<p>স্নায়ুযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে করা পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এ চুক্তি লঙ্ঘন করে আসছে। অন্যদিকে মস্কো মনে করছে, বিশ্ব রাজনীতিতে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিলে তা হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক।</p> <p>দুই দেশের মধ্যে ১৯৮৭ সালে সই হওয়া চুক্তিটির নাম ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ (আইএনএফ)। তাতে স্বাক্ষর করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভ। চুক্তিতে বলা হয়, কোনো দেশ এমন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না, যেটি ৩১০ থেকে ৩৪০০ মাইল দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু অনেক দিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে আসছে যে মস্কো পশ্চিমাদের নিশানা বানিয়ে ‘৯এম৭২৯’ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে, যা ৩১০ মাইলের চেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। যদিও মস্কোর পাল্টা অভিযোগ হলো, ওয়াশিংটনের নীতির কারণেই চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।</p> <p>গত শনিবার নেভাডায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ, যারা চুক্তিটি ধরে রেখেছি এবং তা মেনে চলছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, রাশিয়া ওই চুক্তির প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন করে না। এ কারণে আমরা চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়া অনেক বছর ধরে আইএনএফ লঙ্ঘন করছে। আমি বুঝি না প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেন চুক্তি নিয়ে কোনো কথা বলেননি কিংবা সেখান থেকে সরে দাঁড়াননি। আমরা আর রাশিয়াকে চুক্তি লঙ্ঘনের সুযোগ দিতে চাই না।’</p> <p>ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জন বোল্টনের গতকাল রাশিয়া পৌঁছানোর কথা। সেখানে তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যকার সম্ভাব্য দ্বিতীয় বৈঠকের ব্যাপারে কথা বলবেন। বৈঠকে বোল্টনের মূল লক্ষ্য থাকবে রাশিয়ার সামনে ট্রাম্পের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরা। কিন্তু এর আগেই এ ধরনের চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন ট্রাম্প।</p> <p>এদিকে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। গতকাল দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকোভ বলেন, ‘ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত যে খুবই বিপজ্জনক, বিশ্বসম্প্রদায় তা শুধু উপলব্ধিই করছে না; আমার বিশ্বাস সবাই এর নিন্দাও জানাবে। কারণ বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ ধরনের পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ রিয়াবকোভ আরো বলেন, ‘এর পরও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে না থাকলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। আমরাও সামরিক প্রযুক্তিতে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’</p> <p>এর আগে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন আইএনএফ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এই চুক্তির ফলে তারা অনেক কিছু করতে পারছে না।’ সূত্র : এএফপি।</p> <p> </p> <p> </p>