<p>সরকারের চলমান কঠোর অভিযানে শুক্রবার রাতে ১০ মাদক কারবারি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। র‌্যাব বা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং দুই-একটি ক্ষেত্রে মাদক কারবারিদের গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তারা নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে অভিযান শুরুর পর গত ২৩ দিনে সারা দেশে ৭৭ জন নিহত হলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :</p> <p><strong>দিনাজপুরে নিহত দুই</strong></p> <p>জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মো. সাবদারুল (৪৭) নামে একজন এবং সদর উপজেলায় মাদক কারবারিদের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে মো. আব্দুস সালাম (৩৬) নামে একজন নিহত হয়েছে। দুজনই চিহ্নিত মাদক কারবারি বলে জানানো হয়েছে। সাবদারুল পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নন্দাইগাঁও গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে এবং আব্দুস সালাম মহরমপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে।</p> <p>বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ-কবিরাজহাট সড়কের দক্ষিণ পাশে বাসুদেবপুর এলাকায় সাবদারুল এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায় আব্দুস সালাম নিহত হয়। র‌্যাব ১৩-এর দিনাজপুর ক্যাম্প কমান্ডার তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, বাসুদেবপুর এলাকায় মাদক কারবারিদের মধ্যে লেনদেন চলার খবর পেয়ে র‌্যাবের দল সেখানে গেলে মাদক কারবারিরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে নিহত হয় সাবদারুল। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০টি মামলা রয়েছে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, দুই পোঁটলা গাঁজা ও ৯৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।</p> <p>কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম জানান, রামসাগর এলাকায় গোলাগুলির শব্দ পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে গেলে পুলিশ গুলিবিদ্ধ একজনকে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সালামের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশকে মারধরসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দিনাজপুরে এ নিয়ে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলো।</p> <p><strong>কুমিল্লায় দুজন নিহত</strong></p> <p>জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৫) নামে দুই শীর্ষ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। উপজেলার বাগড়া-রামচন্দ্রপুর সড়কে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। বন্দুকযুদ্ধে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। নিহত বাবুল উপজেলার আশাবাড়ি গ্রামের আবদুল মালেকের পুত্র। নিহত আলমাস একই উপজেলার উত্তর তেতাভূমি গ্রামের আফাজউদ্দিনের পুত্র।</p> <p>ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি শাহজাহান কবীর বলেন, বাবুল ও আলমাস এই এলাকার চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক কারবারি। বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি এবং আলমাসের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।</p> <p>পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবারই বাবুল ও আলমাসকে গ্রেপ্তার করে রাত ২টার দিকে তাদের নিয়ে সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ। বাগড়া-রামচন্দ্রপুর সড়কে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। ঘটনাস্থল থেকে বাবুল ও আলমাসের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০ কেজি গাঁজাও উদ্ধার হয়।</p> <p><strong>চাঁদপুরের কচুয়ায় নিহত এক </strong></p> <p>চাঁদপুরের কচুয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি বাবলু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। উপজেলার পাড়াগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, একাধিক মামলার আসামি চিহ্নিত মাদক কারবারি বাবলুর বলরা গ্রামে থানা ও ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। তার কাছ থেকে বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে পাড়াগাঁও এলাকায় তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে বাবলু (৪০) গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় দুই পুলিশ উপপরিদর্শক মোবারক হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক আক্তার হোসেন আহত হয়েছেন। </p> <p>কচুয়া থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বাবলু কচুয়ার গোহাট দক্ষিণ ইউনিয়নের বলরা গ্রামের মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে পাঁচটি মামলা হয়েছে।</p> <p><strong>পাবনায় একজন নিহত</strong></p> <p>পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পাবনায় আব্দুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ (৪২) নামের এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুরে নিহত আবদুল্লাহ উপজেলার কবীরপুর গ্রামের মৃত আছের উদ্দিন শেখের ছেলে।</p> <p>পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর জানান, জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আবদুল্লাহর  বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ তাকে আটক করেছিল। রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশ তাকে নিয়ে শহরতলির মহেন্দ্রপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় ওত পেতে থাকা তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুল্লাহ আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শাটার গান, চার রাউন্ড থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি, ২০০ পিস ইয়াবা ও ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে।</p> <p><strong>জয়পুরহাটে একজন নিহত</strong></p> <p>জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ভীমপুরে একটি ইটভাটার পাশে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রেন্টু শেখ ওরফে রিন্টু মিয়া (২৯) নিহত হয়েছে। তার বাড়ি উত্তর গোপালপুর গ্রামে। র‌্যাব জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে মাদকের ৯টি মামলা আছে। সে জয়পুরহাট অঞ্চলের শীর্ষ মাদক কারবারি। গুলিবিনিময়ের পর র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শাটার গান, দুই রাউন্ড গুলি, ভারতীয় ১২২ বোতল ফেনসিডিল, নগদ টাকাসহ বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার করে।</p> <p><strong>ঈশ্বরগঞ্জে একজন নিহত</strong></p> <p>ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মো. শাহজাহান (৩০) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের তেলোয়ারি গ্রামের এক ফাঁকা রাস্তায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তি উপজেলার উত্তর বনগাঁও গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। মাদক ভাগাভাগির খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে গোলাগুলি হয়। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. বদরুল আলম খানসহ তিন পুলিশ আহত হয়। শাহজাহানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। শাহজাহানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে আটটি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইন, পাঁচটি গুলির খোসা, একটি রামদা ও একটি কিরিচ উদ্ধার করা হয়।</p> <p><strong>ঠাকুরগাঁওয়ে একজন নিহত  </strong></p> <p>ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৪) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোবারক হোসেন উপজেলার ছিট চিলারং গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে। জেলা পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, পুলিশ পশ্চিম বেগুনবাড়ী ইউনিয়নে অভিযান চালালে কুট্টিসহ কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। পাল্টাপাল্টি গুলিবর্ষণে কুট্টি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। কুট্টি শহরের একজন বড় মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে।</p> <p><strong>কুড়িগ্রামে নিহত ১ </strong></p> <p>ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্তে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইব্রাহিম হোসেন (৩৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সে ওই এলাকার নাওডোর উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত ইউসুফের পুত্র। পুলিশ এ সময় পাঁচ কেজি গাঁজা, দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। বন্দুকযুদ্ধে দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। </p> <p>ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের জন্য গেলে চোরাকারবারিরা আক্রমণ চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মাদক পাচার সিন্ডিকেটের প্রধান ইব্রাহীমের ডান পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা কুড়িগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় তার মৃত্যু ঘটে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল হক প্রামাণিক জানান, ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে।</p> <p><strong>বরগুনায় একজন নিহত</strong></p> <p>পুলিশ জানিয়েছে, বরগুনায় মাদক কারবারিদের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ছগির খান (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছে। সদর উপজেলার ৪ নম্বর কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড গুলি এবং ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। নিহত ছগির খান উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে।</p> <p>বরগুনা থানার ওসি এস এম মাসুদুজ্জামান জানান, রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের টহলদল গুলির শব্দ শুনে জাকিরতবক এলাকায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ছগিরের মৃতদেহ পায়। ঘটনাস্থলে একটি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ১০০ পিস ইয়াবা এবং কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তিনি  জানান, ধারণা করা হচ্ছে, মাদক কারবারি মনির গ্রুপের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হয়েছে।</p> <p> </p>