ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭
আন্তর্জাতিক গুম দিবস আজ

নিখোঁজ অর্ধশত সাধারণ মানুষ

এস এম আজাদ
এস এম আজাদ
শেয়ার
নিখোঁজ অর্ধশত সাধারণ মানুষ

গত ১৬ মার্চ সকালের একটি ঘটনা। রাজধানীর ফকিরাপুলের ২৯১ নম্বর বাসা থেকে ছাপাখানার সরবরাহকারী মাজহারুল ইসলাম রুবেলকে কয়েকজন সশস্ত্র যুবক হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যায়। এর চার দিন পর ঘটে আরেক ঘটনা। ২০ মার্চ রাতে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের সামনে চায়ের দোকান থেকে ছাপাখানার কর্মচারী রাজু ইসলাম ও শাওনকে একইভাবে তুলে নেওয়া হয়।

এরপর পাঁচ মাস ধরে তাঁরা নিখোঁজ। তাঁদের স্বজনরা বলে, তিন যুবকের কেউই রাজনীতি অথবা কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দিয়ে অস্ত্রধারীরা তিনজনকে নিয়ে যায়। ঘটনার পর স্বজনরা মতিঝিল থানা, রমনা থানা, মিন্টো রোডে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে খোঁজ করেও কোনো হদিস পায়নি।
পরিবারগুলো এখন চরম অনিশ্চয়তায়।

রুবেল, রাজু ও শাওনের মতো অনেক সাধারণ মানুষই এভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা নেই কারো কাছে। জবাব নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও।

দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে গুম হওয়া মানুষের তালিকা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে, পরিসংখ্যান দিয়ে এমন দাবি করে আসছে বিএনপিসহ সরকারের প্রতিপক্ষ দলগুলো। তবে তালিকা ধরে অনুসন্ধান করে নিখোঁজদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র, শ্রমজীবী, বেকার যুবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ 'রহস্যজনক নিখোঁজ' রয়েছে। তাদের ফেরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন অসহায় স্বজনরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ঘুরে ঘুরে এখন ক্লান্ত তাঁরা। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গত সাড়ে আট বছরে ৩৭৮ জনকে গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৯৩ ব্যক্তি এখনো নিখোঁজ আছে বলে দাবি স্বজনদের।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে আজ ৩০ আগস্ট রবিবার সারা বিশ্বে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে 'আন্তর্জাতিক গুম দিবস' পালিত হচ্ছে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মানুষের গুম হওয়া থেকে সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এর ফলে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয় এবং কাউকে গুম করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃৃতি পায়। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশেও গুম আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সরকারকে গুমের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ডিসঅ্যাপিয়ার্ড, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস। গুম দিবস উপলক্ষে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

গুমের শিকার পরিবারগুলোকে একত্র করে 'মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি'র ব্যানারে আজ নানা কর্মসূচি পালন করবেন কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁদের অন্যতম আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের দেশে গুমের শিকার হচ্ছে বেশির ভাগ সরকারবিরোধী দল-মতের মানুষ। নিখোঁজ হচ্ছে এখন পরিচয়হীন সাধারণ মানুষও। এতে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি অভিযোগের আঙুল প্রদর্শিত হচ্ছে।'

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, 'মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, খোঁজ মিলছে না। এভাবে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা অপহৃত হচ্ছে তাদের স্বজনরা একটা পরিচয় নিয়েই আসছে। তবে আমাদের কাছে সেটা মুখ্য বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে মানুষটিকে অন্যায়ভাবে গুম করা হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী।'

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনের লাশ পাওয়া গেছে। জীবিত ফিরে এসেছে দুজন। বাকি ২৮ জন নিখোঁজ আছে। এ সংস্থার তথ্যমতে, গত বছর নিখোঁজ হয়েছিল ১০২ জন, যাদের ৮৮ জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৩ সালে ৫৮ জনের মধ্যে ৫৩ জন নিখোঁজ ছিল। ২০১২ সালে ৫৬ জনের মধ্যে ৩৪ জন; ২০১১ সালে ৫৯ জনের মধ্যে ৩৯ জন এবং ২০১০ সালে ৪৬ জন অপহৃতের মধ্যে ৩৩ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২১ জন নিখোঁজ হয়, যাদের ১৮ জনের খোঁজ মেলেনি। এই হিসাবে, গত আট বছর সাত মাসে ৩৭৮ জন ব্যক্তিকে গুমের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে ২৯৩ জনই নিখোঁজ রয়েছে।

