<p>একটি ম্যাচই বদলে দিল দেশের ফুটবল! ভুটান ম্যাচে জয়, ভালো খেলা, দর্শক-সমর্থকের সুখানুভূতি মিলিয়ে ফুটবলকে ঘিরে এখন খুশির হাওয়া। ১০ বছর পর আবার সাফের সেমিতে ওঠার স্বপ্ন বুঝি এবার ধরা দেবে। এমন সুখের বাতাবরণের মধ্যে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তানের।</p> <p>পাকিস্তানকে আজ হারালেই সেই স্বপ্ন মুঠোবন্দি হবে বাংলাদেশের, সবশেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ২০০৯ সালে এই ঢাকাতেই। এরপর গত সাফের তিনটি আসর খুব বাজে কেটেছে ২০০৩ সাফের চ্যাম্পিয়নদের। ৯ ম্যাচে জয় ছিল মাত্র একটি, দুই বছর আগে কেরালায় ভুটানের বিপক্ষে জেতে মারুফুল হকের দল। বছর না ঘুরতেই আবার সেইন্টফিটের হাতে সর্বনাশ, এশিয়ান কাপের প্রাক-বাছাইয়ে থিম্পুতে হেরে ফুটবলের হয়েছিল যায় যায় অবস্থা। সেই থেকে ভুটান যেন মানদণ্ড হয়ে গেছে। তাদের কাছে হারলে শেষ, জিতলে বেঁচে থাকা। পরশু ভুটানকে হারিয়ে উঠে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। আজ পাকিস্তানকে হারালে দৌড়াবে, সেমিফাইনালের স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশের কোচ জেমি ডের চোখে ম্যাচটি কঠিন, ‘শারীরিকভাবে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে শক্তিশালী। তাদের আবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশিও আছে। ম্যাচটি তাই সহজ হবে না। কিন্তু আমরা জয়ের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চাই। সেটার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারফরম্যান্স করতে হবে।’ টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে চান জেমি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।</p> <p>পরশু প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুরু করেছে পাকিস্তান। পিছিয়ে ছিল বল দখল ও আক্রমণে। কিন্তু এগিয়ে রক্ষণে। নেপালিরা আক্রমণ করলেও পাকিস্তানের রক্ষণভাগে গিয়ে সুবিধা করতে পারেনি। দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দেওয়াটা সহজ ছিল না। তাই জিততে হলে পাকিস্তানের রক্ষণের ফাঁকফোকর বের করতে হবে সুফিল-বিপলুদের। জেমি ডে মনে করছেন ভুটান-জাত আত্মবিশ্বাসই এই দলকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে মাঠে, ‘শারীরিকভাবে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে শক্তিশালী, তার অর্থ এই নয় যে তারা আমাদের চেয়ে ভালো দল। ভুটানের এক জয়ে আমার খেলোয়াড়দের মনের জোরটা অনেক বেড়েছে। নিজেদের মাঠে যেকোনো কিছু করতে পারে তারা। তাদের সেই সামর্থ্য আছে।’ টুর্নামেন্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারে তাদের বিশ্বাস একটু ধাক্কা খেলেও ভুটানের ম্যাচ সেটা আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। লাল-সবুজের নব তারুণ্যের সামনে পড়ছে পাকিস্তান।</p> <p>তারুণ্যের উন্মেষ হয় জাকার্তায়, গত মাসের এশিয়ান গেমসে। সেই দলে মাত্র দুটি পরিবর্তন করেই কোচ সাজিয়েছেন সাফের দল। গোলরক্ষক আশরাফুল রানার জায়গায় শহীদুল আলম এবং লেফট ব্যাকে ফেরেন ওয়ালি ফয়সাল। দুই সংযোজনে জিতেছে প্রথম ম্যাচ। উইনিং কম্বিনেশন সাধারণত কেউ ভাঙতে চান না। কিন্তু জেমি সে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না, ‘এটা ভিন্ন ম্যাচ। নতুন ম্যাচ এবং তার প্রতিপক্ষ ঠিক করে দেয় আমরা কিভাবে খেলব। ভিন্ন কৌশলে ভিন্ন খেলোয়াড়ও খেলানো হতে পারে। তবে দলে পাঁচ-ছয়জন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, যারা জানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিভাবে খেলতে হয়।’ কোচের কথায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। মাঝমাঠে ইমন বাবুকে খেলানোর একটা গুঞ্জন আছে। শুরুর ম্যাচে মাঝমাঠের খেলাটা ঠিক হয়নি, ওখান থেকে বল যায়নি ফরোয়ার্ড লাইনে। ইমন বদলি হিসেবে নেমে দু-তিনটি ভালো বল বাড়িয়ে বুঝিয়ে দেন নিজের সামর্থ্য। সেই দেখেই নাকি কোচের মন জিতেছেন। একাদশে দু-একজন বদল হলেও বাংলাদেশের কোচ কিন্তু কৌশল বদলাবেন না। রক্ষণ আগলে কাউন্টারে খেলাই অব্যাহত থাকবে। ‘এই দলটা রক্ষণ সামলে খেলতে শিখেছে। তা ছাড়া আগে গোল হজম করলে ভীষণ চাপে পড়ে যাবে, সেই চাপ সামলে পেছন থেকে ম্যাচে ফেরা এবং জেতা কঠিন। কাউন্টার অ্যাটাকে খেলাটা তারা ভালো রপ্ত করেছে এশিয়ান গেমস থেকেই। নতুন কিছু করার সুযোগও তেমন নেই’—এশিয়ান গেমসে খেলার স্টাইল ধরে রেখে খেলাতে চান জেমি ডে।</p> <p>এশিয়ান গেমস থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের রংবদলের খেলা। পাকিস্তানেরও সে রকম। ফিফা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্তঃকলহে জর্জরিত তাদের ফুটবল, তিন বছর খেলার বাইরে ছিল সিনিয়র জাতীয় দল। যুব দল ফুটবলে ফেরার ঘোষণা দেয় জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ৪৪ বছর পর প্রথম ম্যাচ জিতে। ওখানে নেপালের বিপক্ষে জয়টা আসলে দুর্দশা ঝেড়ে পাকিস্তান ফুটবলের জেগে ওঠার বার্তা। সেই ধারায় ঢাকায় নেপালকে হারিয়ে তারা শুভ সূচনা করেছে সাফে। আজ বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তানকে আরেকটু এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের ব্রাজিলিয়ান কোচ আন্থোনিও জোসে নাগোইরো, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেই আমরা সেমিতে পৌঁছে যাব। কিন্তু স্বাগতিকদের সঙ্গে খেলা কঠিন। আমার খেলোয়াড়রা চেষ্টা করবে, কারণ পাকিস্তান ফুটবলের জন্য এই জয়টা খুব দরকার।’ উল্টোদিকেও খুব দরকার। ১০ বছরে স্বাগতিকদের সেমিফাইনালে ওঠার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের দায় এবং লাল-সবুজের নব তারুণ্যের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার টুর্নামেন্ট এটি।</p>