ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

খোকন রাজাকারের ফাঁসির দণ্ড

আশরাফ-উল-আলম ও রেজাউল করিম
আশরাফ-উল-আলম ও রেজাউল করিম
শেয়ার
খোকন রাজাকারের ফাঁসির দণ্ড
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। জাহিদ হোসেন এলাকায় খোকন রাজাকার নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টিই প্রমাণিত হয়েছে।
এসবের মধ্যে ছয়টিতে মৃত্যুদণ্ড এবং চারটিতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে খোকন রাজাকারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বা ট্রাইব্যুনাল অথবা অন্য কোনো আদালতে আত্মসমর্পণের পর এই রায় কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে। তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাহিদ হোসেন খোকন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি যোগ দেন বিএনপিতে। একাত্তরে তিনি ছিলেন স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার। দুটি ট্রাইব্যুনালে এ নিয়ে ১২টি রায় ঘোষণা করা হলো।
এর আগে আবুল কালাম আযাদ, কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুল আলীম, চৌধুরী মঈনুদ্দীন, আশরাফুজ্জামান খান, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলীর বিচারের রায় হয়েছে। রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে মোবারক আলী, এ টি এম আজহার ও সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মামলা।
রায় উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
সকাল ১১টায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন বিচারক এজলাসে ওঠেন। প্রথমে বিচারপতি আনোয়ারুল হক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পড়ে শোনান।
পরে বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন যেসব অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে সেগুলো পড়ে শোনান। শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পড়ে শোনান রায়ের মূল অংশ।
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ : ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, আসামি জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল মামলার বর্ণনা, সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রমাণিত প্রতিটি অপরাধের দায়ে পৃথক শাস্তি দিয়েছেন। রায়ে আরো বলা হয়, যেকোনো একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে বাকিগুলো কার্যকর করার প্রয়োজন নেই। এই শাস্তির বিরুদ্ধে আসামি ইচ্ছা করলে রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। তবে তাঁকে অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হতে বা আত্মসমর্পণ করতে হবে।
রায়ে বলা হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধে মূল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্য। তাদের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর নির্বাহী আদেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের সহযোগীদের বিচারে আইনগত কোনো বাধা নেই। এই সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন করা হয়। সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে এ বিচারের কথা বলা আছে। এ জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাস করা হয়। তাই রোমবিধি এখানে কোনো বাধা নয়।
রায়ে বলা হয়, জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিলেন বলে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি সেখানে রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তিনি এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই বছরের ৯ অক্টোবর খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৬ নারী-শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, দুজনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তর করা, দুটি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাত গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা এবং ২৫ জনকে নির্যাতনসহ ১১টি অভিযোগে খোকনকে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় মোট ২৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
যেসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড : খোকনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে। এসব অভিযোগে বলা হয় :
নম্বর পাঁচ. ১৯৭১ সালের ৩০ মে খোকন তাঁর বাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ে কোদালিয়া শহীদনগর গ্রামে প্রবেশ করেন। ওই সময় পাকিস্তানি সেনারা গ্রামের অনেক বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। ভেলুর ভিটা জঙ্গল থেকে ৫০-৬০ জনকে ধরে খোকন ও সেনারা লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করলে ১৬ নারী-শিশু নিহত হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আকরামুন নেছা (৪৫), রোকসানা আক্তার (১৮), রাবেয়া বেগম (৫০), হেলেনা আক্তার (১৫), হামেদা বেগম (২৫)। এ ছাড়া ওই দিন খোকন কোদালিয়া গ্রামের আফজাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেন।
ছয়. গণহত্যা, হত্যা, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগের এই অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ মে দুপুরে সশস্ত্র খোকনের নেতৃত্বে রাজাকাররা ঈশ্বরদী গ্রামে ঢোকে। তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারাও ছিল। তারা অনেক বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। লোকজন প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকলে খোকন ও সেনারা পলায়নরত সালাম মাতুব্বর, শ্রীমতী খাতুন, লাল মিয়া ও আ. মাজেদকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারা শিশু ফুলমতিকেও গুলি করে জখম করে।
সাত. ১৯৭১ সালের ৩১ মে খোকনের নেতৃত্বে রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শহীদনগর কোদালিয়া গ্রামের পাশে দিঘলিয়া-ঘোড়ারনারা বিলে যায়। তখন গ্রামের নিরীহ লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি করে। রাজাকাররা অসুস্থ পিজির উদ্দিনের বসতঘরসহ পার্শ্ববর্তী আফাজ ও সাদেকের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘর তিনটিতে পিজির, আফাজ ও সাদেক আগুনে পুড়ে মারা যান। আছির উদ্দিন মাতুব্বরকে গুলি করে হত্যা করেন খোকন। সফিজউদ্দিনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
আট. একাত্তরের ৩১ মে খোকনের নেতৃত্বে রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে গোয়ালদী গ্রামে নিয়ে যায়। ভয়ে নিরীহ জনগণ ছোটাছুটি করে। পলায়নরত বৃদ্ধ রাজেন্দ্রনাথ রায়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা হান্নান মুন্সি আড়াল থেকে দেখতে পান। গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু বুলু খাতুনকেও।
৯. ১৯৭১ সালের ৩১ মে খোকনের নেতৃত্বে রাজাকাররা একদল পাকিস্তানি সেনা নিয়ে পুড়াপাড়া গ্রামে ঢোকে। তারা রতন শেখ, বারেক মোল্লা, ছোট খাতুন ও সফিজউদ্দিন শেখসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে। এদের মধ্যে রতন শেখ ও ছোট খাতুনকে রাজাকার খোকন নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেন। তারা গ্রামের অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
১০. একাত্তরের ১ জুন খোকনসহ রাজাকাররা বাগাট চুড়িয়ারচর গ্রামে ঢুকে ফজলুল হকের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। অনেকের বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মালেক মাতুব্বর, মোশারফ মাতুব্বরসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমজাদ মুন্সিকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় মিনি বেগম ও তাঁর মা লুকানো অবস্থায় খোকনকে চিনতে পারেন। এ ছাড়া পলায়নরত রতন মাতুব্বর, আইয়ুব, মঞ্জু, রানীসহ ১০-১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজা : খোকনকে ২ ও ১১ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ড, ৩ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নম্বর দুই. এ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ৬ মের মধ্যে কোনো একদিন খোকন ও তাঁর বড় ভাই জাফরের নেতৃত্বে তাঁদের সহযোগীরা নগরকান্দা থানার জংগুরদী বাগুটিয়া গ্রামের কানাই লাল মণ্ডলসহ দুজনের ঘর পুড়িয়ে দেয়। পরে সবাইকে হুমকি দিয়ে বলে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে কানাই লাল মণ্ডলের পরিবার থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং জীবন দাশের পরিবার থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খোকনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তিন. ১৯৭১ সালের ১৬ মে থেকে ২৮ মে যেকোনো দিন খোকন ও জাফরের নেতৃত্বে রাজাকাররা একজন মৌলভীসহ জীবন দাশের বাড়িতে গিয়ে জীবন দাশসহ তাঁর চার ভাইকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে খোকনকে।
চার. ১৯৭১ সালের ২৭ মে খোকন ও জাফরের নেতৃত্বে রাজাকাররা চাঁদহাট গ্রামের হিন্দু এলাকা বণিকপাড়ায় গিয়ে জগন্নাথ দত্তের বাড়িতে ঢুকে তাঁর বাবা ভুবন মোহন দত্তসহ ১৬-১৭ জনকে ধরে ভয় দেখিয়ে জগন্নাথ দত্তের কাকি সুচিত্রার কাছ থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩২৮ ভরি রুপার অলংকার, রেডিও ও ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। তারা জগন্নাথ দত্তের বসতঘর ও মন্দিরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ঠাকুর দাশের স্ত্রী রাধা রানীকে ধর্ষণ করেন খোকন। হলধরদের মেয়ে খুকুমনিকেও তিনি ধর্ষণ করেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খোকনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
১১. ১৯৭১ সালের ১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত খোকন রাজাকার দলবল নিয়ে জংগুরদী বাগুটিয়া গ্রামে গিয়ে কানাইলাল মণ্ডলদের বাড়িতে ঢুকে কানাইলালকে আটক করেন। রাজাকার খোকন নিজের হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে কানাইয়ের বুকে গুলি করেন। কানাই কাত হয়ে রাস্তার ওপর মাটিতে পড়ে যাওয়ায় গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তাঁর ডান হাতে লাগে। এ অভিযোগে আসামিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যে অভিযোগ থেকে খালাস : খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে আনা ১ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন আসামি। ওই অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী খোকন ও তাঁর বড় ভাই নগরকান্দা শান্তি কমিটির সদস্য জাফরের নেতৃত্বে তাঁদের অন্য সহযোগীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নগরকান্দা থানার বনগ্রামে প্রবেশ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধা আ. হাই মোল্লা, নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ ছয়জনের ছয়টি বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে। ছাত্তার মোল্লা ও আজিজ শেখকে মারধর করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৭ জনকে নগরকান্দা থানায় নিয়ে দুই দিন নির্যাতন করার পর খোকন রাজাকার ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। এই অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।

