<p>ধরো, তোমাকে দুটি ডিম দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি কাঁচা, আরেকটি সিদ্ধ করা। কোনটা কোন ডিম, তা কিভাবে বলবে? নিশ্চয়ই ফিচেল একটা হাসি দিয়ে বলবে, ভাঙলেই তো বোঝা যাবে, কোনটা সিদ্ধ আর কোনটা কাঁচা। তোমার উত্তর একেবারে ঠিক। কিন্তু তাতে একটা গোল থেকে যায়। কাঁচা ডিমটা ভাঙলে তো সেটিকে আর সিদ্ধ করা যাবে না। ঠিকঠাকমতো ভাঙতে না পারলে তো নষ্টই হয়ে যাবে। কিন্তু সেটি যদি না করতে চাও? কিংবা যদি স্রেফ বলে দেওয়া হয়, না ভেঙে বলতে হবে কোনটা কোন ডিম?</p> <p>এবার ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে গেল। বাইরে থেকে দেখতে তো কাঁচা ডিম আর সিদ্ধ ডিম হুবহু একই রকম। না ভেঙে কিভাবে বলা সম্ভব কোনটা কোন ডিম? হ্যাঁ, তারও উপায় আছে। সে জন্য বিজ্ঞানের জাদুর সাহায্য নিতে হবে। পদ্ধতিটাও খুবই সোজা। দুটি আলাদা প্লেটে ডিম দুটি নিতে হবে। তারপর লাটিমের মতো ঘুরিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। আর ডিম দুটি নিজে নিজে থামার আগেই টুক করে ধরে ফেলতে হবে। তবে স্রেফ এক মুহূর্তের জন্য। তারপর আবার ছেড়ে দিতে হবে। তখন দেখা যাবে, একটি ডিম থপ করে পড়ে গেছে। অন্য ডিমটি আবার ঘুরতে শুরু করেছে। যেটি থপ করে পড়ে যাবে, সেটি সিদ্ধ ডিম। আর যেটি পরেও ঘুরতে থাকবে, সেটি কাঁচা ডিম।</p> <p>ডিমের এই ঘোরাঘুরির ব্যাপারটা শুনতে কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না? ঘোরাঘুরির সঙ্গে সিদ্ধ আর কাঁচা থাকার আবার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে নাকি! আসলে সম্পর্কটা জড়তার। জড়তা বলতে আবার মনে কোরো না প্রাণহীন জড়পদার্থের কোনো ব্যাপারস্যাপারের কথা বলা হচ্ছে। জড়তা হচ্ছে বিজ্ঞানের একটা পরিভাষা। ইংরেজিতে বলে ইনার্শিয়া। সব বস্তুর মধ্যেই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। তা হলো, সেটি যদি স্থির থাকে, তবে সে স্থিরই থাকতে চায়। আর যদি গতিশীল থাকে, তবে সে গতিশীলই থাকতে চায়। মানে ঠিক যেমনটি আছে, তেমনটিই থাকতে চায়। এটাকেই বলে জড়তা বা ইনার্শিয়া।</p> <p>কাঁচা ডিম আর সিদ্ধ ডিমের ঘোরাঘুরির পার্থক্যটাও এই ইনার্শিয়ার কারণেই ঘটে। কারণ কাঁচা ডিমের খোলসটা যেমন ঘুরছে, তেমনি ভেতরের থকথকে তরল কাঁচা ডিমও ঘুরছে। যখনই সেটি টুক করে ধরে ফেলা হলো, খোলসটার ঘোরা বন্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে খোলসটার কাছাকাছি থাকা তরল অংশের ঘোরাও অনেকটাই থমকে যায়। কিন্তু ভেতরের দিকে থাকা তরল অংশ তখনো ঘুরতে থাকে। ফলে পরক্ষণেই ডিমটি ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি আবার ঘুরতে শুরু করে। কিন্তু সিদ্ধ ডিম পুরোটাই যেহেতু কঠিন, কাজেই সেটি যখন ঘোরে, পুরোটা একসঙ্গে ঘোরে। আবার যখন থামিয়ে দেওয়া হয়, তখন পুরোটাই একসঙ্গে থেমে যায়। ফলে পরক্ষণে ছেড়ে দিলেও সেটি আর ঘোরাঘুরি করে না।</p>