<p><span style="font-size:18px">... শতমূলীর অনেক গুণ থাকলেও এটি বেশি ব্যবহার হয় মাতৃদুগ্ধ বাড়ানোর ওষুধ তৈরিতে। এছাড়া গবাদিপশুর দুধ বৃদ্ধি এবং আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথিক  ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয় শতমূলী ...</span></p> <p> </p> <p>শতগুণ সম্পন্ন মূল্যবান ঔষুধি গাছ শতমূলী পাহাড়ে পাওয়া যায় প্রাকৃতিকভাবে। ভরা মৌসুমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে প্রতিসপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ মন শতমূলী কিনে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখানে বাজারমূল্য অনেক কম। তবে পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে শতমূলী চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।</p> <p>জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাহাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শতমূলীর অনেক গুণ থাকলেও এটি বেশি ব্যবহার হয় মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিসহ গবাদি পশুর দুগ্ধ বৃদ্ধির ওষুধ তৈরিতে। আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধেও ব্যবহার হয় শতমূলী।’</p> <p>এদিকে নাটোর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে শতমূলীর চাষ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ড. রফিকুল হায়দার।</p> <p>দীঘিনালা উপজেলায় হাটবারে পাহাড়ি জুমচাষিদের দেখা যায় শতমূলী বিক্রি করতে। চাকমা ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘বজমূলা’; যার অর্থ অনেক মূল।</p> <p>উপজেলার হাজাছড়া এলাকার বৌদ্ধ রঞ্জন চাকমা (৫৫) ও  তুজিম চাকমা (৩০) জানান, পাহাড়ে জুমের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার আগে শতমূলী খোঁজেন তাঁরা। ৩/৪টি গাছের মূল পেলেই ৩০/৪০ কেজি ওজন হয়ে যায়। একটি গাছের মূল ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত হয়। হাটবারে তা প্রতিকেজি ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা যায়। পাইকার ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে নিয়ে যান।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় শতমূলীর। সেখানে বিক্রি হয় প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।</p> <p><strong>শতমূলী :</strong> স্থানীয় চাকমা ভাষায় বজমূলা হলেও এর প্রচলিত নাম শতমূলী। ঔষুধি গাছ নিয়ে গবেষণা করেন এ রকম বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এর ইংরেজি নাম এসপারাগাস (Asparagus), বৈজ্ঞানিক নাম এসপারাগাস রিসিমোসাস ওইল্ড (Asparagus recemosus Wild).</p> <p><strong>শতমূলীর গুণাগুণ : </strong>আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ সাহাব উদ্দিন জানান, শতমূলীর মূল কাজ দুগ্ধ বৃদ্ধি করা। একমি ওষুধ কম্পানি মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি এবং গবাদি পশুর দুগ্ধ বৃদ্ধির ওষুধ তৈরিতে শতমূলি ব্যাবহার করছে। এটি কাঁচা চিবিয়ে খেলেও মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিক সাফল্য পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালেও দুধ বাড়ে। এছাড়া সতেজতাকারক, শান্তকারক, মূত্রবর্ধক, মলরোধক, সংকোচক নিবারক, আমাশয় নিরাময়ক, শক্তিবর্ধক, বলকারক এবং পাতলা পায়খানা, আমাশয়, মূত্রজনিত সমস্যা, শারীরিক দুর্বলতায় শতমূলী ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।</p> <p>সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ইউরোপে শতমূলীর ডগা দিয়ে তৈরি হয় এক প্রকার খাবার। যা ইউরোপ অঞ্চলে সবচেয়ে মূল্যবান খাবার হিসেবে পরিচিত।’</p> <p><strong>শতমূলীর বাস : </strong>ভারতীয় উপমহাদেশসহ উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ এলাকা শতমূলের আদি নিবাস। এটি বাংলাদেশের সর্বত্র কম বেশি পাওয়া যায়। তবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বনাঞ্চলে ও শালবনে বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি লতানো উদ্ভিদ। এর সবুজ কাণ্ড কণ্টকিত। শরত্কালে ফুল ও ফল হয়, পাকে মাঘ-ফাল্গুন মাসে।  ফল দেখতে ছোট মটরদানার মতো। ফলের  ব্যাস ৫-৬ মিলিমিটার, কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ ও পাকলে লাল বর্ণের হয়ে থাকে। অসংখ্য সরু-স্ফীত মূল নির্গত হয় বিধায় এ গাছকে বলা হয় শতমূলী। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে গাছ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গোড়ার মাটি সরিয়ে শতমূলী সংগ্রহ করা যায়। পরে গাছের গোড়ায় মাটি দিলে আবারও গাছ বাড়তে থাকে।</p> <p><strong>পাহাড়ে বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা : </strong>পাহাড়ের শতমূলীকে বীজ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের রাবার বাগানসহ বিভিন্ন বাগানে অন্যান্য গাছের ফাঁকে শতমূলী চাষ সম্ভব। এমনটি মনে করেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাহাব উদ্দিন।</p> <p>বাংলাদেশ বন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্মকর্তা ড. রফিকুল হায়দার জানান, সমতল এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত শতমূলীর চেয়ে পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উত্পাদিত শতমূলীর ঔষুধি গুণাগুণ অনেক বেশি। আর সেগুলো চাষ না করে শুধু আহরণ করতে থাকলে এক সময় বীজ হারিয়ে যাবে। পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উত্পাদিত যে পরিমাণ শতমূলী বিক্রি হচ্ছে তা ভালো সংবাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে সংরক্ষণ করে চাষের ব্যবস্থা না করলে মূল্যবান উদ্ভিদটি এক সময় পাওয়া যাবে না। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে স্থানীয়দের ব্যাপক আর্থিক সফলতাও আসবে।’</p>