<p style="text-align: center;"><strong>অনুধাবনমূলক প্রশ্ন</strong></p> <p>১। ‘সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান’ ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : যে বিজ্ঞান সমাজকে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করে অধ্যয়ন করে, তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। তাই সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানে গোটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা থাকে বলে সমাজবিজ্ঞানকে বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান শুধু সমাজের প্রপঞ্চ বা ঘটনাবলির আলোচনাই করে না, বরং ওই ঘটনাগুলোর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের প্রচেষ্টাও চালায়। এ ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী বিচার-বিশ্লেষণের সহায়তা নেওয়া হয়। তাই সমাজবিজ্ঞানকে একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা যায়।</p> <p> </p> <p>২। সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ বলা হয় কেন?</p> <p>উত্তর : সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত একটি বিজ্ঞান। আমরা জানি পারস্পরিক সম্পর্কের ফলেই সমাজের সৃষ্টি। তাই সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ, কার্যাবলি, রীতিনীতি, কিভাবে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং কিভাবে এর চলমানতা বজায় থাকে, তা নিয়ে অধ্যয়ন করতে গিয়ে গোটা সমাজের মধ্যেই এর অনুসন্ধান করতে হয়। এ জন্য সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ বলা হয়।</p> <p> </p> <p>৩। সমাজবিজ্ঞান কি একটি বিজ্ঞান? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয়। তবে তা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি তথা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। সে দৃষ্টিতে এটিও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার। বিজ্ঞান হলো কোনো বিষয় সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সুসংবদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার। সমাজবিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো তথ্যের যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুসংহত জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায়, যা মূলত বিজ্ঞানভিত্তিক। তাই এ অর্থে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা চলে।</p> <p> </p> <p>৪। মার্ক্স মানবসমাজের ইতিহাসকে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস বলেছেন কেন?</p> <p>উত্তর : মার্ক্স মানবসমাজের ইতিহাসকে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস বলেছেন। কারণ পৃথিবীর শুরু থেকেই দুটি শ্রেণির দ্বন্দ্ব লক্ষ করা গেছে, যাদের দ্বন্দ্বের কারণে নতুন নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে। মার্ক্স সমগ্র মানবসমাজকে ১২টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তার প্রথমভাগে দাস ও দাস-মালিক দ্বন্দ্ব, দ্বিতীয় ভাগে ভূমি মালিক ও ভূমিদাস দ্বন্দ্ব, তৃতীয় ভাগে পুঁজিবাদী শ্রেণি ও শোষিত শ্রেণি, শেষ ভাগে এশিয়াটিক উৎপাদন পদ্ধতি, যেখানে মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম বিদ্যমান, যার কারণে মার্ক্স সমগ্র সমাজকে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস বলেছেন।</p> <p> </p> <p>৫। সামাজিক জরিপ পদ্ধতির স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : সামাজিক জরিপ সামাজিক অনুসন্ধানের একটি পদ্ধতি। জরিপ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সরেজমিনে দেখা, পরিমাপ বা নিরূপণ করা। অর্থাৎ কোনো সমাজের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন কৌশলে তথ্যাবলি সংগ্রহ, তথ্যাবলির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে জরিপ পদ্ধতি। বস্তুত জরিপ পদ্ধতির সাহায্যে কোনো একটি বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র লাভ করা সম্ভব।</p> <p> </p> <p>৬। ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?</p> <p>উত্তর : অতীত ঘটনার বস্তুনির্ভর, অনুসন্ধানমূলক বিস্তৃতি এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত লিখিত বিবরণই ইতিহাস। আর ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে অতীত ঘটনা সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর গবেষণা প্রচেষ্টাকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া ও প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পাঠ করা হয়। সমাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়াসে অনেক প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ঐতিহাসিক পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁত, কার্ল মার্ক্স ও ম্যাক্স ওয়েবারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।