<p>সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্য ‘জাস্টিশিয়া’ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এটার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অপসারণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাস্টিশিয়া যে দেশে দেশে ন্যায়বিচারের প্রতীক, জনগণকে তা বুঝতে না দিয়ে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল একে মূর্তি বলে আখ্যায়িত করছে। প্রধানমন্ত্রীকেও ভুল বোঝানো হচ্ছে। ভাস্কর্যটি সরানোর কথা ওঠার পর দেশজুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় বইছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ রকম মতামত দিয়েছেন।</p> <p>ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন শিল্পী মৃণাল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরস্বতী, দুর্গাকে পূজা করা হয়। এভাবে দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজা করা হয়। কিন্তু কেন সবাই ভাস্কর্যকে মূর্তি বলছে? সঠিক বিষয়টি বুঝতে না পেরেই ভাস্কর্যকে মূর্তি বলা হচ্ছে। এই ভাস্কর্যকে পূজা করা হবে না। এ কারণে এটি মূর্তি নয়।’</p> <p>ভাস্কর মৃণাল হক বলেন, ন্যায়বিচারের একটা প্রতীক সুপ্রিম কোর্টের সামনের এই জাস্টিশিয়া। পৃথিবীর অনেক দেশের বিচারালয়ের সামনে এ রকম ভাস্কর্য বা জাস্টিশিয়া রয়েছে।</p> <p>মৃণাল হক আরো বলেন, “প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আমাকে ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি বানাতে বলেছিলেন। আমি মডেল তৈরি করে দেখাই। তারপর আমাকে অনুমোদন দেন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। আমি ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্ম’-এ এটা বানিয়ে দিয়েছি। এটা গ্রিক দেবীর মূর্তি নয়। বাঙালি একজন নারীর চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।” এটি সরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বানিয়ে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে একে মূর্তি বলে সরানোটা ঠিক হবে না।’</p> <p>এ ভাস্কর্য নিয়ে আগের দিন অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়। এটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে কিছু ধর্মীয় সংগঠন। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও এ ভাস্কর্য অপসারণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে একটি অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিচ্ছে।</p> <p>এর আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলা হয়েছিল, জাস্টিশিয়া একটি রোমান শব্দ। এর অর্থ বিচারক। পৃথিবীর অনেক দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জাস্টিশিয়ার ভাস্কর্য রয়েছে। এ ভাস্কর্যকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থাকে অটুট রাখার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালতগুলোতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে উপস্থিত হলে এ স্থানের পবিত্রতা জনমনকে প্রভাবিত করবে।</p> <p>কিছুদিন আগে ইসলামপন্থী দলগুলো এ ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্য না বুঝেই কেউ কেউ সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবি করছে। মূলত এই ভাস্কর্যটি ন্যায়বিচারের প্রতীক।</p> <p>উল্লেখ্য, ইরান ইসলামী মূল্যবোধে পরিচালিত একটি মুসলিম দেশ হলেও সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ‘তেহরান কোর্ট হাউস’-এর সামনেও জাস্টিশিয়া ভাস্কর্য রয়েছে। ইরানে ইসলামী শরিয়া আইন প্রচলিত। এমন একটি দেশের আদালত চত্বরে সুশোভিত ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। এ ধরনের ভাস্কর্য ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে জাস্টিশিয়া নামে পরিচিত। এ ভাস্কর্য জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। ইরান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরিসহ অনেক দেশেই এই জাস্টিশিয়া প্রতীক রয়েছে।</p> <p>জাস্টিশিয়া ভাস্কর্য পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট হয় যে এর ডান হাতে রয়েছে একটি তলোয়ার, যা শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতীক। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই তলোয়ার ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। দুই দিকে ধারবিশিষ্ট এই তলোয়ার আদালতের রায় বাস্তবায়ন এবং আইনের আশ্রয় লাভের প্রতীক হিসেবেও পরিচিত।</p>