<p>ইউএনও গাজী তারিক সালমনের প্রতি আইনি কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্য কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ কথা জানান।</p> <p>এদিকে বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রত্যাহার করে গতকাল জেলা দুটিতে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।</p> <p>বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী তারিক সালমন আগে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই সময়ের একটি ঘটনায়ই তাঁর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃত’ করার অভিযোগ এনে মানহানির মামলা করেছিলেন বরিশালের এক আওয়ামী লীগ নেতা, যাঁকে পরে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই অভিযোগে এর আগে গাজী তারিক সালমনকে শোকজ করেছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক।</p> <p>মন্ত্রিপরিষদসচিব গতকাল ব্রিফিংয়ে বলেন, ওই ছবির ঘটনায় বরগুনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার (তৎকালীন) যে পত্র দিয়েছিলেন, সেটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। তারিক সালমনের বিরুদ্ধে কোনো দোষ না পাওয়ায় সেটি খারিজ করে নথিজাত করা হয় বলে জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম।</p> <p>তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধি। জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গাফিলতি আছে কি না, সেটা দেখা হচ্ছে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।</p> <p>জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বিকৃত’ ছবি ছাপানোর অভিযোগে ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে গত ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু। ওই মামলায় বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেছিলেন। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন তারিক সালমন। আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করেন। পুলিশ ইউএনওর হাত ধরে আদালতের গারদখানায় নেয়। অবশ্য দুই ঘণ্টা গারদখানায় থাকার পর তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।</p> <p>এদিকে ওই মামলায় গাজী তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর সংক্রান্ত কোনো আদেশ রক্ষিত নেই বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তবে সালমনকে গারদখানায় পাঠানোর তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। মেট্রো কোর্ট, বিএসএস বরিশালের হাজতখানার আসামি গ্রহণ রেজিস্টারে ১৯ জুলাই প্রথম নামটি রয়েছে গাজী তারিক সালমনের। গত রবিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন বলেন, গাজী তারিক সালমনের জামিন মঞ্জুর করা হয়।</p> <p>তারিক সালমনকে গারদখানায় পাঠানোর ঘটনায় জনপ্রশাসনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। মামলার বাদী ওবায়েদুল্লাহ সাজুকে গত শুক্রবার দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।</p> <p>স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে ছাপানো ওই ছবি নিয়ে মামলা হওয়ার আগেই এপ্রিলে গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বরিশালের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস ও বর্তমান জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান। এ জন্য প্রথমে তারিক সালমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। তারিক নোটিশের জবাবও দেন। পরে ওই জবাব পাঠানো হয় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান।</p> <p>বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসক প্রত্যাহার প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. এম মোজাম্মেল হক খান বাসসকে বলেন, ‘তাদের বরিশাল ও বরগুনার বর্তমান দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ওই দুটি জেলায় নতুন দুজন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>পরে এসংক্রান্ত এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসকদ্বয়, যথাক্রমে গাজী এম সাইফুজ্জামান ও বশিরুল আলমকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।’ এতে আরো বলা হয়, বরিশাল ও বরগুনার নতুন জেলা প্রশাসক হয়েছেন যথাক্রমে হাবিবুর রহমান ও মো. মোখলেসুর রহমান। এর আগে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন হাবিবুর রহমান। অন্যদিকে মো. মোখলেসুর রহমান পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।</p>
