<p>প্রায় ৩০ বছর অচল থাকার পর সচল হতে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)। উচ্চ আদালতের আদেশের পর নির্বাচন আয়োজনের পথে এগিয়েছে প্রশাসন। সক্রিয় ছাত্রসংগঠন এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদেরনিয়ে গঠিত পরিবেশ সংসদের সঙ্গে  কয়েক দফা আলোচনার পর আগামী ১১ মার্চ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> <p>দীর্ঘদিন পর হলেও নির্বাচনের আয়োজনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক নেতারা। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর হলেও এ নির্বাচন আয়োজন ভালো উদ্যোগ। তবে সবার জন্যই সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ডাকসুর সজীবতা ও উজ্জীবতা ফিরিতে আনতে হবে। স্বাধীন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।</p> <p>প্রশাসন সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলগুলোর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১১ মার্চ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নির্বাচনের এই তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে উপাচার্য অফিসসংলগ্ন লাউঞ্জে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও ডাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে পৃথক সভা শেষে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।</p> <p>সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের ৬ জুন সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবীর খোকন। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ক্যাম্পাসে সহাবস্থানসহ অন্যান্য দাবিতে ওই সময়ে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকবার নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি প্রশাসন।</p> <p>প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে তৎকালীন উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে ছাত্রদল অংশ নেওয়ার সম্মতি দেয়। কিন্তু ছাত্রলীগ নির্বাচনের পরিবেশ নেই অভিযোগ করলে তা স্থগিত করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী অন্তত ছয়বার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ছাত্রলীগ-ছাত্রদল দুই পক্ষই বিরোধী অবস্থান নেয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন, কিন্তু ছাত্রলীগ বিরোধিতা করলে নির্বাচন আর হয়নি।</p> <p>সূত্র জানায়, নব্বই-পরবর্তী সময়ে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখে। বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ছাত্রদল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকলেও প্রায়ই তারা মারধরের শিকার হয়। তাদের কক্ষ দখলেরও ঘটনা রয়েছে।</p> <p>দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন না হওয়ায় ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদসহ সব হল সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। এতে যোগ দিয়েছিল সব বাম সংগঠন। ওই সময় আন্দোলন গতিশীল হলেও নির্বাচন আয়োজনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ওই আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ২৫ জন শিক্ষার্থী উচ্চ আদালতে রিট করেন। দীর্ঘদিন সেই রিট ঝুলে থাকার পর গত বছরের জানুয়ারিতে আদালত ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আইন-শৃঙ্খালা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।’ ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ৩০ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়াকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে রুলও জারি করা হয়। আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষাসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।</p> <p>কিন্তু রুলের জবাব না দেওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। সেই মামলার পর নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময় চেয়ে নেয়।</p> <p>ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুসতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজন ও তারিখ ঘোষণায় প্রশাসনকে স্বাগত জানাই। দীর্ঘ সাড়ে ২৮ বছর পর এই নির্বাচন সফল ও সুন্দর হোক। কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রসংগঠনগুলোকেও ধন্যবাদ জানাই। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন সফল হবে। সাবেক নেতৃবৃন্দের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা এগিয়ে আসব।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ছাত্রসংগঠনগুলোকে সহাবস্থান করতে দিতে হবে। সবাই যেন স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নিরপেক্ষ হতে হবে। কোনো সংগঠনের পক্ষ নেওয়া যাবে না। সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে ডাকসুতে প্রাণ ফিরে আসুক।’</p> <p>সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, “ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রসংগঠনের ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানাই। আমার আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই যেন নির্বাচনে সমান সুযোগ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি পায়। ‘কনসার্ন’ অথরিটিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মত প্রকাশের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসুর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সজীবতা ও উজ্জীবতা ফিরে আসবে।”</p> <p>ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। এখনো বেশ কিছু প্রস্তুতি রয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন করে তফসিল ঘোষণা করা হবে।’</p> <p> </p>
