<p>সমীক্ষা বলছে আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা গত কয়েক দশকে মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৪৭ মিনিয়ান মানুষ অ্যালঝাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার মতো রোগে ভুগছে। বাংলাদেশেও সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কারণ আমাদের দেশেও মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অ্যালঝাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগও।</p> <p>প্রসঙ্গত, অ্যালঝাইমার হল এমন রোগ যাতে ব্রেন টিস্যুগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে সময় যত এগতে থাকে, তত স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে। এক সময় গিয়ে তো নিজের পরিচয়টুকুও মনে রাখতে পারেন না রোগী। আর সবশেষে নিজেকে ভুলে গিয়ে জীবনের শেষ চ্য়াপ্টারটা কখন যে শেষ হয়ে যায়, তা রোগী জেনে উঠতেও পারেন না।</p> <p>আপনিও কি চান নিজের সবথেকে বড় সম্পদ, স্মৃতিশক্তিকে হারিয়ে ফেলে ভয়ঙ্কর এক শেষ জীবন পেতে? উত্তর যদি না হয়, তাহলে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। তাহলে অন্তত স্মৃতি চোরের খপ্পরে পরতে হবে! এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে মেমরিকে মেরামত করতে পারবেন, যাতে ফাঁক গোলে কোনও মধুর স্মৃতি পালিয়ে যেতে না পারে? এক্ষেত্রে কতগুলি খাবার দারুন উপকারে আসে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কিছু খাবার আছে যেগুলি কম বয়স থেকেই নিয়মিত খেতে শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার এতটাই বাড়ে যে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া আশঙ্কা একেবারে কমে আসে। প্রসঙ্গত, যে যে খাবারগুলি এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...</p> <p><strong>১. আঙুর</strong><br /> এতে থাকা কেভারেটল নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কের খেয়াল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বেশি মাত্রায় এই ফলের রসটি খাওয়া শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার কমে যাওয়ার আশঙ্কা তো কমেই। সেই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না। এবার বুঝেছেন তো কী কারণে নিয়মিত এক গ্লাস করে আঙুরের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিউরোলজিস্টরা।</p> <p><strong>২. জাম</strong><br /> নিয়মিত এক কাপ করে জাম খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা নার্ভসেলের ক্ষত সারানোর মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার মস্তিষ্কেকের ক্ষমতা বেড়ে গেলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধির ধার বাড়তেও সময় লাগে না।</p> <p><strong>৩. দারুচিনি এবং মধু</strong><br /> এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চিমটে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ব্রেন পাওয়ার তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে অনিন্দ্রাও দূর হবে। প্রসঙ্গত, আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা তো এও বলে থাকেন যে দারুচিনির গন্ধও যদি নিয়মিত নিতে পারেন, তাহলেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।</p> <p><strong>৪. ব্রাহ্মি শাক</strong><br /> এই শাকটিতে থাকা থাকা নিউরোপ্রটেকটিভ এজেন্ট স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি কমাতেও দারুন কাজে আসে। তাই তো যারা কাজের চাপে বা অন্য কোনো কারণে বেজায় মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তারা এই শাকটি খাওয়া শুরু করতে পারেন। দেখবেন উপকার মিলবে।</p> <p><strong>৫. বাদাম</strong><br /> এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই দুটি উপাদান স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে ব্রেন পাওয়ার বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে ৫-১০ টা বাদাম এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখার পর সকালে উঠে বাদামটা বেটে নিন। তারপর এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সেই বাদামের পেস্টটা ফুটিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। এই পানীয়টি টানা ৩০-৪০ দিন যদি খেতে পারেন তাহলে পরিবর্তনটা নিজেই বুঝতে পারবেন।</p> <p><strong>৬. হলুদ</strong><br /> বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে হলুদের ভেতরে থাকা কার্কিউমিন নামক উপাদানটি স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি অ্যালঝেইমার্সের মতো ব্রেন ডিজিজের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই স্মৃতিলোপের মতো ভয়ঙ্কর রোগের শিকার হতে যদি না চান, তাহলে এখন থেকেই প্রতিদিন সকালে অল্প করে কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।</p> <p><strong>৭. কালোঞ্জি</strong><br /> অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং নিউরন প্রটেকটিং প্রপার্টিজে ভরপুর এই প্রাকৃতিক উপাদনটি মস্তিষ্কের খেয়াল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে প্রতিদিন ৫০০ এম জি করে কালোঞ্জি খেলে স্মৃতিশক্তির দারুন উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে ব্রেনের কগনেটিভ ফাংশান দ্রুত গতিতে হতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন, দিনে দুবার হাফ চামচ কালোঞ্জির সঙ্গে অল্প করে মধু মিশিয়ে খেলে এক্ষেত্রে দারুন উপকার পাওয়া যায়।</p> <p><strong>৮. মাছ</strong><br /> হে বাঙালি আধুনিকতার চক্করে মাছ খাওয়া ভুলে যেও না যেন! যদি এমনটা কর, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! কারণ মাছের শরীরে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তির খেয়াল রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো মাছ খাওয়া ছাড়লে চলবে না বন্ধুরা। জানবেন, যতদিন রুই-কাতলারা আমাদের সঙ্গে আছে, ততদিন অ্যালঝাইমার আমাদের ছুঁতেও পারবে না।</p> <p><strong>৯. আমলকি</strong><br /> ২০০৭ সালে জার্নাল অব ফিজিওলজি অ্যান্ড বিহেবিয়ারে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি অ্যালঝাইমার রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে নানাবিধ রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে থাকে। এক কথায় ব্রেনের পাশাপাশি যদি শরীরের খেয়াল রাখতে চান, তাহলে আমলকি খেতে ভুলবেন না যেন!</p> <p><strong>১০. ডালিম</strong><br /> একাধিক গবেষণায় গেছে এই ফলটিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ককে নানাসব ক্ষতিকর উপাদান থেকে বাঁচাতে এবং সার্বিকভাবে এদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কম বয়সেই যদি স্মৃতিলোপের খপ্পরে পরতে না চান, তাহলে এখন থেকেই প্রতিদিন এই ফলটি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপাকার পাবেন।</p>