<p>চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় রূপচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। বিউটি পার্লার ব্যবসায় আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন।</p> <p>ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। প্রাথমিক স্কুলেই অভিনয়, নৃত্য আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হাতেখড়ি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাবা ইফতেখার হোসেনের হাত ধরে সাংস্কৃতিক জগতে প্রবেশ। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একাধিকবার শিশুশিল্পী হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। বড় হয়ে সত্যি সত্যি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।</p> <p>তাঁর নাম তানিয়া জেসমিন। বাড়ি রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার সৈয়দবাড়িতে। উপজেলা সদরের মরিয়মনগর ও থানার পাশে দুটি বিউটি পার্লার পরিচালনা করেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় তরুণীদের রূপচর্চার প্রশিক্ষণও দেন। তাঁর মা কাউছার পারভীনও রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ।</p> <p>বাবা-মায়ের উৎসাহে এতোদূর এসেছেন উল্লেখ করে তানিয়া বলেন, ‘অবশ্য বিয়ের পর স্বামীর সহযোগিতা না পেলে বাকি পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন হতো।’ ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি সুইডেনের স্টকহোমে রূপচর্চা বিষয়ে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সুইডেনের নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার বছর কাজ করেন। এর পর রাঙ্গুনিয়ায় পুরোদমে কাজ শুরু করেন।</p> <p>উপজেলার মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকায় ‘তানিয়া বিউটি পার্লার ও ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি রূপচর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলেছেন। সেখানে বর্তমানে ১০ জন কর্মী আছেন। তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ এলাকায় বিউটি পার্লার গড়ে নিজেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। এছাড়া অর্ধশত নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে চাকরি করছেন।  সম্প্রতি তানিয়ার সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখন তিনি কলেজছাত্রী। তানিয়ার ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে শিক্ষক হবেন। ১৯৯৭ সালের কোনো একদিন স্বামীসহ ঢাকায় যান তানিয়া। পত্রিকায় রূপচর্চা প্রশিক্ষণের বিজ্ঞাপন দেখে স্বামীর উৎসাহে ওই দিনই সেখানে যোগাযোগ করেন। ঢাকায় ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানে একমাস এবং পরে চট্টগ্রামে তিন মাস প্রশিক্ষণ নেন। এর পর ১৯৯৮ সালে রাঙ্গুনিয়া থানার সামনে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করেন বিউটি পার্লার। স্বামীর সহযোগিতায় প্রায় এক লাখ টাকায় শুরু করেন বিউটি পার্লার ও ট্রেনিং সেন্টারের কার্যক্রম।</p> <p>তানিয়া বলেন, ‘এলাকায় বিউটি পার্লারের কাজ শুরু করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। গ্রামবাসীকে বোঝাতে হয়েছে বিউটি পার্লার কী! পরিচিত অনেকে বাণিজ্যিকভাবে পার্লার ব্যবসা নিরুৎসাহিত করেছেন। পার্লারে সাজলে ত্বকের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বরং নারীর আসল সুন্দর রূপ ফুটে উঠে। এসব বোঝাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘদিন।’</p> <p>আস্তে আস্তে স্থানীয় লোকজন বিউটি পার্লার সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পান। বাড়তে থাকে তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থীও। ‘বউসাজ’ প্রশিক্ষণ ছাড়া ব্লক বাটিকের কাজও শেখানো হয় সেখানে।</p> <p>বিউটি পার্লারের পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান তানিয়া। ২০০১ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিউটি এসোসিয়েশনের বউসাজ প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বিউটি পার্লারের পুরস্কার পান তিনি। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে নির্জলা সুইডেনে ‘ও লেভেল’ শেষ করেছেন। ছোট মেয়ে সূর্যলা দেশে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।</p> <p>ভবিষ্যতে রাঙ্গুনিয়ায় বড় পরিসরে বিউটি পার্লার ট্রেনিং সেন্টার এবং লেডিস শপিং সেন্টার গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তানিয়ার। এতে এলাকার নারীদের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন তিনি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোনিয়া শফি বলেন, ‘তানিয়ার দেখাদেখি রাঙ্গুনিয়ায় শতাধিক বিউটি পার্লার গড়ে ওঠেছে। গ্রামীণ জনপদে তাঁর এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।’</p>