<p>ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি দিয়ে বানানো শরবত সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) খাওয়ানোর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল মিজানুর রহমানের। ওয়াসার পানি ‘শতভাগ সুপেয়’—গত শনিবার সংস্থাটির এমডির এই দাবির পর তাঁকে নিজ বাসার পানি দিয়ে শরবত খাওয়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মিজান। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সময়মতো হাজিরও হয়েছিলেন ওয়াসা অফিসে। শরবত বানানোর সব উপকরণও নিয়ে এসেছিলেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার ওই বাসিন্দা। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান সারা দিন অফিসে না আসায় শরবত খাওয়ানো হলো না মিজানুর রহমানের। অন্যত্র দুটি বৈঠক থাকায় এমডি অফিসে আসতে পারেননি বলে দাবি করেছে ঢাকা ওয়াসা।</p> <p>সরেজমিনে দেখা গেছে, কাচের জগে ওয়াসার পানি, লেবু ও চিনি নিয়ে সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে এসেছিলেন মিজানুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী হামিম হাশেম খুকি। একজন শিশুসহ আরো দুই ব্যক্তি ছিলেন মিজানের সঙ্গে। এই পাঁচজন জুরাইন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এদিকে ওয়াসা কার্যালয়ের মূল ফটক পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধায় ওয়াসা কার্যালয়ে যেতে পারেননি মিজানুর রহমানসহ তাঁর সহযোগীরা। ওয়াসার এমডি অফিসে নেই এই সংবাদ শুনে সংস্থাটির সিঁড়িতে বসে পড়েন তাঁরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম শহীদ উদ্দিন অফিসে এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে মিজানুর রহমানসহ জুরাইনের চার বাসিন্দার। মিজানুর রহমানের অভিযোগ খতিয়ে দেখে জুরাইন এলাকার পানি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন শহীদ উদ্দিন। এ সময় শহীদ উদ্দিনকে শরবত খাওয়াতে চাইলে তিনি খেতে অপারগতা প্রকাশ করেন।   </p> <p>মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুরাইন এলাকায় ওয়াসার পানি নর্দমার পানির মতো অপরিষ্কার। এই পানি খাওয়া তো দূরের কথা, হাতেও নেওয়া যায় না। তাহলে এমডি কিভাবে বলেন ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও নিরাপদ?’</p> <p>দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুরাইন এলাকার পানি সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কারওয়ান বাজার এলাকা ত্যাগ করেন মিজানুর রহমান।</p> <p>ওয়াসার দাবি, গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এবং বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা ছিল ওয়াসার এমডির। সকালে সভা শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে রওনা হন। এমডির মোবাইলে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সোনারগাঁও হোটেলের সভায় উপস্থিত ছিলেন শহীদ উদ্দিনও। ঘটনা সামাল দিতে এবং মিজানুর রহমানের অভিযোগ শুনতে তিনি দুপুরে ওয়াসা কার্যালয়ে আসেন। ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত খেতে কেন অপারগতা প্রকাশ করলেন কালের কণ্ঠ’র এমন এক প্রশ্নের জবাবে শহীদ উদ্দিন বলেন, ‘কোন জায়গা থেকে পানি এনে শরবত বানানো হয়েছে তা আমি জানি না। তাই শরবত বর্জন করেছি। জুরাইন এলাকার পানি পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে লোক পাঠানো হয়েছে। সমস্যা সমাধানের পর মিজানুর রহমানের বাসায় রমজানে গিয়ে পানি খাব আমি।’</p> <p>ওয়াসা সূত্র আরো জানায়, এখনো রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় পানির সংযোগ ও পাইপলাইন পুরনো। কোনো কোনো এলাকায় শত বছরের পুরনো পানির লাইনও রয়েছে। ঢাকার সব কটি এলাকার পুরনো পানির সংযোগ ও পাইপলাইন পরিবর্তন করা হয়েছে—এমডির এমন দাবিও ভিত্তিহীন। ওয়াসার ১০টি অঞ্চলের মধ্যে পুরো ঢাকায় প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার পানির সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক লাখ ছয় হাজার পরিবর্তন করে নতুন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মধ্যে মাত্র আড়াই কিলোমিটার পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৮৭৪ সালে ‘ঢাকা ওয়াটার ওয়ার্কস’ পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সংযোগ শুরু করে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে পানি ও মাটির আয়রনের কারণে ক্ষয় হয়েছে অনেক লাইন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়নকাজ চলাকালে পানির লাইন ছিদ্র হয়ে ময়লা পানি ঢুকে পড়ে। ফলে ওয়াসা চেষ্টা করলেও অনেক সময় পানির মান ঠিক রাখতে পারেনি।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনো অনেক পুরনো লাইন রয়েছে। পানি বিশুদ্ধ হলেও লাইনে গিয়ে তা অপরিষ্কার ও ময়লা হতে পারে। আবার অনেক বাড়ির ট্যাংক অপরিষ্কার থাকায় ময়লা বা দূষিত হতে পারে পানি।’</p>