<p>কবি বন্ধুকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন মহম্মদ আলি জিন্না। তার অনুরোধেই বিশিষ্ট উর্দু কবি জগন্নাথ আজাদ লিখেছিলেন পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় সঙ্গীত। এটি পরিচিত ‘তারানা এ পাকিস্তান’ নামে। পরে খোদ জাতির পিতার ইচ্ছেকে শিকেয় তুলে দেয় দেশটির সরকার। পরিবর্তন করা হয় জাতীয় সঙ্গীতের।</p> <p>ইতিহাসকে মুছে দিতে চেয়েছে পাকিস্তান। পারেনি। তবে সে দেশের প্রথম জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হিসেবে থেকে গিয়েছেন জগন্নাথ আজাদ। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘তারানা এ পাকিস্তান’-এর বদলে ‘কৌমি তরানা’-কে মর্যাদা দেয়।</p> <p>১৪ অগস্ট ১৯৪৭ সাল। ভারত ভেঙে পাকিস্তান তৈরি হল। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে লর্ড মাউন্ট ব্যাটন ও লেডি ব্যাটন ও গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্নার উপস্থিতিতে নবগঠিত রাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় সঙ্গীত ‘তরানা এ পাকিস্তান’ গাওয়া হয়। সেই মুহূর্তে তৈরি হয় নজির। এক ভারতীয় নাগরিক জগন্নাথ আজাদের লেখা গান হয়ে গিয়েছিল পাক জাতীয় সঙ্গীত।</p> <p>পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত ১৯৫০ সালে কেন পরিবর্তন করা হয়েছিল তার কোনও উত্তর মেলেনি। কবি জগন্নাথ আজাদ থেকে গিয়েছিলেন সবার অগোচরে। ২০০৪ সালে মৃত্যুর পর আচমকা তার নাম আলোচনার উঠে আসে।</p> <p>এক সাংবাদিক দাবি করেন, পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা এক হিন্দু কবি। তার নাম জগন্নাথ আজাদ। দেশভাগের আগে তিনি এক সময় লাহোরে বসবাস করতেন। মহম্মদ আলি জিন্নার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে জগন্নাথ আজাদের অবদান কিছু পাক ঐতিহাসিক স্বীকার করেন না। বিষয়টি এখানেই বিতর্কিত।</p> <p>কবি জগন্নাথ আজাদের জন্ম ১৯১৮ সালে। যে গ্রামে তার আদি বাড়ি সেটি দেশভাগের পর পাকিস্তানে পড়েছে। পাক পাঞ্জাব প্রদেশের এই গ্রামের নাম ইসা খেল। কিশোরকাল থেকেই উর্দু কবিতার প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল জগন্নাথ আজাদের। লেখাপড়া প্রথমে রাওয়ালপিন্ডিতে পরে লাহোর ইউনিভার্সিটি এফ পাঞ্জাবে। লাহোরেই সাংবাদিকতা শুরু করেন জগন্নাথ আজাদ। দেশভাগের পর দিল্লিতে এসে উর্দু সংবাদ পত্রের সম্পাদক হন।</p> <p>১৯৪৮ সালে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ পেপারের সম্পাদক হয়েছিল তিনি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রথম জনসংযোগ আধিকারিক জগন্নাথ আজাদ। একই পদে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। এছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি।</p> <p>উর্দু দুনিয়ার শাহেনশা হিসেবে পরিচিত মহম্মদ ইকবালের জীবনাদর্শের অনুরক্ত জগন্নাথ আজাদের সঙ্গে মহম্মদ আলি জিন্নার সুসম্পর্ক ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।</p>