ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ব্যবসায় মন্দা, রাজস্বে ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ব্যবসায় মন্দা, রাজস্বে ঘাটতি

ব্যবসা-বিনিয়োগে আস্থাহীনতা। উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে ধীরগতি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ। ব্যবসা প্রসার ও নতুন বিনিয়োগ নিয়ে নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষা।

সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চাহিদা কমায় এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

পরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বছরে ৩৬৫ দিনের প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। তবে প্রথম ৯ মাসে আদায়ের ক্ষেত্রে বিরাট রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেওয়ায় তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা আদায়ের কাছাকাছি যাওয়াকেও খুবই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দিনপ্রতি আরো এক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে।

আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, বড় ব্যবসায়ীরা অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য রেখে পালিয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটা তো স্বাভাবিক।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, ৯ মাসে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। যদিও এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় ৯ মাসে মোট তিন লাখ ২২ হাজার ১৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল।

অর্থাৎ এখন বাকি তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় করতে হবে দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের দৈনিক গড় আদায়ের চেয়ে এক হাজার কোটি টাকা বেশি।

লক্ষ্য পূরণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর ফাঁকি রোধ, নন-কমপ্লায়েন্ট করদাতাদের নোটিশ দিয়ে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় মোটামুটি প্রবৃদ্ধি আছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং।

আলোচ্য এ সময়ে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়করএই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তিন খাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে।

আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এ খাতে ঘাটতি ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার মতো। আয়কর খাতে ঘাটতির পেছনে মূল কারণ এই সময়ে আয়ের সুযোগই তৈরি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত থাকায় এই খাতে তার প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া আমদানি কমে যাওয়ায় অগ্রিম আয়কর আদায়ও কমেছে। রাজস্ব আদায়ে বড় অবদান রাখে ভ্যাট খাত। আমদানি, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন, সরবরাহ, জোগানদার পর্যায় পর্যন্ত এই খাতের বিস্তৃতি। এর সর্বশেষ ধাপ ক্রেতা বা ভোক্তা। আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে এই খাত বড় ধাক্কা খেয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর আবগারি শুল্ক আদায় করে এনবিআর। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ কমায় আবগারি শুল্কেও পড়েছে এর প্রভাব। ভোগ কমে যাওয়ায় কমেছে উৎপাদনও। শিল্প কাঁচামাল ও পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক আদায়ে ঘাটতি দেখা গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমদানি সহজে বাড়বে না। কিছু ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায়ও এই খাতে আদায় কমেছে। যদিও এতে দেশের মানুষ উপকৃত হয়েছে।

জুলাই মাসের শুরু থেকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়। তখন প্রায় সব কিছু বন্ধ ছিল বললেই চলে। সাধারণ ছুটির পাশাপাশি কারফিউও ছিল বেশ কয়েক দিন। এসবের প্রভাব পড়েছে শুল্ক-কর আদায়ে। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকার পরিবর্তনের পরও আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ত্রুটি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেশ কিছু খাতে নতুন করে করছাড়, আমদানি কমে যাওয়াই রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ। তবে এই সমস্যা মূলত কাঠামোগত। কর ফাঁকি রোধে বেশি উন্নতি হয়নি। পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে ভিন্নভাবে এনে ক্যাডারভিত্তিক করায় একটা দোটানা তৈরি হয়েছে। সংস্কারপ্রক্রিয়াও ধাক্কা খেয়েছে। এখন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন মাথায় রেখে পর্যায়ক্রমে করছাড় কমিয়ে আনা, দুর্নীতি রোধ করা, সম্পত্তিসহ যেসব জায়গা থেকে কর আদায় হয় না সেখান থেকে আদায় করা এবং বিভিন্ন ডেটাবেইস একসঙ্গে করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীরা দ্রুত একটা রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থা চায়। অন্তর্বর্তী সরকার কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়। তাদের পক্ষে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের আস্থা আছে রাজনৈতিক সরকারের প্রতি। রাজনৈতিক সরকারের একটা স্থায়ীত্ব আছে। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক সরকার চায়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সমাবেশ আজ

