<p> বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা মামলায় আবারও নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন অভিযুক্ত বিএসএফ প্রহরী অমিয় ঘোষ। বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (জিএসএফসি) প্রথমে যে রায় দিয়েছিল মি. ঘোষকে নির্দোষ বলে, পুনর্বিবেচনার পরও সেই রায়ই বহাল রেখেছে তারা।<br /> বাহিনীর একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে, তবে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কথা ঘোষণা করেনি। এই রায়কে অবশ্য বাহিনীর মহাপরিচালকের অনুমোদন পেতে হবে। ভারতের আদালতে ফেলানীর পরিবারের কাছে এই রায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা করে কোর্ট মার্শালের সমতূল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালত এই রায় দিয়েছে।<br /> পাঁচ সদস্যের আদালতের প্রধান ছিলেন বিএসএফ কর্মকর্তা সি পি ত্রিবেদী। এই পাঁচজনই মূল মামলার শুনানিতে বিচারক ছিলেন। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জিএসএফসি রায় দিয়েছিল যে অভিযুক্ত বিএসএফ প্রহরী নির্দোষ। সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় তার পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় একবছর লেগেছিল, আর তা তিনবার নানা কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।<br /> ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাবার সঙ্গে সীমান্ত পেরোনোর সময়ে গুলিবিদ্ধ হন ফেলানী। দীর্ঘক্ষণ তাঁর মৃতদেহ কাঁটাতারেই ঝুলে ছিল।<br /> রায় পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু পাঁচ দিন পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নভেম্বরে আবারও পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৭ নভেম্বর। কিন্তু ২১ নভেম্বর আদালতেই অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ জ্ঞান হারানোর কারণে চার মাস পিছিয়ে গিয়েছিল প্রক্রিয়া। তাঁর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল আর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। তার আগে মি. ঘোষের কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয়েছিল।<br /> যদিও পুনর্বিবেচনার সময়ে নতুন করে কারও সাক্ষ্য নেওয়ার নিয়ম নেই, তবুও ফেলানীর বাবার সাক্ষ্য নতুন করে নথিভুক্ত করা হয় তখন।<br /> আবার মার্চ মাসে বিচারকরা সকলেই হাজির হলেও বিএসএফের সরকারি আইনজীবী বা প্রসিকিউটর সেদিন কোচবিহারে পৌঁছতে পারেননি অসুস্থতার কারণে। তাই আদালত বসলেও কাজ শুরু করা যায়নি। ৩০ শে জুন সর্বশেষ শুনানি শুরু হয়।<br /> প্রথম দুই দিনে অভিযুক্ত আর বাহিনীর আইনজীবীরা তাঁদের বক্তব্য ও সওয়াল-জবাব করেন আর শেষ দিন- বৃহস্পতিবার বাহিনীর আইন কর্মকর্তারা আইনি ব্যাখ্যা দেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ঘরে বিচারকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।<br /> ভারতীয় সময় রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আদালতের কাজ চলেছে বলে বিএসএফের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।<br /> ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে বাবার সঙ্গে নিজের দেশ – বাংলাদেশে আসছিল ১৬ বছরের ওই কিশোরী ফেলানী খাতুন- তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কোচবিহার জেলার চৌধুরীহাট সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরুনোর সময় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্য অমিয় ঘোষ তাঁর ইনসাস ৫.৫৬ মিলিমিটার বন্দুক থেকে গুলি করেন। কাঁটাতারের ওপরে ফেলানীর দেহ দীর্ঘক্ষণ ঝুলে ছিল। পরে, বিএসএফ নিজেই বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে মামলা রুজু করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা আর বিএসএফে আইনের ১৪৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল।<br /> সূত্র : বিবিসি বাংলা</p>