ফকিরাপুলে নিখোঁজ মাজহারুল ইসলাম রুবেলের ভগ্নিপতি মো. মামুন বলেন, গত ১৬ মার্চ সকালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন যুবক বাসায় গিয়ে রুবেলকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। পরে কোথাও রুবেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ৩০ মার্চ মতিঝিল থানায় জিডি করা হয়। রুবেলের স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম জ্যোতি বলেন, 'আমার ছোট মেয়ের বয়স প্রায় চার মাস। তার জন্মের আগেই তার বাবা নিখোঁজ। বড় মেয়ে মুনতাহ (সাড়ে তিন বছর) বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।'

নিখোঁজ রাজুর স্ত্রী রোমানা জানান, তাঁর স্বামী আরামবাগের ১৪৬ নম্বর বাড়িতে ইয়ারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী। তিনি কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২২ মার্চ তিনি মতিঝিল থানায় ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে জিডি করতে যান। পুলিশ ডিবির নাম উল্লেখ না করে 'নিখোঁজ' জিডি নেয়। রুমানা বলেন, 'স্বামীকে না পাওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কোথায় যাব জানি না।' জিডির তদন্তের ব্যাপারে মতিঝিল থানার ওসি ফরমান আলী বলেন, 'আমরা খুঁজছি। তদন্ত চলছে। কিন্তু এখনো তাদের সন্ধান পাইনি।'

রাজধানীর মহাখালী এলাকার ডিএনএস সফটওয়্যার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এ এস এম ফারহান হোসেন। গত ১১ মে অফিস থেকে বের হয়ে রূপনগরের বাসায় ফেরেননি তিনি। সেই থেকেই নিখোঁজ। ফারহানের বাবা শাহাদাত হোসেন বলেন, 'জিডি করে, মামলা করে আমরা প্রশাসনের কাছে ঘুরছি। কিন্তু কেউ কোনো খবর দিতে পারছে না। ওর মা এখন পাগলপ্রায়। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি বা দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। কেন তাকে গুম করা হলো?'

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর এলাকা থেকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয় মফিজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে। দেড় বছরেও কোনো হদিস মেলেনি তাঁর। মফিজের বন্ধু খলিলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পানামা কম্পানিতে কাজ করত সে। কারা, কেন তারে ধইরা নিয়া গেল, জানলাম না। তিনটা ছেলে নিয়া ওর বউটা বড় কষ্টে আছে।'

২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ থেকে নিখোঁজ হয় রফিকুল ইসলাম রাজা ও রনি চৌধুরীসহ চার তরুণ। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার বাসিন্দা রনির বাবা মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, 'অনেক জায়গায় খুঁজেও ছেলের কোনো সন্ধান পাইনি।' রাজার খালা জোসনা বেগম বলেন, 'রহস্যজনক ঘটনা। ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তি খুনের ঘটনায় ওদের আসামি করা হলো। এরপর চারজন নিখোঁজ। ২৬ দিন পর নাঈম ও নির্ঝর ফিরা আসছে। বাকি দুজনের খবর নাই। পুলিশও বলতাছে, তারা কিছু বাইর করতে পারে নাই।'

গত ৩ জুলাই রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করা হয় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত শিপব্রেকিং ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমকে। তাঁর 'শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ' ও 'তানহা স্টিল' নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ৫ জুলাই কুসুমের বড় ভাই জসিম উদ্দিন উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলাও করেছেন। তবে দেড় মাসেও কুসুমের হদিস মেলেনি। তাঁর স্ত্রী আফসানা নূর জুলি কেঁদে বলেন, 'দুইটা সন্তান নিয়ে আমি চরম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আপনারা একটু আমাকে খবর এনে দেন, আমার স্বামী কেমন আছে।'

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বারিধারা ও তেজগাঁও থেকে একযোগে গুম হন আটজন। তাঁদের মধ্যে সাজেদুল ইসলাম সুমন রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং আদনান স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। নিখোঁজ কাওসারের মা কমলা আক্তার বলেন, 'তাঁদের বাড়ি নেত্রকোনায়। তাঁর স্বামী বিল্লাল হোসেন সবজি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তিন সন্তানের মধ্যে মেজো কাওসার সংসারের হাল ধরতে শহরে আসে। এখন চরম কষ্টে আছি।' মাসুমের মা আয়শা আক্তার কেঁদে বলেন, 'আমার ছেলে সন্ত্রাসী না। ওরে কেন ধরেছে, কারা নিল?'

পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বোন নূসরাত জাহান লাবনী বলেন, তাঁর ভাই কখনো সরাসরি রাজনীতিতে জড়াননি। ২০১৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন আইন বিষয়ে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাস করে অপেক্ষায় ছিলেন মৌখিক পরীক্ষার জন্য। রাসেলকে হারিয়ে তাঁর মা-বাবা এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

নিখোঁজের তালিকা ঘেঁটে আরো অনেক সাধারণ মানুষের তথ্য মিলেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন- ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত এলাকা থেকে নিখোঁজ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রেজভি, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ তাঁর গাড়িচালক আনসার আলী; ৮ এপ্রিল সূত্রাপুর থেকে নিখোঁজ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী তারিব উদ্দীন আহমেদ; ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানপুর থেকে দোকান কর্মচারী রফিকুল ইসলাম; ২০১৩ সালের ২৪ মে পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার থেকে ব্যবসায়ী আয়নাল মোল্লা; ৮ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীরচরের আবদুল আজিজ লেনের বাসিন্দা সুলতান হাওলাদার; ২০১১ সালের ২ অক্টোবর দক্ষিণখানের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম; ৮ নভেম্বর সূত্রাপুরের ব্যবসায়ী মমিন হোসেন; ২৪ অক্টোবর রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও গোদাগাড়ীর পালপুর ধরমপুর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম। আরো নিখোঁজ হয়েছেন ২০১১ সালের ৮ এপ্রিল পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টার থেকে ব্যবসায়ী তাবির উদ্দিন আহমেদ রানা; ৩ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়ার কিছুক্ষণ হোটেলের সামনে থেকে টেইলারিং মাস্টার তপন দাস, ফার্মগেট থেকে ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজন, জহির রায়হান হিরণ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের ইউনুস মুন্সী, তাঁর মামাতো ভাই শেখেন মাতবর এবং তাঁদের এক ব্যবসায়িক পার্টনার; সাভারের কলমা এলাকার ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম স্বপন; চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার ঠিকাদার মোজাফফর আহমদ চৌধুরী; বরিশালে ঢাকার ব্যবসায়ী শহীদুর রহমান বাবুল; ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবর থেকে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা গোলাম মুর্তজা; গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মাহিম; ফরিদপুরের নগরকান্দার সোবহান, বরিশালের করিম কুটির এলাকার আলী হায়দার প্রমুখ।

মন্তব্য
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ

সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।

বিক্ষোভে তাঁদের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানে বলা হয়, চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি।

এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে বয়কটের ঘোষণাও দেয় তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

সরকারকে বিব্রত করতে এবং বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব অপকৌশল।

রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

একইভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া মিজু নামে আরেক শিক্ষার্থী সাভারের বাসিন্দা এবং তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে এসেছে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।

মন্তব্য
বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং

১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। 

অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।

২০২৩ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন তিন হাজার ২৩টি, ধর্ষণ পাঁচ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৭১৩টি। ২০২২ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন তিন হাজার ১২৬টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন তিন হাজার ২০৫টি। ২০২১ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন তিন হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯২৮টি। ২০২০ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০২টি, খুন তিন হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৫১৫টি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেএমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।

তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।

দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য একজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে ছেলের বউ রুবি ওষুধ আনার কথা বলে তার নিজের দুই সন্তান রেখে বাড়ির বাইরে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরেনি। তার যমজ শিশু দুটি নিজেদের ঘরের ভেতর যেতে ভয় পাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ পাওয়া যায়। 

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।

নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।

ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।

নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার  যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।

গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।

কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