ধুলার শহর ঢাকা, আমি তোমায় ভালোবাসি

&lt;p&gt;মানুষ মুখোশ ব্যবহার করে নিজের চেহারা লুকাতে। সেটা কোনো উৎসবের বিশেষ প্রয়োজনে হতে পারে, আবার কোনো দুষ্কর্ম ঢাকতেও হতে পারে। কখনো কখনো মুখোশ প্রতীকী অর্থ ধারণ করে। কিন্তু ঢাকা শহরে এখন আমাদের মুখোশ পরতে হয় নিতান্তই বাধ্য হয়ে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় একটা স্লোগানসহ মুখোশ পরা ছবি খুব আলোচিত হয়েছিল, সেখানে লেখা ছিল&mdash;&lsquo;এ মুখোশ লজ্জার&rsquo;। কারণ এই মুখোশ পরতে হয়েছিল দূষণের কারণে। অথচ এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। দিল্লির মতো শহর তার পত্তনের কাল থেকেই এ রকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। দিল্লির ধুলা যে প্রথম থেকেই ছিল, তা বিনয় ঘোষের &lsquo;বাদশাহী আমল&rsquo; বইয়ে একটা মজার বর্ণনায় উঠে এসেছে। তিনি ঘটনার বর্ণনা করেছেন, তখন সম্রাট শাহজাহান তাঁর নতুন রাজধানী দিল্লি তৈরি করছেন। তো, সেখানে পারস্যের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত আছেন। তখন সম্রাট রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞেস করলেন, দিল্লি আর ইস্পাহান&mdash;দুই শহরের মধ্যে তুলনা করলে কোনটা ভালো? তখন পারস্যের রাষ্ট্রদূত বললেন, &lsquo;বিল্লা বিল্লা! দিল্লির ধুলার সঙ্গেই তো ইস্পাহানের কোনো তুলনা হয় না।&rsquo; সম্রাট শাহজাহান খুব খুশি হলেন দিল্লির এত বড় প্রশংসা শুনে। কিন্তু রাষ্ট্রদূত আসলে দিল্লির অতিরিক্ত ধুলার দিকে ইঙ্গিত করে তার সঙ্গে ইস্পাহানের কোনো তুলনাই হয় না বললেন। দিল্লি ধুলার শহর প্রথম থেকেই। সেই ধুলা দূর করতে নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও দিল্লি অন্যতম দূষিত নগরী। কিন্তু ধুলার সঙ্গে ঢাকার মিতালিটা খুব বেশি দিনের নয়। আশি-নব্বইয়ের দশকেও ঢাকা এত ধূলিধূসর ছিল না।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;প্রাকৃতিকভাবে ঢাকার যে গঠন ও ভূমিরূপ, তাতে তার ধূলিময় হওয়ার কোনো কারণ নেই। ঢাকার চারপাশ ঘিরে রয়েছে চারটি নদী&mdash;বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু। এর মাটিও বালুপ্রধান নয়। সে ক্ষেত্রে এর এই অবস্থা কেন? কেন ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান লাভ করবে ওপরের দিকে? বরং যদি নদীগুলোর নাব্যতা ধরে রাখা যেত, যদি তাকে কেন্দ্র করে এখানকার যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠত, শুধু নদীপথে নয়, সড়কপথেও যদি নদীর অবস্থান অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হতো, তাহলে ঢাকা হতে পারত চিরবসন্তের শহর। কিন্তু তা না করে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত বিকাশ আর দখল-দূষণের ফলে ঢাকার নদীগুলোকে ঘোষণা করতে হয় প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা। সেই সংকটাপন্ন এলাকায় যা যা করার কথা নয়, তার সবই করা হচ্ছে। ফলে যে শহরের সবচেয়ে বাসযোগ্য হওয়ার কথা ছিল, তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বসবাসের অযোগ্য।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা একটা তথ্য থেকেই অনুমান করা যাবে। প্রতিবছর দূষণের ফলে পৃথিবীতে ১৭ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটে, এর মধ্যে দুই লাখ ৮০ হাজার ঘটে বাংলাদেশে। এর আবার একটা বড় অংশ ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরের বাতাস এখন সবচেয়ে দূষিত বাতাসের মধ্যে পড়ে। এই দূষণের ফলে এখানে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, রাইনিটিস, নাকের অ্যালার্জি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ হচ্ছে। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঢাকা শহরে শ্বাসতন্ত্রের রোগের যেন একটা প্রকোপ শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট আসা শুরু হলো। আমার নিজেরও কাউকে কাউকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হয়েছে। কেন এই সময়ই এ রোগের প্রকোপ এত বাড়ে, সেটি দেখলেই বোঝা যায় যে ঢাকা শহর হিসেবে কতটা অপরিকল্পনা আর অবহেলার শিকার। সবাই যেন ঢাকাকে ব্যবহার করে তাদের আখের গোছাতে চায়&mdash;শহরটা আর সেখানে বসবাসকারী মানুষের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;ঢাকা শহরের দূষণের কারণ দেখলে দেখা যাবে, এখানে বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশ কারণ হচ্ছে ইটভাটার ধোঁয়াশা, ১৮ শতাংশের জন্য দায়ী রাস্তাঘাট ও নির্মাণসামগ্রীর ধুলা, ১০ শতাংশের জন্য দায়ী হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া, আর সব কিছু মিলে বাদবাকি দূষণ ঘটে। ঢাকা শহরের আশপাশে, বিশেষত উত্তর দিকে আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর অঞ্চলে ইটভাটাগুলো অবস্থিত। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যখন উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়, তখন উত্তর থেকে ইটভাটার ধোঁয়া ঢাকায় আসে, যার মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মারাত্মক বস্তুকণা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী&mdash;এ সময় ঢাকার বাতাসকে বলা যায় চরম অস্বাস্থ্যকর। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে যখন উত্তর থেকে বাতাস আসা বন্ধ হয়, তখন ঢাকার বাতাস হয় মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। কারণ ইটভাটার বাতাস তখন খুব না এলেও অন্যান্য দূষণ অব্যাহত থাকে। এ সময় বৃষ্টিপাত খুব না হওয়ায় বাতাসে ধুলার পরিমাণ থাকে অনেক বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত কয়েক বছরের ফ্লাইওভারের ধুলা। ঢাকা শহর স্বাস্থ্যকর থাকে জুন-জুলাই মাসে, যখন বাতাস আসে দক্ষিণ থেকে আর ধুলা-নোংরা ভেসে যায় বৃষ্টিতে। বৃষ্টিভেজা বিকেলগুলোতে এই শহরকে এখনো অনেক সুন্দর লাগে আমার কাছে, ঘরে ঢুকতে ইচ্ছা করে না।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত যাঁরা ঢাকা শহরে বড় হয়েছেন, তাঁদের একটা মজার শৈশব ছিল, তা এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই ভয়াবহ দূষণ। আগামী প্রজন্ম কি এই ঢাকাকে ভালোবাসতে পারবে, যার শৈশব চুরি করা হয়েছে? ইঙ্গিত কিন্তু ভালো নয়। সেদিন আমি আর আমার মেয়ে টুই যাচ্ছিলাম রিকশায় করে, যথারীতি দুজনকেই মুখোশ পরে নিতে হয়েছে। আমি অমল আকাশের গান &lsquo;প্রাণের শহর ঢাকা&rsquo;কে একটু মুচড়িয়ে গাইছিলাম&mdash;&lsquo;ধুলার শহর ঢাকা, আমি তোমায় ভালোবাসি।&rsquo; সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে&mdash;&lsquo;না, বাসি না।&rsquo; তাহলে কোন শহর ভালোবাসে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে&mdash;&lsquo;আমার নিজের শহর, শিশুদের শহর&mdash;যেখানে মুখোশ পরতে হবে না, খেলার অনেক জায়গা থাকবে, গাছ থাকবে&mdash;সেই শহর।&rsquo; এই শহরকে ওদের নিজেদের করার দায় কি আমরা অনুভব করছি?&lt;/p&gt;

