<p>চট্টগ্রামে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তবে নির্বাচনী বছরে কেন্দ্রের নির্দেশনায় সম্প্রতি ওই নেতারা নানা কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে যখন ‘ঐক্যের’ সুবাতাস, তখন দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতারা চিন্তিত। নেতাদের অভিমত, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাগাম টানা না গেলে আগামী নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।</p> <p>নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা জানান, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে এখানে এখন তাদের সামাল দেওয়ার মতোও কেউ নেই। গত ১০ দিনে চট্টগ্রাম নগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটলেও কেউ কিছু বলছে না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারাও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্রসংগঠনের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গত বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট মিছিল বের করলে ক্যাম্পাসে তাদের ওপর হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ। এতে অন্তত আটজন আহত হয়। এরপর ছাত্রজোটের দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের প্রচারপত্র বিলির সময় গত রবিবার দুপুরে নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্রজোটের নেতাদের ওপর আবার হামলা হয়। পরদিন সোমবার প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আহূত ধর্মঘট চলাকালে আবারও নগরের নিউ মার্কেট, দোস্ত বিল্ডিং, মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি স্থানে ধর্মঘট পালনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়। এর পরদিন মঙ্গলবারও নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে ছাত্রজোটের সমাবেশে হামলা হয়।</p> <p>এদিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ছাত্রলীগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছে। কয়েক দফা ধাওয়াধাওয়ি হয়েছে। আরেক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহসীন কলেজেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় নগরের এ দুই বড় সরকারি কলেজে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন ছাত্রলীগ নেতারাই।</p> <p>আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, দরপত্র, চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগে আরো সংঘাত হতে পারে। সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে এসে তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। এ কারণে সাংগঠনিক সভা-সমাবেশ কমে গেছে। এর মধ্যেও যেসব কর্মসূচি হয় সেখানেও বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকছে।</p> <p>হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বুধবার বলেন, ‘নগরে চলতি সপ্তাহে তিন দিন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সঙ্গে আমাদের কর্মীদের যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে তার জন্য ছাত্রলীগ দায়ী নয়। ধর্মঘট পালনের নামে প্রগতিশীল ছাত্রজোট পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করতে নেমেছিল। তাদের নেতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে মিছিল-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমাদের ছেলেরা তা শুনে প্রতিবাদ করেছিল।’</p> <p>নুরুল আজিম আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সব সময় একটা অপপ্রচার থাকে। আমরা ভালো কাজ করলেও সমালোচকরা বলে থাকেন, তারা কেন ভালো কাজ করবে! আমাদের ছেলেরা অন্যায় কিছু করে থাকলে অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি—এমন নজির আছে। তবে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা করতে চাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি।’</p> <p>চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দলকে আরো শক্তিশালী করতে নানাভাবে সাংগঠনিক কাজ করছি। সবাই কেন্দ্রের নির্দেশনায় দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। হঠাৎ করে ছাত্রলীগে কেন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে তা খুঁজে বের করলে দেখা যাবে যারা কখনো ছাত্রলীগ করেনি তারা ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে ঢুকে গেছে। আমার মনে হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরাই বিশৃঙ্খলা করছে।’ তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল সব সময় চেষ্টা করে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সংগঠনের নেতারা দেখবেন।</p> <p>চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যখন তিন যুগ পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দুই বছর আগে চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসীন কলেজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিই, তখন সেখানে ছাত্রলীগেরও অনেকে যায়নি। এখন দুই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বহিরাগতদের এনে ছাত্রলীগের নামধারী কোনো নেতা বিশৃঙ্খা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। বিষয়টি আমরা নেতাদের অবহিত করেছি। এর পরও তারা থামেনি। যেকোনো সময় এখানে সংঘাত হতে পারে।’</p> <p>উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ অক্টোবর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। আগের বছর ২৯ মার্চ নগরের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে খুন হন ছাত্রলীগের নগর কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নাছিম আহমেদ সোহেল। গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের মধ্যে গত চার বছরে বেশ কয়েকবার সংঘাত হয়েছে।</p>