<p>উর্দুর বিরুদ্ধে ভারতে ষড়যন্ত্র হয়েছে যার সূত্রে ভাষাটি এখন শুধুমাত্র একটি ধর্মগোষ্ঠীর ভাষায় পরিগণিত হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করেছেন খ্যাতনামা ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি।</p> <p>শাবানাকে প্রশ্ন করা হয়, হিন্দি সিনেমা থেকে উর্দুর ব্যবহার ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কেন? </p> <p>জবাবে তিনি বলেন, আজ থেকে যদি ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেকার হিন্দি সিনেমা দেখেন তাহলে বুঝবেন যে সেগুলো উর্দুর মুখাপেক্ষী ছিল। সেইসব ছবির গানে এবং সংলাপে উর্দু ভাষার বৈভব প্রকাশ পেত। </p> <p>উর্দুর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার দরকার ছিল না এবং এই যে ভুল ধারণা তৈরি হতে শুরু করলো কিংবা ধারণা তৈরি করানো হলো যে উর্দু শুধু মুসলমানদের ভাষা- এটা ছিল একটা ষড়যন্ত্র। যার কারণে উর্দুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, কোনো ভাষা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর কী করে হতে পারে? ভাষা তো যে কোনো অঞ্চলভিত্তিক হয়। যেমন উর্দু হচ্ছে উত্তর ভারতীয় ভাষা। হিন্দির এমন অনেক লেখক আছেন যেমন বিশ্বামিত্র আদিল, গুলজার সাহেব- ইনারা হিন্দি বর্ণমালা দেবনাগরি লিখতেই পারেন না, তারা উর্দুতেই লিখেন। </p> <p>তো উর্দুর সঙ্গে যা ঘটেছে- রাজনৈতিক কারণে এটাকে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে পরিচিত করানো হয়েছে। এর দ্বারা ক্ষতি হয়েছে। যেমন শুরুর দিকে যেসব হিন্দি সিনেমা হতো তাতে নায়কের নাম অশোক কুমার হতে পারতো আর নায়িকার নাম কান্তা দেবী। তবে যে গান হতো তার কথা হতো এমন- সাচ বাতা তু মুঝসে ফিদা কিউ হুয়া ক্যায়সে হুয়া/ মার গায়ি তেরি বাকি আদা, ইউ হুয়া আউর অ্যায়সে হুয়া- খুব সাধারণ গান তবে দেখুন এর ভাষা কতো মিষ্টি! </p> <p>উর্দুকে এভাবে কোনঠাঁসা করা প্রসঙ্গে শাবানা বলেন, আমার তো মনে হয় সব ভাষার সঙ্গে এমন জাতভেদ কাণ্ড চলছে।   </p> <p>ব্যক্তিজীবনে গীতিকার-কাহিনীকার জাভেদ আখতারের সহধর্মীনি এবং আধুনিক উর্দুর বিখ্যাত কবি কাইফি আজমির কন্যা শাবানা হিন্দি পত্রিকা নবভারতটাইমসের অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, চলতি বছর তার পিতা কাইফি আজমির জন্মশতক ভারতসহ বিশ্বজুড়ে বিপুল সমারোহে ও বিশেষভাবে উদযাপন করা হবে। </p> <p>জানকি কুটির নামে পরিচিত তাঁর পেত্রিকবাড়ি অর্থাৎ কাইফি আজমির বাসস্থানটি একসময়ে ছিল উর্দু সাহিত্য-শিল্পাঙ্গনের রথি-মহারথীদের তীর্থভূমি। জানকি কুটিরে বসে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে শাবানা জানান, ছোটখাটো হলেও একসময়ে তাদের এই বাড়িতেই অতিথি হিসেবে দিনের পর দিন থেকেছেন বিখ্যাত কবি ফিরাক গোরখপুরী, জোশ মালিহাবাদি, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং গজল সম্রাজ্ঞী খ্যাত বেগম আখতার।</p> <p>এছাড়াও তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত আসতেন মজরুহ সুলতানপুরি, সরদার জাফরি, জানেসার আখতার, ইসমত চুগতাই, শাহির লুধিয়ানভি প্রমুখ নামজাদা কবি-সাহিত্যিকরা। প্রগতিশীল কবি সাহিত্যিকদের তীর্থভূমি ছিল একটা সময়ে কাইফি আজমির বাড়ি।</p> <p>আগামী ১৪ জানুয়ারি কাইফি আজমির জন্মদিন। এ উপলক্ষ্যে কবি জাভেদ আখতার তার শ্বশুড়ের সম্মানে পরিকল্পনা করেছেন রাগ-শায়েরি নামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যাতে কাইফির বিখ্যাত শের ও গীত পরিবেশন করবেন খ্যাতনামা গায়ক শংকর মহাদেবান। </p> <p>শংকরের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করবেন তবলা কিংবদন্তী ওস্তাদ জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে জাভেদ আখতার আবৃ্ত্তি করে শোনাবেন কাইফি আজমির রচনাসম্ভার থেকে আর শাবানা সেগুলোর ইংরেজি ভাষান্তর পরিবেশন করবেন। </p>