<p>মানবদেহে কয়েকটি স্থানে পাথর হয়। যেমন—কিডনি, মূত্রনালি, পিত্তথলি (পিত্তনালি ও লিভারের ভেতরে), অগ্ন্যাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি।</p> <p>যে পাথর হয় সে পাথরের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, অক্সালেট, সাইট্রেট-অক্সালেট, ফসফেট ইত্যাদি। যা শরীরের রক্ত থেকেই আসে। সাধারণত এসব উপাদানের মাত্রা যদি রক্তে বাড়তি থাকে, তবে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ পাথরগুলো কখনো নরম হয়, অনেক সময় সত্যিকারের পাথরের মতো শক্তও হয়ে থাকে। অনেক সময় কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে, যার কারণে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হয়।</p> <p><strong>মূত্রনালিতে সাধারণত কয়েকটি কারণে পাথর হয়।</strong></p> <p>♦          ইনফেকশনজনিত রোগ</p> <p>♦          মূত্রনালি চিকন হয়ে যাওয়া</p> <p>♦          পাথর এসে নালিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া</p> <p>♦          টিউমার</p> <p>♦          পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হলেও প্রস্রাবের পথ বন্ধ হতে পারে বা সরু হতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>পাথর কেন হয়?</strong></p> <p>এখন পর্যন্ত পাথর হওয়ার সব কারণ বের করা যায়নি। তবে নিচের কারণগুলোতে পাথর বেশি হয়</p> <p>♦          রক্তে বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি</p> <p>♦          থাইরয়েডগ্রন্থির অসুখ। যেমন—হাইপার থাইরয়ডিজম </p> <p>♦          বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণ</p> <p>♦          দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, অস্থিমজ্জা, ছোট মাছ, কলিজা, মগজ, শিমের বীজ, বাঁধাকপি, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, কামরাঙা ও কিছু মাটির নিচের খাদ্যদ্রব্য বেশি খাওয়া</p> <p>♦          মূত্রতন্ত্রে ঘন ঘন ইনফেকশন ও সময়মতো তার চিকিৎসা না করা।</p> <p>♦          জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত কারণ। যেমন—মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের পাথর বেশি হয়।</p> <p> </p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>মূত্রনালিতে পাথর হলে এটা কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাধারণত যা থাকে—</p> <p>♦          যেদিকে পাথর হবে সেদিকের কিডনিতে ব্যথা অনুভব হবে এবং নিচের দিক থেকে প্রস্রাবের নল পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে যাবে।</p> <p>♦          প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা করবে।</p> <p>♦          বারবার প্রস্রাবের অনুভূতি হবে।</p> <p>♦          বমি বা বমি বমি ভাব হবে।</p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p>মূত্রনালিতে ছোট্ট পাথর বা চার মিলিমিটারের ছোট পাথর হলে সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গে তা বের হয়ে যায়। পাথর বড় হলে বা মূত্রনালি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হলে দ্রুত অপারেশন করতে হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে (আইসিপিএল) লেজার, ল্যাপারোস্কপিক বা কেটে অপারেশন করা যায়। কিভাবে অপারেশন হবে তা নির্ভর করছে কিডনির নলের পাথর কত মিলিমিটার এবং রোগীর বয়স ও শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।</p> <p>♦          নালি চিকন হলে যন্ত্রের মাধ্যমে মোটাকরণ বা মুখের ভেতরের চামড়া এনে লাগানো যায়।</p> <p>♦          পাথর বা টিউমার হলে যন্ত্রের মাধ্যমে অপসারণ করা যায়।</p> <p>♦          পুরুষদের প্রোস্টেট বড় হলে টিইউআরপি পদ্ধতিতে সার্জারি করা যায়।</p> <p>♦          নারীদের জরায়ু নিচে নেমে গেলে প্রস্রাবের পথ বাধাগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে জরায়ু অপসারণ করলে রোগী সুস্থ হতে পারেন। </p> <p> </p> <p><strong>সার্জারির প্রস্তুতি</strong></p> <p>সাধারণত স্পাইনাল বা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে অপারেশনের জন্য কিডনির পরীক্ষাসহ ডায়াবেটিস, বুকের এক্স-রে, ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাফি, প্রস্রাবের কালচারসহ কিছু হরমোন টেস্ট করা হয়।</p> <p>সাধারণত অপারেশনের আগে ছয় থেকে আট ঘণ্টা খালিপেটে থাকতে হবে।</p> <p>সহযোগী অধ্যাপক</p> <p>জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল</p>