<p>এবার চৈত্র মাসেও দেখা মেলেনি চিরায়ত সেই কাঠফাটা রোদের। উল্টো চৈত্র মাসে (মার্চে) স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫২ শতাংশ। বৈশাখেও (এপ্রিলে) স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেও বেশ কয়েকবার ঢাকাসহ দেশের প্রায় বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে মার্চ থেকে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আবহাওয়া প্রায় শীতলই ছিল সারা দেশে। কিন্তু বিপত্তি বাধল ১৯ মে থেকে। সেদিন থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে দাবদাহ। দেশজুড়ে সেই ভাপসা গরম এখনো চলছে। গতকাল বুধবার সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে—৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি না হওয়ায় গরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবারও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। তবে শুক্রবার কিংবা শনিবার থেকে আবহাওয়া কিছুটা শীতল হতে শুরু করবে। শনিবার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত দুই সপ্তাহের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশজুড়ে দাবদাহ শুরু হয়েছে ১৯ মে থেকে। তার আগের দিন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই ঢাকায় গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে হিসাবে পাঁচ দিনের ব্যবধানে শুধু ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাঁচ দিন আগেও যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত পাঁচ দিনে যশোরে তাপমাত্রা বেড়েছে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, সাধারণত দেশে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক হিসাবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু দাবদাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রি ছাড়ালে তাকে তীব্র দাবদাহ বলা হয়। সে হিসেবে দেশজুড়ে এখন মৃদু দাবদাহ চলছে। </p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃতির আচরণ কিছুটা বদলে গেছে। চৈত্র মাসে যখন কাঠফাটা রোদ পড়ার কথা ছিল, তখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মার্চ-এপ্রিলে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও মে মাসে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদের মতে, গত পাঁচ দিনের দাবদাহের প্রধান কারণ হলো বৃষ্টি বন্ধ। চৈত্র-বৈশাখে বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া শীতল ছিল। কিন্তু এখন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। ১ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সারা দেশে গতবারের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।</p> <p>গত বছরও এ সময়ে (মে মসে) দেশে মৃদু দাবদাহ ছিল। তাহলে এবার কেন গরম মানুষের কাছে এত অতিষ্ঠ হয়ে উঠল—এমন প্রশ্নের উত্তরে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর চৈত্র মাসে দাবদাহ হয়েছিল। দুই মাস পর আবারও দাবদাহ হয়েছিল। সে কারণে মানুষ সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছে। চৈত্রের পাশাপাশি জ্যৈষ্ঠতেও দাবদাহের কারণে মানুষ গরমের সঙ্গে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু এবার চৈত্রে দাবদাহ হয়নি। জ্যৈষ্ঠে তাপপ্রবাহ হওয়ার কারণে মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঢাকায় গাছপালা কম, নদী-জলাশয়ও নেই। অথচ নদী, গাছপালা, জলাশয় পরিবেশকে শীতল করে রাখে। এ কারণে ঢাকার গরম অসহনীয়।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশাল, পাবনা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। আজও তা অব্যাহত থাকবে। গতকাল সাতক্ষীরায় ৩৭.৪, খুলনায় ৩৭.৩ ও রাজশাহীতে ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। </p> <p>মৃদু দাবদাহেও ঢাকায় পরিস্থিতি এত শোচনীয় কেন—জানতে চাইলে আবহাওয়া কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে পাকা রাস্তার পাশাপাশি বহুতল ভবন বেশি, মাটি কম। ফলে তাপ শোষিত হয় না। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য জায়গায় মাটি তাপ শোষণ করে নিতে পারে। রাজধানীতে গাড়ি থেকে কাবর্ন নিঃসরণের হারও অনেক বেশি। বহুতল ভবন, পাকা রাস্তা তাপ শোষণ করতে না পারায় রাতের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকছে। রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে সেটিকে মিনিমাম বলা হয়। কিন্তু ঢাকায় এখন রাতের মিনিমাম তাপমাত্রা থাকছে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।</p> <p> </p>