<p>মাকে নিয়ে গাউছিয়াতে শপিং করতে গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী৷ একটি দোকানে জিনিস দেখার পর পছন্দ না হওয়ায় মেয়েটি অন্য দোকানে যেতে চাইলে ঐ দোকানী বাজে ভাষায় তাদের লাঞ্ছিত করে৷ এমন ব্যবহারে স্কুল শিক্ষিকা মা এবং মেয়েটি হতভম্ব হয়ে যায়৷ দোকানীর দুর্ব্যবহার এবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, মারতে উদ্যত হয়৷ লোকটার পক্ষ নেয় অন্য দোকানীরা৷ মা-মেয়েকে শুনতে হয়, ‘মাইয়া মানুষ হইয়া ঝগড়া করেন ক্যান? চুপচাপ মাথা নিচু কইরা কাইটা পড়েন!''</p> <p>ভুক্তভোগী তরুণী এর প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ কিন্তু কীভাবে, কার কাছে যাবেন বুঝতে পারছিলেন না৷ তারপর ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ ‘জাস্টিস ফর উইমেন'- এ একটা পোস্ট দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকায় কেউ যদি দুর্ব্যবহার করে, তাহলে কোথায়-কিভাবে অভিযোগ করতে হবে?''</p> <p>পোস্টটি আব্দুল্লাহ আল ইমরানের চোখে পড়ে৷ তাঁর মনে পড়ে যায় নিউ মার্কেট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের কথা৷ যিনি এর আগে হাতিরপুলে সিএনজি অটোরিক্সায় একটি হয়রানির ঘটনার নাগরিক প্রতিবাদের সময় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন৷ তখনই ইমরানকে তাঁর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে অন্য কাউকেও নাম্বারটি দিয়ে তিনি সাহায্য করতে পারেন৷ পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুন ইমরানকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এই এলাকায় কোনো অনিয়ম চোখে পড়লেই যেন তাকে জানান৷</p> <p>গাউসিয়ায় এক তরুণীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাটিও ইমরান ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান৷ পরে ওই তরুনী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন৷ পাশাপাশি ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডিএমপির এক অতিরিক্ত কমিশনারকেও ঘটনাটি জানিয়ে রাখেন৷</p> <p>তরুণীর সেই অভিযোগের জেরে ঐ দোকানীকে আটক করে পুলিশ৷  অপরাধীকে সোজা চালান করে দেয়া হয় আদালতে৷  নিজের ফেসবুক পাতায় পুরো ঘটনাটিই লিখেছেন ইমরান৷ পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ কোনো অন্যায়ের শিকার হলে ‘নাজমুন নাহার, সহকারী কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নিউ মার্কেট সার্কেল, ঢাকা' বরাবরে কীভাবে অভিযোগ পত্র লিখতে হবে৷</p> <p>সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘নিউমার্কেট এলাকায় প্রতিনিয়ত অনিয়ম-দুর্ভোগের শিকার নারীদের মধ্যে যারা অন্যায়ের সত্যি সত্যিই প্রতিবাদ করতে চান, তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়া এই আইনি পথটি অনুসরণ করতে পারেন৷ মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবাদটি অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না৷ শুরুটা অন্তত আপনাকেই করতে হবে৷ এই দেশে কিছু হয় না বলে যারা পাশ কাটিয়ে যান, যারা প্রতিবাদের বদলে প্রতিনিয়ত অন্যায়কে মেনে নেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, নিজের জায়গা থেকে একটুখানি আওয়াজ তুলুন৷ জনারণ্যে শুরুতে সেই আওয়াজ বড় ক্ষীণ আর বেমানান ঠেকলেও ধীরে ধীরে দেখবেন আরো শহস্র আওয়াজ আপনার দিকে ছুটে আসছে৷ গণমানুষের সম্মিলিত সেই আওয়াজের সামনে দাঁড়ায়, এমন অপশক্তি কোথায়?''