জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগ, হাদিসের ভুল ব্যাখ্যাসহ নানা অভিযোগে ২০১৫ সালে মাদরাসা বোর্ডের বেশ কিছু পাঠ্য বই সংশোধনের কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েরও নির্দেশনা ছিল এ ব্যাপারে। কিন্তু তিন বছরেও তা হয়নি। অসংগতিতে ভরা এসব বই ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্যও ছাপা শেষ হয়েছে।
২৪ লাখ বই বাতিল গচ্চা ১০ কোটি টাকা
শরীফুল আলম সুমন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদরাসার কিছু বইয়ের ব্যাপারে অবজারভেশন এসেছে। আসলে এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের যা পড়ানো উচিত নয়—এমন কিছু বিষয় বইতে রয়েছে। এ ছাড়া কিছু অংসগতিও রয়েছে। তাই চারটি বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির আললুগাতুল অ্যারাবিয়্যাতুল ইত্তেসালিয়্যাহ বইয়ের ১২২ পৃষ্ঠার একটি কবিতায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের দেশের যুবক, আমরা প্রত্যাশার প্রতীক, সম্মানের তরে এবং জিহাদের জন্য...।’ অষ্টম শ্রেণির একই বইতেও জিহাদের নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে উসকে দেওয়া হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির হাদিস শরিফ বইয়ের ১৩৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর দীন কায়েমের সকল প্রকার প্রচেষ্টা, আল্লাহর বিধান প্রচার ও প্রসার, দীনি শিক্ষা ও তত্পরতার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে মাদরাসার পাঠ্য বই ছাপা হওয়ার পর কিছু বই নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মাদরাসার সব বই পর্যালোচনা করে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যাসহ নানা বিষয় চিহ্নিত করে। তখন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অসংগতিগুলো দূর করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছরেও তা সংশোধন হয়নি। অসংগতিতে ভরা এসব বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বইয়ে জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
জানা যায়, চলতি মাসে মাদরাসার বইয়ের অসংগতির বিষয়টি আবারও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নজরে আসে। কার্যালয় থেকে আগামী শিক্ষাবর্ষের মাদরাসার বইগুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ১৫ নভেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কাছে মন্ত্রণালয় সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ, আকাঈদ ও ফিকহ, আরবি প্রথম পত্র এবং নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ এবং হাদিস শরিফ বইয়ের পাণ্ডুলিপি চায়। পাঠ্য বইগুলো বিশ্লেষণ করে মন্ত্রণালয় দেখতে পায়, ২০১৫ সালে যেসব অসংগতি সংশোধনের জন্য দেওয়া হয়েছিল তা করা হয়নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হলে আগামী শিক্ষাবর্ষের ছাপানো বইও বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার চারটি পাঠ্য বই বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চারটি বইয়ের প্রায় ২৩ লাখ ৮৯ হাজার কপি বাতিল করতে হবে। এতে সরকারের গচ্চা যাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির আরো অনেক পাঠ্য বইয়ে অসংগতি রয়েছে। রয়েছে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা। কিন্তু সব বই বাতিল করে নতুন করে ছাপাতে গেলে জানুয়ারি মাসে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। করতে গেলে গচ্চা যাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তাই আপাতত যে চারটি বইয়ে বেশি অসংগতি রয়েছে, সেগুলোই বাতিল করা হয়েছে।
জানা যায়, এরই মধ্যে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, এসব বই ফেরত দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া যেসব প্রেস মালিক এসব বই ছেপেছিলেন, তাঁদেরও চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে নতুন করে চারটি বই ছাপাতে হবে। এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বইয়ের ৪২৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘একজন নেতা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো পুরুষ হওয়া।’ একই শ্রেণির হাদিস শরিফ পাঠ্য বইয়ের ২২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘ইহুদি খ্রিস্টানদেরকে আগে সালাম দিবে না। যখন তাদের কারো সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন তোমরা তাদেরকে রাস্তার এক পার্শ্ব দিয়ে যেতে বাধ্য করো।’ ৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘আল কুরআন সরকার ও সরকারপ্রধানকে জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মসলিসে সুরা ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দান করেছে।’
নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বইয়ের ১৫৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘কাফির মুশরিকদের সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধের নির্দেশ রয়েছে।’ একই শ্রেণির হাদিস শরিফ বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় আহকামে সালাম অংশে বলা হয়েছে, ‘কাফির মুশরিক ও বিধর্মীকে সালাম দেওয়া হারাম।’
ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত মদকে নবম-দশম শ্রেণির বইতে একটি নিয়ামত ও আকর্ষণীয় পানীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই শ্রেণির হাদিস শরিফ বইয়ের ৩২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘প্রথমত মদকে একটি নিয়মিত ও আকর্ষণীয় পানীয় হিসেবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।’ একই শ্রেণির কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বইতে সুরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতের বাহ্যিক অর্থ যথার্থভাবে করা হয়নি।
সূত্র জানায়, সব বই প্রণয়নের দায়িত্ব এনসিটিবির হলেও মাদরাসার বই করার মতো কোনো বিশেষজ্ঞ তাদের নেই। তাই মাদরাসার বইয়ের পুরো কারিকুলামই ঠিক করে দেয় মাদরাসা বোর্ড, যা সিডি আকারে এনসিটিবিতে পাঠানো হয়। এনসিটিবি তা মুদ্রণ করে দেয়।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। মাদরাসার কারিকুলাম সম্পূর্ণই মাদরাসা বোর্ড তৈরি করে দেয়। তারা পাণ্ডুলিপির সিডি পাঠায়, আমরা ছাপাই। গত রবিবার মন্ত্রণালয় থেকে আমাদর চিঠি দিয়েছে, চারটি বই পরিমার্জিত হবে। আমরা সে অনুযায়ীই কাজ করছি।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বেশ আগেই কিছু ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। জানতে পেরেছি, এবার তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের যেসব বই ছাপানো হয়েছে, সেগুলোও তুলে নিয়ে নতুন করে ছাপানো হবে।’
অভিযোগ রয়েছে, মাদরাসা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও মাদরাসা শিক্ষকদের একটি সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগসহ মাদরাসার নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। তারা চায়নি বলেই এত দিন জেনেশুনেও বইগুলো সংশোধন করা হয়নি।
মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। আর মাদরাসা বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
এসব বিষয়ে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘সপ্তম থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে বিতর্কিত বিষয় সংযোজনের সঙ্গে যুক্ত ৩২ জন লেখক, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে মাদরাসা বোর্ড এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। নয়তো এ ধরনের সমস্যা থেকেই যাবে। আসলে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক একটি চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে মাদরাসার পাঠ্য বইয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করছে। পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের জঙ্গিবাদের আকৃষ্ট করারও চেষ্টাও করে যাচ্ছে।’
সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
- আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে ‘মুজিববাদীরা’ হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।
সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

ফিরে দেখা ১৭ জুলাই
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র
১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।
এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ করেন শিক্ষকরা।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রংপুরে আবু সাঈদের দাফন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।
জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।
রিফাত বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।’
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

জামায়াত আমির
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে
- প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, ‘গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে?’ তিনি লেখেন, ‘গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।
জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।
ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে’ হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।
পরওয়ার দাবি করেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।’ তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।