<p>ছয়জন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও দুটি ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছে বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মানবকল্যাণমুখী সংগঠন সিটি ফাউন্ডেশন। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন মেহেরপুরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোছা. ইসরাত জাহান ও ফরিদপুরের রিনা বেগম, চাঁদপুরের কৃষক মো. সোহেল মিয়াজী ও নাটোরের মো. সেলিম রেজা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের নারী উদ্যোক্তা মোছা. অফিনা বেগম ও ঢাকার হাসিনা ইসলাম। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)।</p> <p>গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয়ী উদ্যোক্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সিটি ফাউন্ডেশন ১১তম সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কারে সহ-আয়োজক ছিল সাজেদা ফাউন্ডেশন, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ), এন এ  বাংলাদেশ। প্রতিবছর সারা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে তাঁদের কাজের অনুপ্রেরণা জোগাতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।</p> <p>মোছা. ইসরাত জাহান ২০১৫ সালে বছরের শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। তিনি মাছ চাষ ও মাছের খাদ্য উত্পাদন করেন। সিটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, পড়ালেখা শেষ করে ইসরাত জাহানের স্বামী আরিফুর রহমান ২০০২ সালে নিজস্ব পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ইসরাত জাহান ওই প্রকল্পে যুক্ত হন। মাছের চাষ করতে গিয়ে তাঁরা দেখলেন মাছের খাদ্যের প্রায় সংকট থাকে এবং মানও খুব একটা ভালো নয়। তাই ২০০৪ সালে ফাতিহা ফিশ ফিড অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের খাদ্য উত্পাদন শুরু করেন। খাদ্য উত্পাদনে প্রথমে তাঁরা শ্যালো মেশিন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। অবস্থার পরিবর্তন হলে ২০০৮ সালে তাঁরা মত্স্য খাদ্য উত্পাদনে বৈদ্যুতিক ও স্বয়ংক্রিয় উত্পাদনব্যবস্থা সংযুক্ত করেন। এ খামারে এখন দৈনিক ১২ টনের মতো মত্স্য খাদ্য উত্পাদন হয়। স্থায়ী ও খণ্ডকালীন মিলে এখানে ৪০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া ইসরাত জাহান ও আরিফুর রহমান দম্পতি ১৫টি পুকুরে মাছের চাষ করেন। সিটি ফাউন্ডেশন ইসরাত জাহানকে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছে।</p> <p>শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগের রানার-আপ হাসিনা ইসলামের উদ্যোগের নাম স্কাইনীড়। যা নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে এনেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। বনানীতে রয়েছে তাঁর একটি শোরুম। সুদীর্ঘ চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা পুরস্কার।</p> <p>অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বছরের শ্রেষ্ঠ কৃষি উদ্যোক্তার সম্মাননা পাওয়া মো. সোহেল মিয়াজী উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। মিয়াজী খুব বেশি পড়ালেখা করেননি। ২০০৮ সালে দুটি জাল-খাঁচা নিয়ে শুরু করেন উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ। কঠোর পরিশ্রম করে লাভের পাশপাশি খাঁচার পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তাঁর খাঁচার সংখ্যা ৪২টি। মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার কেজি মাছ উত্পাদিত হয়। বছরে বিক্রি করেন প্রায় ২৭ লাখ টাকার মাছ। সিটি ফাউন্ডেশন তাঁকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছে।</p> <p>বছরের শ্রেষ্ঠ কৃষি উদ্যোক্তা (রানার-আপ) মো. সেলিম রেজা দেশে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন ফল, সবজি ইত্যাদি উত্পাদন করে থাকেন এবং স্থানীয় অনেক কৃষকই তাঁকে অনুসরণ করছেন। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা পুরস্কার।</p> <p>শ্রেষ্ঠ নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোছা. অফিনা বেগম জৈব সার উত্পাদন করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। স্বামীর পক্ষে সংসারের ভার বহন করা সম্ভব না হওয়ায় নিজেই বাড়িতে জৈবসার তৈরি করা শুরু করেন। তিনি পেয়েছেন তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (রানার-আপ) রিনা বেগম বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ উত্পাদন ও সফলভাবে বাজারজাত করে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নজির স্থাপন করেছেন। তিনি নিজের উন্নতির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নিম্ন আয়ের নারীর কর্মসংস্থান করতে পেরেছেন। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা পুরস্কার।</p> <p>শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে উপকূলীয় জনপদ, বিশেষত দরিদ্র মত্স্যজীবীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অতি নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বর্তমানে ১১টি জেলায় ঋণ দিচ্ছে, ঋণের স্থিতি ১২৩ কোটি টাকা। সংস্থাটি পেয়েছে চার লাখ টাকা পুরস্কার। </p> <p>ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) দুই দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম জনপদে কাজ করে আসছে। দরিদ্র ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে আর্থিক পরিষেবার আওতায় আনতে আইডিএফ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি পেয়েছে তিন লাখ টাকা পুরস্কার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আরলিংকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান, বাংলাদেশে সিটির ভারপ্রাপ্ত আবাসিক কর্মকর্তা ও পরিচালক মো. মইনুল হক, সাজেদা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাহিদা ফিজা কবির, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল আওয়াল প্রমুখ।</p>