</p> <p>দোকানীকে আটকের ভিডিওটি ধারণ করে রবিবার  সন্ধ্যায় ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান৷  লেখাটি পোস্ট করার পর অনেক নারী চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলে কী করতে হবে জানতে চেয়েছেন৷ ইমরান তাদের পরামর্শও দিয়েছেন৷ অনেকেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ইমরান তোমার জন্য গর্ব হচ্ছে৷''</p> <p>অনেক মেয়েই সেখানে শেয়ার করেছেন নিজেদের নিগৃহীত হওয়ার নানা ঘটনা৷   আকরামুল হক ফেসবুকে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের দারুন সহযোগিতার কথা৷ লিখেছেন, ভাবেই বদলাবে আমাদের দেশ৷''</p> <p><strong>অপরাধীকে আটকের ভিডিও</strong></p> <p><iframe frameborder=\"0\" height=\"315\" scrolling=\"no\" src=\"https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2F1520792483%2Fvideos%2F10210541945414466%2F&show_text=0&width=560\" style=\"border:none;overflow:hidden\" width=\"560\"></iframe></p> <p>ইমরান নারীদের নিগৃহীত হলে কি করতে হবে তার একটি আউটলাইন দিয়েছেন,</p> <p>*ক্যাম্পাস থেকে পোলাপান এনে মারপিট করার বদলে আমরা যেভাবে অভিযোগটি করেছিলাম, তার একটি নমুনা দিলাম :</p> <p>বরাবর,<br /> জনাব নাজমুন নাহার<br /> সহকারী কমিশনার<br /> ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ,<br /> নিউ মার্কেট সার্কেল, ঢাকা।</p> <p>বিষয় : নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেটে শপিং করতে গিয়ে দোকানির অভদ্র আচরণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে</p> <p>জনাব,<br /> আমি তামান্না রহমান (ছন্মনাম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোজী ইন্সটিটিউটের একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমার সেশন --------। আমি ------ হলের অনাবাসিক ছাত্রী। আমার পিতার নাম ------------। গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে গাউছিয়া মার্কেটে আমার স্কুল শিক্ষিকা মাকে নিয়ে শপিং করতে যাই। একটি দোকানে চুড়ির দর-দাম করে অন্য দোকানে যেতে চাইলে দোকানি আমাদের বাধা দেন। দাম শুনে না কিনে চলে যাবার জন্য আমাদের বাজে ভাষায় গালাগাল করেন। প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর আরো চড়াও হয়ে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এমনকি মারতেও উদ্যত হন। এই ঘটনায় আশপাশের দোকানের কেউ এগিয়ে তো আসেই নি বরং ওই দোকানির পক্ষ নিয়ে আমাদের হেনস্থা করে। এক পর্যায়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্রী পরিচয় দেয়ার পরও লেখার অযোগ্য ভাষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাকে গালাগাল করতে থাকেন ওই লোক। একপর্যায়ে আমাদের গায়ে হাত তুলতে শুরু করেন। এ ঘটনায় আমরা চরম অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছি। ওই দোকানির নাম না জানলেও দোকানটির অবস্থান আমি চিনি এবং দোকানিকেও দীর্ঘদিন কেনাকাটা করায় চেহারায় চিনি। এই এলাকায় আমার মতো হাজার হাজার নারী এইসব বদমায়েশ দোকানির দূর্ব্যবহারের এবং কখনো কখনো হামলারও শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আমি আমাদের সঙ্গে ঘটা এই ঘটনায় যথাযোগ্য বিচারের মাধ্যমে একটি উদাহরণ তৈরি করতে চাই। এ জন্য আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছি।</p> <p>অতএব, মহাদয়ের নিকট আবেদন, আমার অভিযোগটি আমলে নিয়ে, অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে যাথোপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আমাকে বাধিত করবেন। উল্লেখ থাকে যে, অভিযানে গেলে আমি ওই দোকান ও দোকানিকে চিনিয়ে দিতে পারবো।</p> <p>বিনীত নিবেদক</p> <p>তামান্না রহমান (ছন্মনাম)<br /> ইন্সটিটিউট অব লেদার টেকনোলজী,<br /> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।<br /> সেশন-------------<br /> হলের নাম---------<br /> ফোন নম্বর -------</p> <p>নিউ মার্কেট এলাকার সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের ফোন নাম্বার :<br /> এসআই মনির : ০১৭০৬২৬২৩৭৬ (মার্কেট সংক্রান্ত)<br /> ওসি নিউমার্কেট থানা : ০১৭১৩ ৩৭৩১২৮<br /> এসি নিউমার্কেট সার্কেল : ০১৭১৩৩৯৮৫৩২ (বিশেষ প্রয়োজনে এবং ওসি ও এসআই আমলে না নিলে)<br /> ডিসি রমনা : ০১৭১৩৩৭৩১২০ (উপরের তিনজনের কেউ অভিযোগ আমলে না নিলে)</p> <p>তথ্যসূত্র-ইমরানের ফেসবুক</p> <p> </p>