১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের জাতীয় সমাবেশ। এবারই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নানামুখী প্রস্তুতি।

সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়।

তবে সকাল ১০টা থেকেই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার বাস, বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চে আসবেন নেতাকর্মীরা। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম আশা করছে দলটি।

এ জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেন রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করবে, রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এর অনুমোদন দিয়েছে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতরাও থাকবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

সমাবেশের মূল লক্ষ্য ৭ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন ও আদায়ের অঙ্গীকার।

এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারকে ভোটাধিকার প্রদান।

জাতীয় সমাবেশ সফল করতে কাজ করছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং অধীন আটটি উপকমিটি। দেশের সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ভ্রাম্যমাণ মাইক এবং সাংস্কৃতিক দল নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গান, নাটিকা আর স্লোগানে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নগর থেকে গ্রামান্তরে।

সমাবেশস্থলে থাকবে কড়া নিরাপত্তা।

২০টি নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে থাকবেন, যাঁদের জন্য থাকছে আলাদা ইউনিফর্ম। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষের গাড়ি রাখার জন্য ১৫টি আলাদা পার্কিং জোন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

অতিথিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা।

বৃহৎ জনসমাগমের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও ক্যামেরা, যা প্রদর্শিত হবে এলইডি স্ক্রিনে এবং একযোগে প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবেও।

এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন লাখো মানুষ। তিনি নগরবাসীর কাছে সম্ভাব্য যানজট ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। দলটি সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামীর সংলাপে আবার যথারীতি তাদের আগের এ অবস্থানই তারা তুলে ধরবে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে, সেটার বিরোধিতা করবে না দলটি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করবে।

অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করবে; মানে দলীয় অঙ্গীকার থেকে সরে যাবে না বিএনপি।

সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলোযাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম।

সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল।

পরদিন মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে।

অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ ২১টি দল ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে। কয়েকটি দল এমনও প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষেরই দরকার নেই।

দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কিভাবে নির্বাচিত হবেনএ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজে বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও একমত হতে পারেনি দলগুলো।

কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেএমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে।

জামায়াত জানায়, পিআর (ভোটের অনুপাতে) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০% মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকারযে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আগামীতে আরো আলোচনা হবে।

মন্তব্য
সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো দাবি করেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন ও জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি চক্রান্ত চলছে, গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই অংশ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক আইজিপি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জের মতো এত বড় ঘটনা ঘটত না।

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি আরো বলেন, পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে এবং যথাযথভাবে কাজ করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সোহাগ হত্যা প্রসঙ্গে আশরাফুল হুদা বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দুই দিন পর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়, এটা দুঃখজনক।

এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, বলেন তিনি।

মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব সময় ভুক্তভোগীরাই মব ভায়োলেন্স করে না, অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও এটি সংঘটিত হয়। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণএ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিক দল।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটা যেন মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। সমাজের ক্যান্সার হিসেবে এই সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক আরো বাড়বে।

মন্তব্য
মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ট্রাম্প

অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

অন্য দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসগুলোতে তারবার্তা পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, এই নিয়ে কোনো দেশের মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যেন মন্তব্য না করেন। গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে এই তারবার্তা।

এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাস কিংবা ওয়াশিংটন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে না।

নির্বাচনে বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানানো এবং যথাযথ সময়ে বিজয়ী পক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা শুরুর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, বৈধ হয়েছে কি হয়নি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে কি পারেনিএসব নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকরা আগ বাড়িয়ে মন্তব্য তো করবেনই না, এমনকি কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

তারবার্তায় বলা হয়, অবশ্য কোনো দেশের নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে এই নির্দেশনার ব্যতিক্রম ঘটবে; তবু সে ক্ষেত্রে ওই দেশের মার্কিন দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত বা কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকরা কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মুখপাত্ররা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং তা উদযাপনও করছে। অন্যান্য দেশও একই পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, সেই দেশের সঙ্গে তিনি মার্কিন অংশীদারি বিস্তারের পক্ষে। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