<p>পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক জোট গড়ে লড়াইয়ের জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের মে মাসে শেষ হবে বর্তমান তৃণমূলশাসিত রাজ্য সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ। ২০১১ সালে তৃণমূল ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক জোটের কাছেই পরিজিত হয় ৩৪ বছরের টানা শাসনে থাকা বাম নেতৃত্ব।</p> <p>এবার সেই তৃণমূলের জোট সঙ্গীকে নিজেদের সঙ্গী করে তৃণমূলকেই রাজ্য থেকে হটানোর ডাক দিয়েছে বাম নেতৃত্ব। অন্যদিকে, গত পাঁচ বছরে কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া বামফ্রন্টেকে তৃণমূল তেমন রাজনৈতিক গুরুত্ব না দিয়ে বরং সর্বভারতীয় বিজেপির উত্থানকে গুরুত্ব দিতে চাইছে। এ কারণে  প্রয়োজনে বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সঙ্গে আবারও রাজনৈতিক জোট গড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের।</p> <p>দুইদিন আগে বিধানসভাবিরোধী দলনেতা ও বামফ্রন্ট নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বামফ্রন্টের এই জোটের পক্ষে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তবে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোটের সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী নিজেই।</p> <p>অন্যদিকে, রাজনীতির শক্ত জমি থাকায় শাসক তৃণমূলে ভিড়তে শুরু করেছেন রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালি ডালমিয়া গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় নবান্নে প্রায় আধঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডালমিয়ার কন্যা।</p> <p>শুধু বৈশালি নন, সাবেক ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লেও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সোমবার তৃণমূল সভানেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেন লক্ষ্মীরতন শুক্লাও। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দিদি যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই তিনি পালন করবেন।  এ দুই অরাজনৈতিক মুখ ছাড়াও বামফ্রন্টের একসময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও পরে বামফ্রন্ট থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দর রাজ্জাক মোল্লাও সোমবার মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেন। রাজ্জাক মোল্লা নিজে স্বীকার না করলেও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে তাঁরও।</p> <p>শুধু ওই বাম নেতা নন, কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এমন কি বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাও বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যদিও কংগ্রেসের আরেক হেভিওয়েট নেতা আব্দুল মান্নান মনে করেন তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে হলে অবশ্যই বামফ্রন্টের সঙ্গেই জোট করতে হবে।</p> <p>তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বাম-কংগ্রেস জোটকে অলীক স্বপ্ন বলে মনে করছেন। রাজ্যের শীর্ষ তৃণমূল নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, আগামী ৬৫ বছরেও এ জোট সম্ভব নয়।</p> <p>রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কংগ্রেস বামফ্রন্টের চেয়ে রাজনৈতিক জোটের হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসকেই বেছে নেবে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপিকে রুখতে হলে সোনিয়া গান্ধীর মমতা ব্যানার্জির সাহায্য প্রযোজন। মমতার হাতে রয়েছেন ৩৭ জন সাংসদ, যা বামফ্রন্টের নেই। তাই সর্বভারতীয় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিকে রুখতে সোনিয়া গান্ধী রাজনৈতিক জোটে মমতা ব্যানার্জির সাহায্য নিতে পারেন। সম্প্রতি দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি।</p> <p>ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, সেদিনই বিজেপিকে রুখতে সোনিয়া ও মমতা দুজনই দুজনকে প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন।</p>