<p>শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন উৎসাহিত করতে সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। একে বন্ড সুবিধা বলা হয়। দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বিশেষ কিছু শর্তে বন্ড সুবিধা দেওয়া হয়। এই সুবিধায় বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে কাঁচামাল এনে নিজস্ব বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রেখে পুরোটাই সংশ্লিষ্ট কারখানায় ব্যবহার করার কথা। কোনোভাবেই এসব পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই সরকারের এসব বাধ্যবাধকতা মানে না। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দারা গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের একটি তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গুদামে তল্লাশি চালিয়ে অননুমোদিতভাবে মজুদ করা ১৯০ টন উন্নতমানের শার্টিং-স্যুটিং কাপড় জব্দ করেছেন। এ কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করা হয়েছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযোগ। জব্দ করা কাপড়ের বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বিনা শুল্কে আমদানি করা এসব কাপড় দিয়ে হাসপাতালের ইউনিফর্ম তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার কথা থাকলেও সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ওই গুদামে অবৈধভাবে মজুদ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বিধিনিষেধ না মেনে বন্ড সুবিধার আওতায় আনা মালামাল বিনা শুল্কে আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। ফলে দেশের শিল্পে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তৈরি হয় অসম প্রতিযোগিতা। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করছে—এমন অভিযোগ আছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অস্তিত্বহীন অনেক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উৎপাদনে থাকা পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানির নামে টাকা পাচার করেছে—এমন তথ্যও এর আগে এনবিআরের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এনবিআরের এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে এক হাজার ৬৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে, যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে। ব্যবস্থা হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন অকার্যকর করে তালিকা পাঠানো হয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সব বন্দর, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাস, স্বরাষ্ট্র, আইন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। অভিযুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করে জাল কাগজপত্র তৈরি করে তা ব্যাংক ও এনবিআরে জমা দিয়েছে।</p> <p>যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা করছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজ করতে উদ্যোগী হবে না। একই সঙ্গে দেশের শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।</p>