে পোশাক পাঠানো বা পরিবহনের পরিমাণ কমে যায়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক পোশাক খাতের ওপর। তবে একটানা এক সপ্তাহ বা তারও বেশি হরতালের ঘোষণা এলে ব্যবসায়ীরা তা সমন্বয় করে ফেলতে পারে।’ কাজী ইকবাল আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বেশির ভাগেরই ব্যবসার আকার অনেক বড় হয়ে গেছে। অভিজ্ঞও হয়ে গেছে। ফলে এ ধরনের হরতাল-অবরোধের ডাক এলে তারা বিকল্প উপায় বের করে নেয়। তা ছাড়া পোশাক খাত একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে।’ এতে হরতালের সময় সাময়িক কিছু ক্ষতি হলেও পরে ব্যবসায়ীরা তা সমন্বয় করে নেয় বলে জানান কাজী ইকবাল।</p> <p>গবেষণা প্রতিবেদনে বিআইডিএস বলেছে, সার্বিকভাবে বলতে গেলে হরতালে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ পোশাক রপ্তানি কমে না। রপ্তানিকারকরা হরতাল-পরবর্তী সময়ে সেটি সমন্বয় করে নেয়। তবে পরিবহন ব্যয় বাড়ে। বিআইডিএস বলছে, উদ্বেগের বিষয় হলো, হরতালের সময় অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের অর্ডার বাতিল করে দেয়। আবার অনেক সময় ব্যবসায়ীরা আকাশপথেও পোশাক রপ্তানি করে থাকে।  এতে প্রাথমিকভাবে পরিবহন খরচ বাড়লেও সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।</p> <p>১০ বছরে শ্রমশক্তির আকার বাড়বে ৭৮ শতাংশ : এদিকে শ্রমশক্তি নিয়ে বিআইডিএসের করা আলাদা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ১০ বছরে দেশে শ্রমশক্তির আকার বাড়বে ৭৮ শতাংশ। বিআইডিএস বলছে, দেশে এখন শ্রমশক্তির সংখ্যা (১৫ বছরের ঊর্ধ্বে) ছয় কোটি ৪৮ লাখ। ২০২৫ সাল নাগাদ এটি আট কোটি ২৯ লাখে উন্নীত হবে। বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম ‘শ্রমবাজার ও দক্ষতার ঘাটতি’ শিরোনামে গবেষণাটি করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>গবেষণায় দেখানো হয়েছে, দেশে আগামী ১০ বছরে শ্রমশক্তির আকার বাড়লেও সেই হারে তাদের দক্ষ করে তোলা যাচ্ছে না। ফলে দেশে ও দেশের বাইরে তারা ভালো চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিআইডিএস বলছে, আইটিতে যথেষ্ট দক্ষ জনবলের অভাব আছে। এ ছাড়া জাহাজ ভাঙা, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, নির্মাণশিল্পেও দক্ষ শ্রমিকের অভাব আছে। এসব খাতে প্রশিক্ষণ বাড়াতে সরকারের প্রতি পরামর্শ জানানো হয়েছে।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে জাতীয় অগ্রগতিতে সেই প্রকল্প কী ধরনের অবদান রাখবে, সেসব বিষয়ে গবেষণালব্ধ ধারণা থাকা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে বিআইডিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের অভিপ্রায় হচ্ছে বিআইডিএসকে আমাদের অর্থনীতির জন্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।</p> <p>পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সাল হবে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ এবং আমাদের অর্থনীতি হবে জ্ঞানভিত্তিক।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের জন্য আতঙ্কজনক নয়। উন্নত বিশ্বে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার চলমান গতি অব্যাহত থাকলে ২০৪০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২০তম সমৃদ্ধিশালী অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ।’ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।</p> <p>বিভিন্ন খাতের ১১টি বিষয়ে গবেষণা করেছে বিআইডিএস। দুই দিনের অনুষ্ঠানে এসব গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা রয়েছে। আজ অনুষ্ঠানের শেষ দিন।</p>