<p>শীতে কুয়াশা পড়বে; মাঠ-ঘাট, সড়ক, জনপদ ঢাকা পড়বে কুয়াশার চাদরে- এটাই আবহমান বাংলার চিরায়ত দৃশ্য। কিন্তু এ দৃশ্যের ক্ষেত্রেও মানুষের অভিজ্ঞতায় কিছু অভ্যস্ততার বিষয় জড়িত।</p> <p>এবার সমস্ত মৌসুমেই দৃশ্যমান হচ্ছে কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার। গত গ্রীস্মে সারা দেশে বয়ে গেছে অন্যবারের তুলনায় বেশি তীব্র  দাবদাহ। বর্ষা মৌসুমে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। আর চলমান শীত মৌসুমে চলছে টানা শৈত্যপ্রবাহ। সেইসঙ্গে কয়েকদিন ধরে কুয়াশা ঢাকা বাংলাদেশকে দেখছে দেশের মানুষ। ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে এই কুয়াশার দাপট।</p> <p>বাসা থেকে বের হলে কয়েক হাত দূরের মানুষটির চেহারা অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাকা সড়কে গাড়িগুলো চলছে প্রায় দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ নৌরুটগুলোতে ফেরিসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। </p> <p>বিমান ওঠানামায় বিলম্ব : ঘন কুয়াশার কারণে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিমান পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয় গতকাল। টানা সাড়ে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামার শিডিউলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। </p> <p>আরো পড়ুন <strong><a href=\"http://www.kalerkantho.com/online/national/2018/01/15/589684\" target=\"_blank\">ঘন কুয়াশায় সারাদেশে যান চলাচল ব্যাহত</a> </strong></p> <p>বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট সময়মতো ওঠানামা করতে পারেনি। এ সময়ে ২৩টি ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন ঘটে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে যখন একের পর এক ফ্লাইট অবতরণ করতে শুরু করে তখন দেখা দেয় এয়ারফিল্ডে স্থান সংকট। এক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা বিমানবন্দরের এয়ারসাইট ভরে যায় উড়োজাহাজে। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে ছিল হাজারো যাত্রী ও তাদের সঙ্গে আসা লোকজন।</p> <p>প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফেরি</p> <p>গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে দীর্ঘ সময়জুড়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকছে। মাত্র তিন কিলোমিটারের ওই নৌপথ পাড়ি দিতে ঘাটে এসে আটকে পড়ে থাকছে বিভিন্ন গাড়ি। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গতকাল রবিবার ফের ঘন কুয়াশার কারণে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে টানা সাত ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। এ নিয়ে চলতি শীত মৌসুমের বিভিন্ন সময় ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট ৮৬ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকল। এতে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব আয় (ফেরির টিকিট বিক্রি) থেকেও বঞ্চিত হয়েছে বিআইডাব্লিউটিসি।</p> <p>আরো পড়ুন <strong><a href=\"http://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2018/01/15/589675\" target=\"_blank\">সাগরে নারী কচ্ছপের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার রহস্য</a> </strong></p> <p>বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'ফের ঘন কুয়াশার কারণে রবিবার টানা সাত ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। তাই দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়িগুলো আটকে পড়েছে। বর্তমানে ছোট-বড় মোট ১৬টি ফেরি সার্বক্ষণিক সচল রেখে গাড়িগুলো দ্রুত পারাপার করা হচ্ছে।'</p> <p>শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে গতকাল সাড়ে চার ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, রবিবার ভোর ৬টা থেকে পদ্মা অববাহিকায় ঘন কুয়াশা নেমে আসে। কুয়াশার চাদারে ঢাকা পড়ে নৌরুট। কুয়াশার ঘনত্ব এত বেশি ছিল যে খুব কাছের কোনো জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই অবস্থা চলছে আজ সোমবারও।</p> <p>আবহওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও ঘন কুয়াশায় সূর্যের তাপ ভূ-ভাগে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুভূত হচ্ছে না। এতে মানুষ একইরকম শীত অনুভব করছে। সেইসঙ্গে রয়েছে বাতাসের দাপট।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর তাড়াশে গতকাল সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ব্যবধান মাত্র ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও ১৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত শীতের দিনে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। কিন্তু এখন ব্যবধান মাত্র ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে শীতের অনুভূতি বাড়ে। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল কোনো কোনো স্থানে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ১ কিলোমিটারের নীচে।</p> <p>কুয়াশার দাপট আরো বেশি ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে। কুড়িগ্রামে হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশায়  বিপর্যস্ত অবস্থা নেমে এসেছে জনজীবনে। গতকাল রবিবারের মতো আজও সূর্যদেব দৃশ্যমান হওয়ার লক্ষন কম। দিনভর বাতাসে ছিল শীতের দাপট। বেলা গড়তেই বাড়তে থাকে শীত। ঘর থেকে বের হলেই শরীরে কাঁপন ধরায়। শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পরেছে। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।</p> <p>একই অবস্থা টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা। </p>