<p style="text-align:center"><strong>দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক মর্যাদা</strong></p> <p style="text-align:center"><strong>সৃজনশীল প্রশ্ন</strong></p> <p> </p> <p><strong>উদ্দীপকটি পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :</strong></p> <p>রাহেলা ‘বর্তমানে বাল্যবিয়ের প্রতি গ্রামবাসীর মনোভাব’ এ বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ পর্যায়ে সে প্রথমে গবেষণার সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে তার গবেষণা শেষ করল।</p> <p>ক) গবেষণা পদ্ধতি কী?</p> <p>খ) ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলতে কী বুঝায়?</p> <p>গ) রাহেলা গবেষণার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকে রাহেলা গবেষণাকাজে যে পর্যায়গুলো প্রয়োগ করেছে—তা বিশ্লেষণ করো।</p> <p><strong>উত্তর :</strong></p> <p>ক) গবেষণাকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করা হয় তাকে গবেষণা পদ্ধতি বলে।</p> <p>খ) অতীতকালে সামাজিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করার পন্থাকেই সমাজ গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে।</p> <p>এ পদ্ধতিতে অতীত সমাজের গবেষণা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সমাজের পটভূমি, প্রকৃতি ও ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞানানুসন্ধান। ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে গবেষক সমাজ গবেষণার বিভিন্ন প্রকাশিত গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, গবেষণা রিপোর্ট, সরকারি দলিল ইত্যাদির সাহায্য নেন। বস্তুত ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে সমাজ গবেষণা করতে গেলে গবেষককে Secondary source-এর ওপর নির্ভর করতে হয়।</p> <p>গ) রাহেলা গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।</p> <p>বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বিজ্ঞানের ভিত্তি। বিজ্ঞানী যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার বিষয় নির্ধারণের পর নির্ধারিত বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যগুলোর শ্রেণিবিন্যাস, কল্পনা প্রণয়ন এবং তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যার ভিত্তিতে একটি সাধারণ সূত্রে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। উদ্দীপকে রাহেলা গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করেছে। আর তা হলো ‘বর্তমানে বাল্যবিয়ের প্রতি গ্রামবাসীর মনোভাব’। সে প্রথমে গবেষণার সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে তার গবেষণা শেষ করে, যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, রাহেলা তার গবেষণাকাজ সম্পাদনের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকে রাহেলা গবেষণাকাজে যে পর্যায়গুলো প্রয়োগ করেছে, তাহলো—সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে গবেষণা শেষ করা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো গবেষণার জন্য সমস্যা বা বিষয় নির্বাচন। যেমন—মাদকাসক্তি, যৌতুক, বাল্যবিয়ে ইত্যাদি এক একটি গবেষণার বিষয় হতে পারে।</p> <p>বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর হলো—সমস্যার সংজ্ঞায়ন। নির্বাচিত সমস্যাটিকে সূক্ষ্মভাবে চরিত্রায়ন ও গবেষণার উপযোগী সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। গবেষণা সমস্যার মধ্যকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে গবেষণা সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই হলো অনুসিদ্ধান্ত বা কল্পনা।</p> <p>অনুসিদ্ধান্ত গঠন করার পর তা প্রাপ্ত তথ্যাবলির দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কি না সেটা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন। তথ্য সংগ্রহ করার পর গবেষককে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে হয়।</p> <p>অবশেষে কল্পনাটি যদি তথ্য দ্বারা সমর্থিত হয়, তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে। বস্তুত ভবিষ্যদ্বাণী গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়। অবশ্য গৃহীত অনুসিদ্ধান্তের বিপরীত সিদ্ধান্তও আসতে পারে।</p> <p>সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সব গবেষককে একটি নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে গবেষণাকাজ সম্পাদন করতে হয়।</p>