<p>স্মরণশক্তি কম থাকাজনিত সমস্যা অনেকেরই থাকে, বিশেষ করে বয়স হলে তো কথাই নেই। অনেকে আবার সুস্থ ও তীক্ষ মস্তিষ্ক নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন, শেষ দিনটি পর্যন্ত মেধা আর অটুট স্মৃতিশক্তি নিয়ে কাজ করে যান। তবে তীক্ষ মেধা, অটুট স্মরণশক্তি মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হলেও এগুলো অক্ষুণ্ন্ন রাখতে কিছু করণীয় আছে।</p> <p> </p> <p>স্মৃতিশক্তি কমার কারণ</p> <p>মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে গেলে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা করার স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। দেহের কোষগুলোয় শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া। এসব জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষগুলোতে কিছু ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়। এ যৌগগুলো কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং একপর্যায়ে কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলে। ফলে আমরা বার্ধক্যের পথে এগিয়ে যাই।</p> <p>একই ব্যাপার মস্তিষ্কের কোষগুলোতেও ঘটে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কোষগুলোও বুড়িয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ক্ষমতা। স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। এ ছাড়া কোনো কারণে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যায়। হৃৎপিণ্ড থেকে ২০ শতাংশ রক্ত সরাসরি মস্তিষ্কে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল বা অন্য কোনো কারণে ধমনির প্রাচীর সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। হূদরোগীরা সাধারণত ভুলোমনা থাকে। একই কারণে স্ট্রোক করলে মানুষের স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তি দারুণভাবে কমে যায়।</p> <p> </p> <p>দুশ্চিন্তা নয়</p> <p>দুশ্চিন্তা বা টেনশন মানুষের ‘অ্যাড্রেনাল’ গ্রন্থি থেকে ‘গ্লুকোকরটিকয়েড’ নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে। এই হরমোন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে দ্রুত আক্রান্ত করে কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার। সুস্থ মস্তিষ্ক আর শাণিত মেধা নিয়ে বেঁচে থাকুন দীর্ঘদিন।</p> <p> </p> <p>চিন্তা করুন ইতিবাচক</p> <p>নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিকতা মন ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে।</p> <p>ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করুন</p> <p>ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের চরম শত্রু। মানুষ যখন রেগে যায়, তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ক্রোধ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।</p> <p> </p> <p>মেডিটেশন করুন</p> <p>নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন, যোগব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এই অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও তথ্য ধারণক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন, ধ্যান, যোগব্যায়াম চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।</p> <p> </p> <p>পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন</p> <p>সারাক্ষণ কাজ মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। আর এই ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমান। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে।</p> <p> </p> <p>অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি খান</p> <p>কোষের ক্ষতিকর জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ক্ষতিকর যৌগগুলোকে ভেঙে ফেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। ফলে কোষগুলো থাকে কর্মক্ষম আর তারুণ্যদীপ্ত। তা ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শিরা-ধমনির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, হূদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা হৃৎপিণ্ড সচল ও মগজ চনমনে রাখতে সহায়তা করে। মূলত ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’ হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ভিটামিন। দুধ, কলিজা, সয়াবিন, সবুজ শাকসবজি, ফলমূলে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।</p> <p> </p> <p>পরিমিত প্রাণিজ আমিষ</p> <p>প্রাণিজ আমিষে শরীরে ‘হিমোসিস্টিন’ নামের এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হিমোসিস্টিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াও বেড়ে যায়, যা ধমনির প্রাচীরে জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই প্রাণিজ আমিষ পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়।</p> <p>এ ছাড়া খেতে হবে পালংশাক, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। পাশাপাশি ফলিক এসিড, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, বি-১২ ইত্যাদিও খান। সয়াবিন, রসুন ইত্যাদি রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এতে ধমনির মধ্যে রক্ত চলাচল সুষ্ঠু হয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো সচল থাকে।</p> <p>লেখক : আবাসিক চিকিৎসক</p> <p>বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p> </p>