<p>পেসমেকার এক ধরনের ডিভাইস যেটি অনিয়ন্ত্রিত হৃত্স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের হৃত্স্পন্দন কমে গেলে তা বাড়ানোর জন্য পেসমেকার লাগানো হয়। এতে একটি লিথিয়াম ব্যাটারি লাগানো থাকে। এটি হৃৎপণ্ডের সঙ্গে শিরার মধ্য দিয়ে তার দ্বারা সংযুক্ত থাকে। কলারবোনের কাছে, বুকের ত্বকের নিচে পেসমেকারটি অপারেশনের মাধ্যমে বসানো হয়, যা পাতলা কয়েকটি তারের সঙ্গে হার্টে যুক্ত থাকে।</p> <p> </p> <p><strong>যখন দরকার হয়</strong></p> <p>♦ হার্টবিট (হৃত্স্পন্দন) যদি স্বাভাবিকের থেকে কম হয়। হৃৎপণ্ডের গতি যেসব কারণে কমে যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো সিক সাইনাস সিনড্রোম এবং ডিজেনারেটিভ কমপ্লিট হার্ট ব্লক। এ ছাড়া ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, হার্টে অপারেশন, জন্মগত ত্রুটি, হার্টে প্রদাহ ইত্যাদি কারণে হৃৎপণ্ডের স্পন্দন অস্বাভাবিক কমে যেতে পারে।</p> <p>♦ হার্টবিট যদি অনিয়মিত বা বেশি হয়।</p> <p> </p> <p><strong>হৃত্স্পন্দন কমার লক্ষণ</strong></p> <p>হৃৎপণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দনের গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৯০ বার। কিন্তু হৃৎপণ্ডের এই গতি কমে যেতে পারে। তখন মাথা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরানো, চোখে শর্ষে ফুল দেখা, বুক ধড়ফড় করা, দুর্বল বোধ, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>গঠন ও কর্মপদ্ধতি</strong></p> <p>একটি লিথিয়াম ব্যাটারি, কম্পিউটারাইজড জেনারেটর ও শীর্ষে সেন্সরযুক্ত কতগুলো তার নিয়ে একটি পেসমেকার গঠিত। সেন্সরগুলোকে ইলেকট্রোড বলে। পেসমেকারে অপরিবাহী আবরণযুক্ত এক থেকে তিনটি তার থাকে। পেসমেকারের তারকে বলে লিড।</p> <p> </p> <p><strong>ধরন</strong></p> <p>হৃৎপণ্ডের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে তার প্রবেশের ধরন অনুযায়ী পেসমেকার তিন রকম।</p> <p><strong>এক-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার :</strong> এ ধরনের পেসমেকারে একটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে হৃৎপণ্ডের শুধু ডান অ্যার্টিয়াম বা ডান ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে।</p> <p><strong>দ্বি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার :</strong> এ ধরনের পেসমেকারে দুটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে হৃৎপণ্ডের দুটি প্রকোষ্ঠে অর্থাৎ ডান অ্যার্টিয়াম ও ডান ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে।</p> <p><strong>ত্রি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার :</strong> এ ধরনের পেসমেকারে তিনটি তার থাকে, যার একটি জেনারেটর থেকে ডান অ্যার্টিয়ামে, আরেকটি ডান ভেন্ট্রিকলে এবং অন্যটি বাঁ ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। এটি অত্যন্ত দুর্বল হৃৎপশির হৃৎপণ্ডে স্থাপন করা হয়। পেসমেকার এ ক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকল দুটিকে সংকোচন ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে রক্তপ্রবাহে উন্নতি ঘটায়।</p> <p> </p> <p><strong>যেভাবে কাজ করে</strong></p> <p>হার্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনবোধে পেসমেকার তাত্ক্ষণিকভাবে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে হার্টের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং হৃৎপণ্ডের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় এলে পেসমেকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে হার্টকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে সাহায্য করে। পেসমেকার থাকাকালে হার্ট তার আপন গতিতে চলে।</p> <p> </p> <p><strong>পরামর্শ   </strong></p> <p>♦ পেসমেকার অপারেশনের স্থান নখ দিয়ে চুলকানো এবং পেসমেকার হাত দিয়ে চাপ দেওয়া বা নাড়াচাড়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।</p> <p>♦ হৃদযন্ত্রের গতি অনিয়মিত হলে বা কমে গেলে এবং পেসমেকার লাগানোর আগের অসুবিধাগুলো আবার দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো হৃদরোগ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।</p> <p>♦ বুকের যে পাশে পেসমেকার বসানো হয়েছে সেদিকের কানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ঠিক না।</p> <p>♦ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র (এমআরআই মেশিন, মেটাল ডিটেক্টর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি) থেকে দূরে থাকা উচিত।</p> <p>♦ পেসমেকার স্থাপনের পর প্রথমে এক মাস, তিন মাস, ছয় মাস এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর একবার চেকআপের জন্য নির্ধারিত স্থানে যোগাযোগ করতে হয়।</p> <p>♦ যাদের পেসমেকার লাগানো হয়েছে তারা সব সময় একটি পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখলে ভালো, যাতে অন্যরা বুঝতে পারে যে শরীরে পেসমেকার বসানো আছে।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক :</strong> ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও ইলেকট্রো ফিজিওলজিস্ট</p> <p>জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি)</p> <p> </p>