<p>শুধুমাত্র বাতাসের মাধ্যমে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় না। পানিতে মিশে বাঙালির প্রিয় খাদ্য মাছের মাধ্যমে আর গোয়ালের গরুর মাধ্যমেও নিঃশব্দে অনুপ্রবেশ করতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু! এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা।</p> <p>এতদিন জানা ছিল, হাঁচি-কাশি-থুথু দিয়ে তো যক্ষ্মর জীবাণু ছড়ায়। এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাবধান! যক্ষ্ম হতে পারে আরো নানা উপায়ে। গরু এবং মাছ থেকেও ছড়াতে পারে যক্ষ্মর জীবাণু। মানুষের অসতর্কতার সুযোগে হাজারো মানুষের শরীরে লুকিয়ে বাসা করে নিচ্ছে অজানা শত শত প্রজাতির যক্ষ্মর জীবাণু। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু বাতাস থেকেই নয় পানির মাধ্যমেও ছড়ায় যক্ষ্মর জীবাণু।</p> <p><strong>টিবি ছড়াতে পারে হাসপাতালের পানি থেকেও</strong><br /> বায়ু-পানি-মাটি। বিপদ এখন সর্বত্র। একদিকে হাসপাতালের পাইপ লাইনের সঙ্গে যুক্ত পানির কল, মাঠের ধুলো সর্বত্রই হানা দিতে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে অজানা প্রজাতির যক্ষ্মার জীবাণু। এক বা দুই নয়, কম করে এরকম পাঁচশো নতুন প্রজাতির টিবি জীবাণু রয়েছে।</p> <p>এইসব প্রজাতির টিবির জীবাণু চিহ্নিত করা বেশ জটিল। গতানুগতিক টিবির জীবাণু চিহ্নিত করার পদ্ধতিতে তো এক্কেবারেই নয়। দ্রুত নির্ণয় সম্ভব একমাত্র অত্যাধুনিক পিসিআর পদ্ধতিতে। যা, সর্বত্র মেলে না। ফলে, আক্রান্তদের সিংহভাগই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকেন। এর ফলে ওষুধ না পেয়ে অনেকেই দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।</p> <p><strong>সম্প্রতি একদল মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ঠিক এমনটাই দাবি করেছেন</strong><br /> মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের বিউমন্ট মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক বিজ্ঞানী সুমিত ফোগলার নেতৃত্বাধীন গবেষক দল এই নিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে ওই দল। ওই গবেষকরা জানাচ্ছেন, ব্যাঙের শরীরে টিবি হলে সেই ব্যাক্টেরিয়ার নাম মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম জেনোপি। অন্যদিকে, মাছকে টিবি আক্রান্ত করে মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম মেরিনাম।</p> <p><strong>ব্যাঙের থেকে টিবি</strong><br /> সম্প্রতি বছর চৌষট্টির অবসরপ্রাপ্ত এক মার্কিন সেনার চিকিৎসা করতে গিয়ে ‘ব্যাঙটিবি’-র বিষয়টা প্রকাশ্যে আসে। ওই প্রৌঢ়ের ফুসফুসের ক্যান্সার হয়েছে এই সন্দেহে নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিল সুমিত ও গবেষক দল। অনেক পরীক্ষার পর দেখা যায় ওই প্রাক্তন সেনার মাইক্রোব্যাক্টরিয়াম জেনোপি বা ‘ব্যাঙ’ টিবিতে আক্রান্ত।</p> <p>ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী সুমিতের নেতৃত্বাধীন ওই গবেষক দলটি ওই ধরনের সকল প্রজাতির যক্ষ্ম জীবাণুকে ঘায়েল করার চিকিৎসা প্রণালী খুঁজে বের করেছেন। চিহ্নিত রোগীদের ওপর প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন।</p> <p><strong>চিহ্নিত হলে চিকিৎসা পদ্ধতিও সহজ</strong><br /> সুমিত ফোগলারের মতে আশার কথা হল, ব্যাঙ-মাছের শরীর থেকে মানুষের শরীরে সংক্রামিত টিবির ওষুধ এখন ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। তবে, সেই ওষুধ এক বছর খেতে হবে।</p> <p>এই জীবাণু প্রথমে নিঃশব্দে জলজ প্রাণীদের শরীরে অনুপ্রবেশ করে। এরপর, জলে মিশে ঘুর পথে মানুষের শরীরে ঢুকে যায় ওই ব্যাক্টেরিয়া । এই প্রজাতির জীবাণু অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছকেও ঘায়েল করতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্যাঙদের শরীরে এরা একবার ঢুকলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে।</p> <p>মৎস্যপ্রেমীরা অজান্তে টিবি আক্রান্ত অসুস্থ ওই মাছ খেলেও তা আরো সহজেই মানুষের শরীরে বংশবৃদ্ধির সুযোগ পায়। একইভাবে গরুর শরীরের যক্ষ্ম জীবাণুও দুধের মধ্যে দিয়ে অনায়াসে মানুষের শরীরে ঘাঁটি গেঁড়ে বসতে পারে। এই জন্য বাঙালিদের জন্য বাড়তি সতর্কতা দিয়েছেন ওই গবেষকরা।</p> <p><strong>কীভাবে চেনা যায়</strong><br /> মাছের গায়ে ঘা থাকলে, গায়ের আঁশ খসে গিয়ে রং আলাদা হয়ে যায়। একই পরিবর্তন গরুর শরীরেও দেখা যায়।</p> <p>শুধু তাই নয়, গবেষকরা বলছেন মাছ, ব্যাঙ বা যে কোনো গবাদি প্রাণীর শরীরে বাসা বাঁধতে সক্ষম যক্ষ্মর জীবাণু। তাই সময়ে সাবধান হতে বলছেন সুমিত ফোগলার দলবল।</p>