<p>সড়কপথে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। মহাসড়কে ডিভাইডার তৈরি হয়েছে। শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করেও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে চালকদের কারণে। শনিবার সকালে ঢাকা-কুমিল্লা সড়কের দুর্ঘটনার জন্য চালককেই দায়ী করেছেন বাসের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। বেপরোয়া গতির যানবাহন ও অদক্ষ চালকের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অনেক দুর্ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসে না।</p> <p>অভিযোগ আছে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্সধারী চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। দেশের বেশির ভাগ গাড়িচালকের যে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশিক্ষিত না হয়েও স্বশিক্ষিত চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা। গাড়ি চালানোর মতো পেশায় দক্ষতার পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতাও থাকতে হয়। মহাসড়কে যেসব চালক আন্তজেলা বাস বা ট্রাক চালান, তাঁদের শারীরিক সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ। একজন চালক দীর্ঘপথ গাড়ি চালিয়ে আসার পর আবার ট্রিপ ধরে চলে যান। বিশ্রামের কোনো সুযোগ থাকে না। এভাবে টানা গাড়ি চালাতে গিয়ে শরীরে ক্লান্তি ভর করারই কথা। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে এ কারণেই। চালক বাস চালাচ্ছিলেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। যাত্রীরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে বললেও তিনি তা শোনেননি। বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ছয়টি দরিদ্র পরিবার অসহায় অবস্থায় পড়েছে। বাসের চালক ও তাঁর সহকারী পলাতক। হয়তো একদিন সাক্ষীর অভাবে মামলাটিও চাপা পড়ে যাবে। বাসটি আবার চলতে শুরু করবে মহাসড়কে। এই চালকই হয়তো বাসটি চালাবেন।</p> <p>সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহনই চলাচলের অযোগ্য। অদক্ষ চালক, চলাচল অনুপযোগী গাড়ি, নজরদারিতে ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি বা অসাধুতার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যানবাহন ও যাত্রী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। নিয়ন্ত্রণে জোরদার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইনের দুর্বলতা ও মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে আছে দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি শ্লথগতির বাহন।</p> <p>সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রশিক্ষিত চালক নিশ্চিত করার পাশাপাশি চলাচলের অনুপযুক্ত যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।</p>