<p>রাজনীতিকদের বিভাজনমূলক ও মানবতাবর্জিত বক্তব্য বিশ্বে বিভক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বার্ষিক প্রতিবেদনে লন্ডনভিত্তক এই প্রতিষ্ঠান গতকাল বুধবার এ সংকটের একটি উদাহরণ হিসেবে <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/February/23-2-2017/fast-back/kkkkk.jpg" style="float:left; height:87px; margin:12px; width:150px" />যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গ টানে। তাদের ভাষায়, তাঁর ‘ক্ষুব্ধ ও বিভাজনমূলক রাজনীতি’ সংকট বাড়াচ্ছে। একই কাজ করছেন তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও ফিলিপাইনের নেতারাও।</p> <p>সংস্থাটি মনে করে, সরকারগুলো তাদের নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য শরণার্থীদের ব্যবহার করছে। ১৫৯টি দেশকে নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মাত্রা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এ কারণেই বর্ণ, জেন্ডার, জাতীয়তা ও ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে হামলার ঘটনাও বাড়ছে। প্রতিবেদনে কয়েকটি দেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, এই দেশগুলো বিদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করে অথচ নিজ দেশেই তারা এখন মানবাধিকার নিশ্চিত করা থেকে পিছিয়ে আসছে।</p> <p>অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করার পরিবর্তে বহু নেতাই এখন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে মানবতাবর্জিত নীতি গ্রহণ করেছেন। যা গ্রহণযোগ্যতা সীমার মধ্যে নেই। রাজনীতিবিদরা লজ্জাহীন ও সক্রিয়ভাবে মানুষের পরিচয়, নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী এবং সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রেখে চলেছেন। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিই এর মূল উদ্দেশ্য।’</p> <p>এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের উদাহরণ টেনে আনে সংগঠনটি। ট্রাম্প গত মাসে এক নির্বাহী আদেশে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করে দেন। আদালতের হস্তক্ষেপে তা আটকানো গেলেও এ সপ্তাহেই তিনি আরো কঠোর অভিবাসীবিরোধী আদেশ জারি করতে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। তবে এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি।</p> <p>অ্যামনেস্টি অবশ্য শুধু ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা তালিকায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবানের নামও যোগ করে। মানবাধিকার সংগঠনটির মতে, এই নেতারা তাঁদের বক্তব্যে ‘আমাদের বিরুদ্ধে তারা’ জাতীয় মন্তব্য করেন।</p> <p>শেঠি তাঁর বিবৃতিতে ১৯৩০ সালে এডলফ হিটলারের বক্তব্যের কথা স্মরণ করে আরো বলেন, “২০১৬ সালকে ‘আমাদের বিরুদ্ধে তারা’ ধাঁচের মন্তব্যের বছর বলা যেতে পারে। ১৯৩০ সালের পর ঘৃণা ও আতঙ্ক বিশ্বে এতটা প্রাধান্য আর পায়নি।” তিনি আরো বলেন, ‘নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে মানবাধিকারকে দেখানো হয়েছে জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী ইস্যু হিসেবে। মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংসতা বন্ধের পথ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। মানুষের সঙ্গে অন্যায় করার দরজাগুলো খুলে মানবতার কৃষ্ণতম অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আমরা।’</p> <p>এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গত বছর ৩৬টি দেশ শরণার্থীদের এমন একটি দেশে যেতে বাধ্য করেছে, যেখানে তাদের মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে। সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, আফগানিস্তান, মধ্য আমেরিকা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, বুরুন্ডি, ইরাক, দক্ষিণ সুদান ও সুদানের সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যায়নি। স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে বৈরিতার কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও পঙ্গু হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলো অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি।</p> <p>লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এবারই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্যারিস থেকে তাদের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করল। তাদের দাবি, নিরাপত্তার ধুয়া তুলে ফ্রান্স তাদের মানবাধিকার রক্ষার নীতিগুলোতে ধস নামিয়েছে। তবে ফ্রান্স সরকার দাবি করেছে, এই ব্যবস্থা গ্রহণ তাদের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য ছিল। সূত্র : বিবিসি।</p>