এ সময় সেখানে আরো অন্তত চারজনকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলতে শোনা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

বেশির ভাগ রোগীর শরীরে কাঁপুনি, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, ঠাণ্ডা, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।

উপসর্গে মিল থাকায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না যে আসলে কোনটিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। জ্বর, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু ও কভিড পরীক্ষাও করাতে হবে। সময়মতো রোগ নির্ণয় হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র‌্যাশএসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।

 

জ্বর কেন হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াএসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।

ডা. লেলিন আরো বলেন, এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র‌্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মন্তব্য

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।

সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।

২০ থেকে ২৫ জন জুলাই যোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারীদের অভিযোগ, দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়ার কথা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে তিন-চারবার ঘোরানো হয়েছে। টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছিল গতকাল। 

তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।

ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।

ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।

গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?

সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।

তাঁদের রাগের একটা প্রেক্ষাপট আছে। তাঁদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা উত্তেজিত, অবসাদগ্রস্ত। তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটি নিয়ে হতাশার মধ্যে আছেন। সে কারণে তাঁরা হয়তো ভাঙচুর করেছেন।

এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য
প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।

এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

এ ছাড়া গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গ্রহণযোগ্য বলে সাফাই গেয়েছিলেন, সেসব পক্ষপাতদুষ্ট পর্যবেক্ষককে এবার অনুমোদন দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহারও রোধ করতে চায়।

নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।

কারণ কানাডার গত বছরের নির্বাচনেও তাদের এটা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাদের পরামর্শ চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বিভিন্ন দেশের মতো কানাডার পূর্ণ সহায়তা পাব।
আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কনফিডেন্ট।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।

সিইসি বলেন, কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।

নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি নাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি নো। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।

বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।

সিইসি বলেন, ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়নএসবসহ।

গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেনভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়। আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মন্তব্য
মিডিয়াকে হুমকি

ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

মিডিয়াকে হুমকি দেওয়া সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে সহায়ক নয়।

বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