</p> <p> </p> <p>৭। স্পেন্সার কিভাবে সমাজকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন? ব্যাখ্যা করো?</p> <p>উত্তর : হার্বার্ট স্পেন্সার সাদৃশ্য স্থাপনের মাধ্যমে সমাজকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।</p> <p>স্পেন্সারের মতে, প্রতিটি সমাজ হলো জীবদেহের মতো একটি চলমান সত্তা। প্রতিটি জীব যেমন তার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ দ্বারা সম্পর্কিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহকে সচল রাখে, তেমনি সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্নমুখী কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজকে টিকিয়ে রাখে।</p> <p> </p> <p>৮। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টবাদী স্তর সম্পর্কে ধারণা দাও।</p> <p>উত্তর : অগাস্ট কোঁত মানব জ্ঞানের বিকাশকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন। যথা—</p> <p>১) ধর্মতাত্ত্বিক স্তর</p> <p>২) অধিবিদ্যাগত স্তর</p> <p>৩) দৃষ্টবাদী স্তর</p> <p>অগাস্ট কোঁত বর্ণিত সমাজ বিকাশের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে দৃষ্টবাদী স্তর। তিনি জাগতিক ও সামাজিক কোনো কিছুকে ব্যাখ্যা করার জন্য দৃষ্টবাদ তত্ত্বটির অবতারণা করেন। দৃষ্টবাদ পর্যায়ের সমকালীন সমাজ হলো শিল্প সমাজ।</p> <p>শিল্প সমাজে শিল্পপতি ও বৈজ্ঞানিকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। সমাজ নিয়ন্ত্রিত হবে বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা ও নীতি অনুযায়ী। অর্থাৎ এই সমাজব্যবস্থায় যাজক-পুরোহিতের স্থান দখল করবে শিল্পপতি, বৈজ্ঞানিক ও টেকনোক্র্যাটরা। তাঁরাই এই সমাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন।</p> <p> </p> <p>৯। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ট্যাবু কিভাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ট্যাবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।</p> <p>ট্যাবুর পেছনে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের প্রশ্ন জড়িত। আদিম সমাজে ট্যাবু ছিল বিশেষভাবে অত্যন্ত কার্যকর। বিচিত্র ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারী আদিম জনগোষ্ঠী যখন বিশ্বাস করেছে, এ কাজ করলে তাদের শিকার মিলবে না, রোগ-মহামারিতে জীবন নাশ হবে, ফসলের ক্ষতি হবে বা গোষ্ঠী হিসেবে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, তখন তারা সেই সব কাজের ওপর ট্যাবু আরোপ করত। এভাবে ট্যাবু ব্যক্তির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ তথা সামাজিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখত।</p> <p> </p> <p>১০। ‘সামাজিক স্তরবিন্যাস সর্বজনীন’—ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : কিংসলে ডেভিস ও উইলবার্টের মতে, কোনো সমাজই শ্রেণিহীন ও স্তরহীন নয়। তাই স্তরবিন্যাস সর্বজনীনভাবে সর্বত্র সত্য ও বাস্তব।</p> <p>প্রাচীন সমাজে, আধুনিক সমাজে, কৃষি সমাজে, পুঁজিবাদী সমাজে, এমনকি সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়ও এর অস্তিত্ব দেখা যায়। অর্থাৎ এমন কোনো সমাজব্যবস্থা নেই যেখানে সামাজিক স্তরবিন্যাস পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি আমাদের বাংলাদেশের সমাজেও স্তরবিন্যাসের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। তাই বলা যায়, সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সর্বব্যাপী বিষয়।</p> <p> </p> <p>১১। ‘দাস প্রথার ভিত্তি অর্থনৈতিক’—ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : দাস প্রথার ভিত্তি অবশ্যই অর্থনৈতিক। সমাজে দাস প্রথা আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে দাসের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল একটি অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। দাসদের অমানবিক পরিশ্রমের ফলেই আজ ইউরোপীয় দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে এত শক্তিশালী হতে পেরেছে।</p> <p> </p> <p>১২। ‘লিঙ্গ সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক বা উপাদান’—ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : নারী ও পুরুষের মধ্যে জীববিজ্ঞানের নিয়মে যে যে পার্থক্য, তাকে লিঙ্গ বলা হয়। এই লিঙ্গ পার্থক্যের কারণেই মানবজাতির দুই অংশের একটি পুরুষ এবং অন্যটি নারী। প্রাকৃতিক কারণে এই অসমতার উদ্ভব হলেও সমাজ জীবনের ক্ষেত্রে এর একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। পুরুষ ও নারীর লিঙ্গ ভেদাভেদের দোহাই দিয়ে সমাজ নারী ও পুরুষের কাজের ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করে পুরুষ প্রাধান্য সৃষ্টি করে।</p> <p>ধীরে ধীরে পুরুষশাসিত সমাজের উদ্ভব হয়। পুরুষরা হয়ে পড়ে নারীর অভিভাবক এবং নারীর সব কাজের</p> <p>কৈফিয়ত গ্রহণকারী। তাই বলা যায়, লিঙ্গ সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক বা উপাদান।</p>