<p>‘বাংলাদেশের অর্থনীতি রকেট গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সরকারের অংশীদার হতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ।’ গতকাল সোমবার রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এসব কথা বলেন। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০০ একর জমি ইজারা বিষয়ে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মধ্যে এ সমঝোতা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো. আবুল কালাম আজাদ।</p> <p>বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনের পক্ষে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ।</p> <p>অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি গর্বিত। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে মিরসরাইয়ে। এর আগে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা আরো দুটি গ্রুপ মিলে ৬০০ একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছি। তবে আজকের সমঝোতা শুধু বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে। এতে ৫০০ একর জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, সব রকমের যোগ্যতা যাচাই শেষে বেজা কর্তৃপক্ষ বসুন্ধরাকে এ বরাদ্দ দেয়। ১৯৮৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্পায়ন, আবাসনসহ নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িত।</p> <p>জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজকের এদিনে আমি প্রথম স্মরণ করছি তাঁকে, যাঁর জন্ম না হলে এ দেশ স্বাধীন হতো না। এ দেশে আমরা শিল্পপতি হতে পারতাম না। পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্বপ্ন ছিল, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।’</p> <p>বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধস নেমে আসে উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, তাঁকে হত্যার পর সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। জাতির পিতা দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ১৪ বছর জেলে ছিলেন। সংসার ত্যাগ করেছেন। তাঁকে হত্যার পর সেই দেশে আর কোনো কিছু সম্ভব নয় বলে সর্বত্র আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত, তাঁর সুযোগ্য কন্যা আট বছর আগে আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে তিনি একে একে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকেন।</p> <p>দেশকে শক্তিশালী করা বিষয়ে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের একটি লেখার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, “থ্যাচারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ব্রিটেনকে শক্তিশালী  করতে হলে কী কী দরকার? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনটি টার্ম দেশ শাসন করতে হবে।’ আট বছর ধরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায়। তবে উন্নয়নের জন্য এটি খুব কম সময়।” তিনি আরো বলেন, ‘একসময় রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দেশ শাসন করেছে। যে কারণে দেশ এগোতে পারেনি। কিন্তু আজ সফল জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা হাজির হয়েছি। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বাংলাদেশিদের দেখলে বিদেশিরা এখন প্রশ্ন করে কিভাবে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এত ভালো করল। এতেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অবদান রয়েছে। দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হলে তিনি তাঁদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা খেলাধুলায় সহযোগিতা করুন।’ বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে ক্রিকেট যত দূর এগিয়েছে, সে সাফল্যের প্রধান দাবিদার আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে যে রকেট গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘বিদ্যুতের উন্নয়নে রোল মডেল আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবুল কালাম আজাদ। তিনি যখন বিদ্যুৎসচিব ছিলেন, তখন আমি তাঁর কাছে গিয়েছিলাম ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের জন্য। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটি অনুমোদন করে দিয়েছিলেন। তিনি বিদ্যুৎসচিব থাকাকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন রকেট গতিতে এগিয়ে গেছে। এখনো সেই গতি বহাল আছে। তবে অবকাঠামো খাতে সমস্যা আছে। আমি মনে করি, বেজার পবন চৌধুরী এবং ওনাকে যিনি পরিচালনা করছেন (আবুল কালাম আজাদ) তাঁরা দুজন থাকলে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এভাবে এগোতে থাকলে ২০২১ সালে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হব।’</p> <p>আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, ‘বিশ্বের সব অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশ ইজ টাইগার নাও। তবে আমাদের বড় সমস্যা যানজট। এটা নিয়েও সরকার কাজ করছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়কও এ সমস্যা দূর করার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আরো একটি বড় সমস্যা মাদক। ইয়াবা পাচার রোধে প্রধানমন্ত্রী নাফ নদে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেন। সরকারের কাছে আমার আহ্বান, বাংলাদেশের সব জেলা ও বিভাগীয় শহরে একটি করে স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং থিম পার্ক তৈরি এবং এটাকে ইকোনমিক জোনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। মানুষকে বিনোদন দেওয়া গেলেই তারা মাদক থেকে বিরত থাকবে।’</p> <p>বিদেশে টাকা পাচার রোধে ইন্দোনেশিয়া সরকারের মতো ২ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেন তিনি। আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায় এক লাখ কোটি/দুই লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। বিদেশে পাচার করা টাকা ন্যূনতম জরিমানা দিয়ে দেশে আনা গেলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে দেশের বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ দেশের প্রতি দেশের বিনিয়োগকারীদের দরদ বেশি।</p> <p>বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের নীতিমালা এবং অনুমোদন থাকার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দেশ পিছিয়ে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজ এগোয় না। ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও বাস্তবে এখনো তা কার্যকর হচ্ছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়ককে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বসুন্ধরা বিনিয়োগে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজকে বেজার সঙ্গে বসুন্ধরার বন্ধন তৈরি হচ্ছে। এর থেকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অনেক দূর এগোবে।</p> <p>বেজা একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোয় চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর জনবল খুব সীমিত। এর পরও রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে রোডম্যাপ দিয়েছেন, সেটি অতুলনীয়। এটি একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তখনই এই পরিকল্পনা করলেন, যখন চীন থেকে শিল্প-কারখানাগুলো অন্য দেশে স্থানান্তর হচ্ছে।’</p> <p>ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইন প্রণয়নের কাজ শেষ। পাশাপাশি বিধিমালাও তৈরি করে ফেলেছি। আমলাতন্ত্রের লাল ফিতা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। সেই লক্ষ্যে আমাদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস এবং ডুয়িং বিজনেস।’</p> <p>অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক এবং নিউজ২৪ ও রেডিও ক্যাপিটালের সিইও নঈম নিজাম, ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।</p>