পুরোপুরি বাংলাদেশি কাপড়ে বানানো পোশাক দুটিই ছিল মেয়েদের। সিরাজগঞ্জ আর পাবনার বিশেষ ধরনের গামছা, বাসায় পড়ে থাকা মায়ের পুরনো তাঁতের শাড়ি, নকশা করা চাদর ইত্যাদিতে নতুন করে ডিজাইন করে ফেললেন। এই দিয়ে তৈরি হয়ে গেল একটি পোশাক। অন্যটি ছিল বিয়ের বেনারসি ও কাতান শাড়ি দিয়ে বানানো একটি লাল গাউন।
বেইজিংয়ে তনিমা
ওমর শাহেদ

১৫ অক্টোবর রাতে পৌঁছলেন বেইজিংয়ে। আলো ঝলমলে এই শহরে পা রাখতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। রাতটি এশিয়া হোটেলে কাটালেন। পরের দিন খুব সকালে নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য চলে গেলেন বিআইএফটিতে [বেইজিং ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি]।
বেইজিংয়ের একেবারে কেন্দ্রস্থলে বিআইএফটি। এখানে সব রকমের সুবিধা আছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডরমেটরি আছে।
তখন পুরো ক্যাম্পাস একজিবিশনের জন্য বন্ধ। তবে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীরা মেলা উপলক্ষে কাজ করছেন। তাঁদের কাজ ঘুরে ঘুরে দেখলেন। ফ্যাশন ডিজাইন ডিপার্টমেন্ট, জুয়েলারি ডিপার্টমেন্ট, ফ্যাশন একসেসরিজ ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখলেন। দুপুরের খাবারের বিরতির পর চলে গেলেন ফ্যাশন শোর রিহার্সালে। তাঁর দুই মডেলকে কোন অলংকার পরানো হবে, তাদের কোন স্টাইলে পোশাক পরানো হবে সে নির্দেশনা দিলেন। প্রায় পুরো দিন এই কাজেই গেল।
১৭ অক্টোবর সকাল ৭টার মধ্যে হাজির হয়ে ফ্যাশন শোর জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তাঁর পোশাক দেখে নিজে থেকেই একজন ডিজাইনার এসে পরিচিত হলেন। তিনি মনে করেছিলেন, তনিমা হয় ভারতীয়, নয় বাঙালি! বেনারসি শাড়ি তো এ অঞ্চলের নারীদেরই পোশাক। এই ডিজাইনারের নাম শ্রেয়া আর পরে বললেন, খুবই সুন্দর। তারপর একসময় শুরু হলো ফ্যাশন শো। তনিমার দুই চীনা মডেলের গায়ে আমাদের পোশাক। আর মাথায় টিকলি-টায়রা, হাতে কাচের চুড়ি, গলায় রুপার আদিবাসী গয়না। আরো পরেছেন কাপড়, কাঠ, সুতা দিয়ে বোনা গলার মালা, কড়ি দিয়ে বানানো কোমরের অলংকার।
একেবারে অন্য রকম এই সাজ দেখে তো বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার, নামি মডেলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মুখে কেবল একটিই ধ্বনি-'ওয়াও!' তাঁরা সমানে ভিডিও করছেন, ছবি তুলছেন। পরে চীনের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার এসে পোর্টফলিও বানানোর জন্য মডেল ও তনিমার ছবি তুললেন। তাঁরাও তাঁর গয়নার প্রশংসা করলেন, 'তোমাদের গয়নাগুলো আসলেই অন্য রকম।'
পরের দিনের ফ্যাশন শোতে ডিজাইনাররা একসঙ্গে হাঁটলেন। সে দিনই সত্যিকারের ডিজাইনারের অনূভূতি হচ্ছিল তনিমার মনে। সব পশ্চিমা পোশাকের ভিড়ে আমাদের দেশের মেয়েটির পরনে জামদানি শাড়ি! পরে হলো মেলা। সেখানে বিআইএফটির ছাত্রছাত্রীদের বানানো অলংকার, রুপার বালা, মুক্তা বসানো ব্যাগ, নানা ধরনের গৃহস্থালি দ্রব্য ঘুরে ঘুরে দেখলেন। রাতে ঘুরতে গেলেন বেইজিংয়ের ন্যাশনাল অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।
বিদায়ের আগের দিন বিখ্যাত গ্রেট ওয়ালে গেলেন। পাহাড় কেটে কেটে বানানো আঁকাবাঁকা সিঁড়ি আর ঢেউ খেলানো পথ দিয়ে অনেকটা ওপরে উঠলেন। ভয় পেলেন, ভালোও লাগল। আর শেষ দিন চলে এলেন আপন দেশে।
সম্পর্কিত খবর