<p>বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের চ্যানেল সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সিস্টেম হ্যাকড হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। খোদ বাংলাদেশের বড় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই এমন হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৩ সালে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সার্ভার থেকে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে আড়াই লাখ ডলার চুরি করেছিল এক তুর্কি নাগরিক। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের শিল্প ভবন শাখার দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁদের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয় এবং চুরি যাওয়া অর্থের তুলনায় উদ্ধারের খরচ বেশি পড়বে বিধায় আন্তর্জাতিকভাবে মামলার পথে যায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে ওই ঘটনার পরপরই সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবগত করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।</p> <p>সোনালী ব্যাংকের ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তা খতিয়ে দেখছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।</p> <p>সোনালী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ২০১৩ সালের ওই চুরির ঘটনায় সুইফটের বার্তাপ্রক্রিয়া যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, ওই একই কৌশলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ স্থানান্তর করে নেওয়া হয়েছে; যে ঘটনায় এখনো কাউকে অভিযুক্ত করা যায়নি।</p> <p>২০১৩ সালের জুন মাসে সোনালী ব্যাংকের ঢাকার শিল্প ভবন করপোরেট শাখা ও লন্ডন শাখার মাধ্যমে এ অর্থ খোয়া যায়। আর খোয়া যাওয়া অর্থ পাচার হয়েছিল তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে। তখন এ নিয়ে সোনালী ব্যাংক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। তদন্তে দুজনকে দোষীও সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে বুয়েট থেকে পরীক্ষা করানোর পর ব্যাংকটির ওই দুই কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করলেও তুরস্ক থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পাওয়ায় বিষয়টি হিমঘরে চলে গেছে। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ তুরস্ক থেকে তখন উদ্ধার করা যায়নি। কারণ উদ্ধারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হতো তা চুরি যাওয়া অর্থ থেকে অনেক বেশি। দ্বিগুণও হতে পারত। এ ছাড়া টাকা যে ফেরত পাওয়া যাবে এরও কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।</p> <p>জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২ জুন সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের করপোরেট শাখা থেকে ব্যাংকটির লন্ডন শাখায় আড়াই লাখ ডলার ছাড়ের একটি সংকেত পাঠানো হয়। সুইফটের মাধ্যমে পাঠানো ওই সংকেতটির বিপরীতে লন্ডন শাখা আড়াই লাখ ডলার ছাড়ের অনুমোদন দেয়। এরপর এ অর্থ তুরস্কের তার্ক ইকোনমি বাখাই এএস (Turk Ekonomi Bahkasi A.S) ব্যাংকের ইস্তাম্বুল শাখায় ট্রান্সফার হয়ে যায়। অর্থ ট্রান্সফার হয় একটি টেক্সটাইল কম্পানির নামে।</p> <p>অস্বাভাবিক ওই লেনদেনের তদন্ত করতে সোনালী ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২ জুন ২০১৩ সালে আড়াই লাখ ডলার খোয়া যাওয়ার আগে সুইফটের মাধ্যমে আরো দুটি সংকেত দেওয়া হয়েছিল অর্থছাড়ের জন্য। প্রথম সংকেতটি দেওয়া হয় ২৭ মে ২০১৩ সালে। দ্বিতীয় সংকেতটি একই বছরের ৩০ মে দেওয়া হয়। তবে সে সময় সুইফট কর্তৃপক্ষ এ সংকেতের আওতায় অর্থছাড় না করলেও ২ জুনের সংকেতটিতে আড়াই লাখ ডলার ছাড় করা হয়। সুইফটের সংকেতটি সোনালী ব্যাংকের দুটি আইডি থেকে পাঠানো হয়েছিল। এ দুটি আইডি হলো মনোয়ার ও এম সালাম।</p> <p>রয়টার্স বলছে, এ নিয়ে সুইফট সার্ভার হ্যাকড হওয়ার চারটি ঘটনা জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হ্যাকিং ছাড়া অন্য যে দুটি ঘটনা রয়েছে এর একটি ঘটেছিল গত বছরের জানুয়ারিতে ইকুয়েডরে।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভের অর্থ হ্যাকিংয়ের পর থেকে এ ঘটনায় তাদের কোনো দায় নেই বলে ঢালাওভাবে বলে আসছে সুইফট কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি এভাবে তাদের দায় এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।</p> <p>তবে সাইবার আক্রমণের দায় গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা করলেও সম্প্রতি নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে নড়েচড়ে বসেছে সুইফট। আগামী সপ্তাহে পাঁচ দফা নিরাপত্তা পরিকল্পনা ঘোষণা করবে সুইফট। গত মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত এক খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স অনলাইন।</p> <p>সুইফট এখন যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, তা হলো ব্যাংকগুলোর তথ্য আদান-প্রদানব্যবস্থা উন্নত করা, সুইফটকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো কঠোর করা এবং প্রতারণামূলক পরিশোধ শনাক্ত করা।</p>