ঢাকার খোঁজে

ধুলার শহর ঢাকা, আমি তোমায় ভালোবাসি

আবুল হাসান রুবেল

আবুল হাসান রুবেল

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল জ্যামাইকা

৭ বছর পর জানা গেল জলহস্তীটা আসলে স্ত্রী

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস : ৪ বছরে ম্যালেরিয়া রোগী বেড়েছে ৪ গুণ

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা, ৫০ শতাংশ লিখিত

ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল : রিজার্ভ ও রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ

তীব্র তাপপ্রবাহের পরিধি আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

‘সুযোগ’ রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : গুরুত্ব পাচ্ছে স্থানীয় বাস্তবতা

এখন চাল আমদানির প্রয়োজন নেই

২০২৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৯তম হবে বাংলাদেশ

উপজেলা নির্বাচন: বরুড়ার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আবু জাফর

চার বছরে ম্যালেরিয়া রোগী চার গুণ বেড়েছে, উচ্চঝুঁকিতে তিন জেলা

চালককে হত্যা অটো ছিনতাই, ১৪ দিন পর মূলহোতা গ্রেপ্তার

পারিবারিক কলহে স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করল পাষণ্ড স্বামী

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন

বৃষ্টির জন্য বিশেষ মোনাজাত ধরে অঝোরে কাঁদলেন কৃষকরা

প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী কোথায়? জামিনে মুক্তদের মহড়া

তিন অডিটরকে খুশি করতে চাঁদা দিতে হলো ৫৭ নার্সকে

তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ, শপথ আজ

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

পুকুর খননের সময় তালতলীতে হিট স্ট্রোকে শ্রমিকের মৃত্যু

খুলনা জেলার গোড়াপত্তনের দিন আজ

ডিএমপির এক এডিসি ও তিন এসির বদলি

চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহত: বিক্ষোভ চলছে, চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি

‘কৃষিতে পানি সংকট মোকাবেলায় কৃত্রিম বৃষ্টি নিয়ে কাজ চলছে’

কসবায় শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা, সৎ মায়ের যাবজ্জীবন

পাবনা পাউবোর দুই প্রকৌশলী জেলে

৭ বছর পর জানা গেল জলহস্তীটা আসলে স্ত্রী

সর্বাধিক পঠিত

আদালতের রায়ে ‘মা’ হিসেবে ইতিহাস গড়লেন বাঁধন

বিএনপি-জামায়াতের দখলে চলে গেল কি শিল্পী সমিতি?

‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন অভিনেত্রী!

ক্যামেরায় শরীর জুম করার অভিযোগ, খেপলেন নোরা

সোনার দাম ভরিতে কমল ২১০০ টাকা, আজ থেকেই কার্যকর

হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দুষছেন এজেন্সি মালিকরা

প্রখর রোদ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন

‘চরম ন্যক্কারজনক, বিচার চাই’, এফডিসির ঘটনায় রিয়াজ

বলিউডে ফিরছেন প্রীতি জিনতা, নতুন সিনেমার শুটিং শুরু

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ের দল ঘোষণা

ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদল

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি কক্সবাজারে

দলীয় নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা : কাদের

রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনেও গ্রামে লোডশেডিং

সুরাটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপির জয়, বিতর্ক শুরু

গাজীপুরে রিসোর্ট-খামারের দখলে থাকা পৌনে ৯ একর বনভূমি উদ্ধার

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আটক

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ধর্ষণের অভিযোগে প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার গ্রেপ্তার

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাবোওকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করল ইন্দোনেশিয়া

‘ভালো কিছুই হবে’, শাকিবের ‘তুফান’ প্রসঙ্গে চঞ্চল

সালমানের বাড়িতে গুলি : নদী থেকে উদ্ধার আরো এক বন্দুক

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্যপূরণে শঙ্কা

যেভাবে শুরু সাংবাদিকদের ওপর হামলা

স্বরূপকাঠিতে ঘরে একা পেয়ে শিশুকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

তিন অডিটরকে খুশি করতে চাঁদা দিতে হলো ৫৭ নার্সকে

ব্যাটিং নিয়েই ভাবনা বাংলাদেশের

প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ

চার শিরোপায় চোখ পিএসজির

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন