<p>যুবক বয়সে কর্মসংস্থানের আশায় টাকা-পয়সা নিয়ে ‘যুবক’-এ দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগই এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কর্মসংস্থান দূরের কথা, সহায়-সম্বল হাতছাড়া হয়ে তাঁরা এখন নিঃস্ব। মারাও গেছেন অনেকে। যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের ভাগ্য ঘুরছে সরকারের ফাইলে ফাইলে; তাও দিন, মাস, বছর নয়—পুরো দশক ধরে। কমিটির পর কমিশন গঠন, প্রতিবেদন পাওয়া আর সুপারিশ নিয়ে ফাইলবন্দি করে রাখা—এভাবেই কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। একেকটি ফাইল এক-দেড়-দুই বছর পর পর হঠাৎ নড়াচড়া করে, আবার টেবিলে আটকে যায়। পুরোটা সময় ধরে পেটে পাথর বেঁধে এসব কমিটি আর কমিশনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন ‘যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি—যুবক’-এর গ্রাহকরা। মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বারেও ঘুরছেন অনেকে। কিন্তু কানাকড়িও ফেরত পাননি কেউ। অথচ ব্যাংকে থাকা সব টাকা তুলে নিয়েছেন যুবকের কর্ণধাররা; প্রকাশ্যে-গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি।  </p> <p>সরকার গঠিত ‘যুবক কমিশন’ ২০১৩ সালের মে মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে ১৯টি সুপারিশের মোদ্দা কথা ছিল, প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে যুবকের সব সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে নিয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা। কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য ওই প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে দুই বছর তিন মাস সময় নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তারপর দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পত্র বিনিময় হয়েছে ডজনখানেক। সর্বশেষ কয়েকটি আইনের কথা উল্লেখ করে তার মধ্যে কোন আইনের আওতায় যুবকে প্রশাসক নিয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই মতামত এখনো মেলেনি।</p> <p>যুবকে প্রশাসক নিয়োগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত নথি আমার টেবিলে এখনো আসেনি। এলেই আমি ছেড়ে দেব। আমি নথি ফেলে রাখি না।’</p> <p>২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য যুবককে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে সময়সীমা ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন আর কোনো সময়সীমা নেই। আদৌ কোনো দিন টাকা ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন যুবকের গ্রাহকরা।</p> <p>যুবকের গ্রাহকদের সংগঠন ‘যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মুকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শেষ হয়ে গেছি। গত সপ্তাহেও বাগেরহাটের এক অধ্যাপক হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। অন্তত ৫০০ গ্রাহক এই ১০ বছরে মারা গেছেন প্রায় বিনা চিকিৎসায়।’</p> <p>তিনি বলেন, যুবকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা করছে না। আর এই ফাঁকে যুবকের লোকজন সব সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে। হয়তো যখন প্রশাসক নিয়োগ দেবে, তখন যুবকের কোনো সম্পত্তিই আর থাকবে না। তিনি অভিমানের সুরে বলেন, সবাই যেন যুবকের পক্ষে। মুখে সবাই গরিবের পক্ষে কথা বললেও গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কিছুই করছে না।</p> <p>সারা দেশে যুবকের বিভিন্ন সম্পত্তি আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ৪০টা জেলায় যুবকের সম্পত্তি দেখতে গেছি। বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে রেখেছে। আর কিছু যুবক বিক্রি করেছে। এখনো বিক্রি করছে। খুলনায় যুবকের একটি বাড়ি আছে, সেটিও আওয়ামী লীগের দখলে। ঢাকার বিকে টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় এক যুবলীগ নেতা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করছেন। আমরাও ৫৩/১ পুরানা পল্টন লেনে থাকা যুবকের অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা আয়ত্তে নিয়েছি। এখানে সারা দেশ থেকে যুবকের গ্রাহকদের প্রতিনিধিরা সপ্তাহে এক দিন মিলিত হয়ে বৈঠক করি।’