ঈদের নামাজের আগে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদ-ময়দানের কাছে যে জঙ্গি হামলা হয়েছে তা জামায়াত-শিবির ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রধান ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী লাখো আলেমের ফতোয়ার কারণে ক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির। তাদের লোকেরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। তারা আর কোনো উপায় না পেয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা নিতে চাচ্ছে।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন
এই হামলা চালাতে পারে জামায়াত-শিবির
মোশতাক আহমদ

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, কারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে, এ বিষয়ে সরকার, জনগণ বা আলেমসমাজের কী করণীয় প্রভৃতি বিষয়ে গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে সবিস্তারে বলেন দেশের বিশিষ্ট এই আলেম।
মাওলানা মাসউদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় জামায়াত-শিবির বাধা দিয়েছিল। তারা ইসলাম, দেশ ও মানবতার শত্রু। তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। আমরা এক লক্ষ উলামায়ে কেরাম জঙ্গিবাদী হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। সাহাবায়ে কেরাম জিহাদ করেছেন বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, হামলাকারীরা বলছে তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু ইসলাম কি বলেছে যে পবিত্র ঈদের নামাজ বাদ দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করো; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করো? তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা জানে যে তারা ছোটখাটো হামলা করে দেশের বা সরকারের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। তার পরও তারা এসব করে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়, এসব করে তারা কোনো ফায়দা নিতে চায়।
মাওলানা মাসউদ জানান, শোলাকিয়া ময়দানে তিনি হেলিকপ্টারে করে গিয়েছিলেন, ঈদের নামাজের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আগে। সেখানে নেমেই তিনি গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। প্রথমে ভেবেছিলেন, এ আওয়াজ হয়তো নামাজের আগে প্রতিবছর রেওয়াজ অনুযায়ী পুলিশ যে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে তার। পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, জামাত শুরু হতে পৌনে এক ঘণ্টা বাকি। তখন তাঁর মনে হলো, এটা জঙ্গি হামলা সম্ভবত। কিছু পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পারলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে।
মাওলানা মাসউদ বলেন, এত কিছুর পরও শোলাকিয়ায় ঈদগাহে গিয়ে নামাজের ইমামতি করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যেতে দেয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমার ইমামতি করাই উচিত ছিল। এখন জঙ্গিরা বলতে থাকবে যে আমাকে তারা ইমামতি করতে দেয়নি।’
ওই দিন জামাতের আগে প্রায় পাঁচ লাখ মুসল্লিকে জঙ্গিবাদের কুফল ও ধর্মের সঙ্গে এর যে কোনো সম্পর্ক নেই সেসব বিষয়ে বলার ইচ্ছা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পীড়াপীড়িতে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।
জঙ্গিবাদবিরোধী লাখো আলেমের ফতোয়ার উদ্যোক্তা মাওলানা মাসউদ বলেন, দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও জাতীয় ঈদগাহে কোনো বক্তব্য দেননি ইমামরা। এতে তিনি আহত হয়েছেন, হতাশ হয়েছেন। কারণ জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব মজলিসে যদি জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান না হয় তাহলে মানুষ জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কিভাবে জানবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে উঠতি বয়সের যুবকদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া অনেকাংশে বন্ধ হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে এই ফতোয়ার এক লাখ কপি বিতরণের জন্য অনুরোধ জানাবেন তিনি। প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেল যাতে জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য প্রচারের জন্য আলেমদের বয়ান কমপক্ষে আধাঘণ্টা প্রচার করে সেই অনুরোধও জানাবেন তিনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ ফতোয়ার বিষয়ে অবহিত করা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশও করবেন। প্রাইমারি স্কুল থেকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সব পর্যায়ের সিলেবাসে এ ফতোয়ার বিষয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানাবেন সরকারের কাছে। তিনি বলেন, দেশের সব আলেম, মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি। না হয় একে একে সব মসজিদ ও মাদ্রাসা আক্রান্ত হবে, অস্তিত্বের সংকটে পড়বে সবাই।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, জঙ্গিবাদের কারণে তিনি আতঙ্কিত নন। তাঁর বিশ্বাস, সরকার ও জনগণ সতর্ক থাকলে জঙ্গিরা বুদবুদের মতো উবে যাবে। পবিত্র কোরআন শরিফে বলা আছে, বাতিলের জন্মই হলো নিশ্চিহ্ন হওয়ার জন্য। তাই জঙ্গিরাও বেশি দিন বাংলার জমিনে টিকতে পারবে না। তারা এ দেশের মাটি স্পর্শ করতে পারবে না। আর মাটি না পেলে তাদের টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক-হানাদারদের হটিয়েছে, জঙ্গিদেরও দেশ থেকে বিতাড়িত করবে। সে সময় বেশি দূরে নয়।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।