<p>বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের জেলে পোরা এখন কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থার এক ‘নতুন মানদণ্ডে’ পরিণত হয়েছে। অ্যাডভোকেসি সংস্থাগুলোর মতে, যেভাবে দেশে দেশে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোও নীরব থাকছে; তাতে এই পদক্ষেপ মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই নতুন মানদণ্ড তৈরিতে সামনের সারিতে আছে চীন, তুরস্ক, মিসর, সৌদি আরব, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে চীনে পুরস্কার বিজয়ী প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক লু গুয়াংকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে দেশটির ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা রাষ্ট্রপরিচালিত বন্দিশিবির ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্প’ অঞ্চল থেকে তুলে নেওয়া হয়। তুরস্কে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ম্যাক্স জার্নগাস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক ডজন সাংবাদিককে জেলে পোরা হয়। মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াউ সোয়ে ওউকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন তদন্তের কারণে জেল দেওয়া হয়েছে।</p> <p>বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত বার্ষিক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব আটকাদেশ বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে চলা অভিযানের একেবারেই নগণ্য উদাহরণ মাত্র। সিপিজের তথ্য অনুযায়ী, তিন বছর ধরে প্রতিবছরই বিশ্বে আড়ই <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/12 December/14-12-2018/Kalerkantho_18-12-14-29.jpg" style="float:left; height:114px; margin:8px; width:260px" />শর বেশি সাংবাদিককে বন্দি করে রাখা হচ্ছে। অলাভজনক এই সংস্থাটির মতে, ২০১৮ সালে অন্তত ২৫১ জন সাংবাদিককে জেল দেওয়া হয়, যাঁদের ৭০ শতাংশই রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগ মোকাবেলা করছেন। বিশ্বব্যাপী এই চিত্র সেসব দেশের ‘নতুন মানদণ্ডকেই তুলে ধরছে, যারা সমলোচনামূলক সংবাদ প্রকাশে বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’</p> <p>সিপিজের প্রতিবেদনটির লেখক এলানা বেইজার সিএনএনকে বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো আগে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াত। এখন তাদের দেখা যাচ্ছে না। মানবাধিকারের প্রশ্নে, আপনি কোনো ধরনের চাপই হোয়াইট হাউস থেকে আসতে দেখবেন না। অন্তত প্রকাশ্যে তো নয়ই।’ তিনি বলেন, সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন কাজের কারণে টার্গেট হওয়া সাংবাদিকদের ‘দি গার্ডিয়ান’ উপাধি দিয়েছে। তাঁদের অন্যতম হলেন ওয়াশিংটন পোস্টের কন্ট্রিবিউটর জামাল খাশোগি, যাঁকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়। এলানা বলেন, এই ‘গার্ডিয়ানদের’ মধ্যে আমেরিকার ম্যারিল্যান্ডের ক্যাপিটাল গেজেটের একদল সাংবাদিকও রয়েছেন, যাঁদের গত জুনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁদেরই একজন মারিয়া রেসা। ফিলিপাইনের এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত মাসে কর না দেওয়ার মামলা দিয়েছে দেশটির সরকার। অথচ তিনি সিভিল লিভার্টি নিয়ে দেশটিতে সোচ্চার।</p> <p>এলানা বেইজার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে তুরস্কে সাংবাদিকদের বন্দি রাখার বিষয়ে কথা বলছে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান শুধু ২০১৮ সালেই ৬৮ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছেন। অথচ এই এরদোয়ানকেই সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় সোচ্চার দেখা যায়।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের পরই এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার করেছে চীন। এরপর মিসর ২৫ জন, সৌদি আরব ১৬ জন, ইরিত্রিয়া ১৬ জন, ভিয়েতনাম ১১ জন ও আজারবাইজান ১০ জন। সূত্র : সিএএন।</p> <p> </p>