</p> <p>১৯৯৪ সালে নিবন্ধন নেওয়ার আগেই সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুবক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৭ সালে নিবন্ধিত সংস্থাটি ওই সময় প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। যুবকের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সালের ৬ জুলাই সংস্থাটির কার্যকলাপ বন্ধ ঘোষণা করে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা সুদসহ পরিশোধের নির্দেশ দেয়। পরে সরকার মামলাও করে। তবে সেই মামলা থেকে জামিন পান যুবকের উদ্যোক্তারা। কিন্তু ব্যাংক হিসাব জব্দ না হওয়ায় জমানো সব টাকা তুলে নেন তাঁরা। এ ছাড়া সরকার যুবকের সম্পত্তি ক্রোক না করায় সেগুলোর বেশির ভাগই বিক্রি করে দেন তাঁরা। অভিযোগ আছে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ও পরে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রভাবশালী অনেকেই যুবকের অনেক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন। এ অবস্থার মধ্যে যুবকের গ্রাহকদের পাওনা অর্থ কিভাবে উদ্ধার করে দেওয়া যায়, তা বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে সভাপতি করে ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদে ২০১১ সালের ৭ মে সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে ‘যুবক কমিশন’ গঠন করে সরকার। মেয়াদ পূর্তিতে কমিশন সুপারিশসহ প্রতিবেদনও দেয়, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের মতো ‘ঝামেলার দায়িত্ব’ নিতে আগ্রহী ছিল না অর্থ কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শেষে গত বছর লিখিতভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, যুবক যেহেতু ১৯৯৭ সালে সামাজিক নিবন্ধন আইনের (দ্য সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০) আওতায় নিবন্ধিত, তাই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।</p> <p>অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, যুবক সামাজিক নিবন্ধন আইনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের কার্যালয় বা আরজেএসসিতে নিবন্ধিত। তাই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া এবং সেই প্রশাসকের মাধ্যমে যুবকের সম্পত্তি দখলে নিয়ে বিক্রির পর অর্থ ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।</p> <p>বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সামাজিক নিবন্ধন আইন সংশোধন করে প্রশাসক নিয়োগের ধারা যুক্ত করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। তাই কোন আইনের আওতায় প্রশাসক নিয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এখনো তা পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে মতামত পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।</p> <p>গত অক্টোবর মাসে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সামাজিক নিবন্ধন আইনে প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। তবে এই আইনে নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুবকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দেওয়ানি দায় সুরক্ষাকল্পে প্রশাসককে কোন আইনি কাঠামোয় ক্ষমতা অর্পণ করা হবে?’</p> <p>২০১৩ সালে যুবক কমিশনের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুবকের কাছে গ্রাহকদের পাওনা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। তিন লাখ তিন হাজার ৭৩৯ জন গ্রাহক সংস্থাটির কাছে এ পরিমাণ অর্থ পাবেন। আর দেশের ৪৯টি তফসিলি ব্যাংকে যুবকের বিভিন্ন হিসাবে অর্থ রয়েছে মাত্র ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সারা দেশে ৯১টি জমি, ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি কম্পানি রয়েছে যুবকের। তবে জমি, বাড়িসহ অন্যান্য সম্পদও বিক্রি চলছে। এ অবস্থায় যুবকের যেসব সম্পত্তি এখনো রয়েছে, একজন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা আসল টাকা পরিশোধের সুপারিশ করেছে কমিশন। যত দিন প্রশাসক নিয়োগ সম্পন্ন না হয়, তত দিন পর্যন্ত এসব সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আওতায় নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে যুবক ও এর সহযোগী সব সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে।</p> <p>যুবকের সম্পত্তি, জমি, বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নগদ টাকা বেহাত করার দায়ে ৪০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে কমিশন। এই ৪০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশও করেছে কমিশন। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বিরোধিতা রয়েছে এমন সম্পত্তি যেমন বিকে টাওয়ার, একটি টেলিভিশন চ্যানেল, সাবেক সচিব মো. মোকাম্মেল হক ও ভোলার চেয়ারম্যান মজনু মিয়ার সঙ্গে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনসংক্রান্ত জটিলতা, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের বকেয়া ভাড়াসংক্রান্ত বিষয়াদিও প্রশাসকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে কমিশন। অভিযুক্ত ওই ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলার খসড়া এজাহার লিখে দ্রুত মামলা দায়ের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সে মামলাও এখনো হয়নি।</p> <p>যুবক কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুবকের গ্রাহকদের পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে হলে যুবকের সম্পত্তি দ্রুত সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে; তারপর কম্পানি আইন সংশোধন করে বা নতুন আইন প্রণয়ন করে যুবকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর তা বিক্রি করে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা আসল অর্থ ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন লাখেরও বেশি সাধারণ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের বিচারকদের নিয়ে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের সুপারিশও করেছি।’</p> <p>যুবকের উত্থান প্রসঙ্গে কমিশন বলেছে, ‘যুবকের অশুভ উত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছে তৎকালীন সরকারি ছত্রচ্ছায়া। এ ছাড়া তখনকার মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ আমলা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরাসরি ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্থাটির বিকাশ ঘটে। এসব কারণে বিভিন্ন শ্রেণির সহজ-সরল শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকজন অতি সহজে তাদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে ও অবশেষে সর্বস্বান্ত হয়।’</p> <p>কমিশনের প্রতিবেদন মতে, যুবকের কর্তারা জামিনে মুক্ত হয়ে এখনো ভিন্ন নামে একই ধরনের ব্যবসা চালাচ্ছে এবং যুবকের বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সংস্থাটি সারা দেশে কয়েক শ সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছে। ঢাকার নবাবগঞ্জে উর্বশী বহুমুখী সমবায় সমিতি, পটুয়াখালীতে দুমকী যুবকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আইডিয়াল বহুমুখী সমবায় সমিতিসহ বিভিন্ন নামে বিভিন্ন স্থানে সমিতি খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া যুবকের গ্রাহকদের অর্থে কেনা ধানমণ্ডির ২৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ি এবং কুমিল্লা শহরের ১০৪ শতক জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও মেঘনা সি ফুডস, বিচ হ্যাচারির শেয়ার ও সুইফট ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মালিকানাও অসৎ উদ্দেশ্যে বিক্রি বা হস্তান্তর করেছে যুবক। সারা দেশে যুবকের ৯১টি জমি-প্রকল্প থাকলেও এর ৫০টি প্রকল্পে কোনো জমি অবশিষ্ট নেই।</p> <p>এসব বিষয়ে কথা বলতে যুবকের নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুমের মোবাইল ফোন নম্বরে কয়েক দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। মূলত প্রতারণার মামলা থাকা ও মূলধন ফেরত না পাওয়া বিনিয়োগকারীদের ভয়ে তিনি ও সংস্থাটির অন্যরা বেশির ভাগ সময়ই পলাতক থাকেন বলে জানা গেছে। পলাতক থেকেই মাঝেমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে অর্থ সহায়তা চান নির্বাহী পরিচালক।</p> <p>২০১৩ সালের ৩০ জুন অর্থমন্ত্রীর কাছে এ রকম একটি চিঠি পাঠিয়ে হোসাইন আল মাসুম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের জমি বিক্রিসহ গ্রাহকদের কাছ থেকে বকেয়া কিস্তি আদায় করে পাওনাদার গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করা শুরু করেছি। গণতান্ত্রিক এই সরকারের কাছে আমরা আশা করছি, সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে থেকে আমাদের দু-তিন বছর কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এই দু-তিন বছর জেল-জুলুম, নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেলে, অর্থাৎ সরকারের সহযোগিতা পেলে জমি বা প্লট, কম্পানির শেয়ার বা নগদ টাকা (যেখানে যা প্রযোজ্য) দিয়ে দায় পরিশোধ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’</p> <p>অর্থমন্ত্রীকে ওই চিঠি দেওয়ার পর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল হোসাইন আল মাসুমের। সরকারের প্রথম মেয়াদের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে মাসুম বলেছিলেন, ‘তিনি আমাকে বলেছেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মেয়াদে যুবকের কোনো ক্ষতিও করবে না, কোনো সুবিধাও দেবে না। গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ সম্পর্কেও সরকার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তাই জমি-জমা বা অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে আমরাই গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করছি সাধ্যমতো। এ কাজে সরকারের সহায়তা চেয়েছি।’</p>