<p>গোলাপ ফুলের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা বা ফুলটি হাতে নিয়ে এর ঘ্রাণ উপভোগ তো করেছেন সবাই, কিন্তু এক হাতে গোলাপ নিয়ে আরেক হাতে আনমনে এর পাঁপড়ি ছিড়েছেন কখনো? এ কাজটা সবাই না করলেও কেউ কেউ গোলাপের পাঁপড়ি ছিড়ে থাকেন এভাবে। তবে, ছিঁড়লেও তাদের কেউ নিশ্চয়ই গুণে দেখেননি কয়টা পাঁপড়ি থাকে একটা গোলাপে?</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/rose_rainbow_2009j.jpg" style="height:483px; width:886px" /></p> <p>কিন্তু যদি একটা গোলাপ হাতে নিয়ে কখনো পাঁপড়িগুলো গুণে দেখেন- দেখবেন সেখানে আছে হয়- ১৩টি নয় ২১টি কিংবা ৩৪টি অথবা ৫৫টি না হয় ৮৯টি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ফুলই এই নিয়ম মেনে চলে। অদ্ভুত মনে হচ্ছে?</p> <p>তাহলে বলবো, এ বিষয়ে আরও সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। আপনি স্টুডেন্ট সাইন্সের হোন আর আর্টসের হোন, অঙ্কে দুর্বল হোন আর সুপার ডুপার হোন- খুব সহজেই হিসাবটা করতে পারেন।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/nautilus-shell-with-golden-ratio09h.jpg" style="height:483px; width:508px" /></p> <p><em>শামুকের গঠনেও আছে ফিবোনাচ্চি সংখ্যার খেল</em></p> <p>০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭... এই যে সংখ্যাগুলো, এদেরকে বলা হয় ফিবোনাচ্চি সংখ্যা (ফিবোনাক্কি উচ্চারণেও পরিচিত)। এই সারির কোনো একটি সংখ্যা বা অংক তার আগের দুইটি সংখ্যার যোগফল হবে।  অথবা প্রথম দুটি সংখ্যার যোাগফল হবে পরেরটি। যেমন, যদি সারির ৪ নম্বরে থাকা ২ অঙ্কটিকে ধরেন- এটি এর আগের দুইটি ‘১’ এর যোগফল। বা ২-এর আগের অঙ্কটিকে মানে যদি ১-কে ধরেন, দেখবেন এটি তার আগের ‘০’ এবং ‘১’ এর যোগফল। এভাবে ৫ হচ্ছে তার আগে থাকা ‘৩’ ও ‘২’ এর যোগ ফল, ৮ হচ্ছে তার আগের ‘৫’ ও ‘৩’এর যোগফল।  </p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/spiral-galaxy_small-ou8v.jpg" style="height:483px; width:800px" /></p> <p><em>দূর মহাকাশের ছায়াপথেও ফিবোনাচ্চির গোল্ডেন রেশিও’র ছাপ!</em></p> <p>বিষয়টি অন্যভাবেও মেলাতে পারেন। ফিবোনাচ্চি সংখ্যার যে কোনো একটিকে তার আগেরটি দিয়ে বিয়োগ করুন- যে সংখ্যাটি দিয়ে বিয়োগ করেছেন বিয়োগ ফল হবে তার আগের সংখ্যাটি। এটাই হচ্ছে ফিবোনাচ্চি সংখ্যার ক্রম বা ধারাবাহিকতা।   অর্থাৎ, আগের সংখ্যার সাথে পরের সংখ্যাটা যোগ করলেই আরেকটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যা পাওয়া যায়। </p> <p>কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব ফুল এই নিয়ম মেনে চলে। শুধু ফুল নয়, প্রকৃতির অনেক অনুষঙ্গেই এ সংখ্যা পাবেন। হরেক রকমের ফলেও ফিবোনাচ্চি সংখ্যার প্রভাব দেখা যায়। আনারসের ‘চোখ’ গুণে দেখুন। এক সারিতে ৮ টা কিংবা ১৩ টা থাকে।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/fib8Ear.jpg" style="height:483px; margin:5px 10px; width:338px" /></p> <p><em>মানুষের কানের গঠনেও আছে গোল্ডেন রেশিও’র ছাপ</em></p> <p>ফিবোনাচ্চি সংখ্যার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন লিওনার্দো ফিবোনাচ্চি। জন্ম ইতালির পিসায়। তিনি-ই এই বিষয়টির পরিচয় করিয়ে দেন পশ্চিম ইউরোপীয়দের। তবে ফিবোনাচ্চির আগে এই বিষয়টির উল্লেখ ভারতীয় গণিত শাস্ত্রেও পাওয়া যায়। অবশ্য ফিবোনাচ্চির নামানুসারেই এই ধারার নাম দুনিয়ায় পরিচিত। </p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/fib_disks_spiral0099.jpg" style="height:483px; width:800px" /></p> <p>১২০৩ খ্রিস্টাব্দে খরগোশের প্রজননে তিনি সর্বপ্রথম এই ধারার অস্তিত্ব দেখতে পান। অর্থাৎ দুটি খরগোশ থেকে যদি প্রজনন হয়, আর একটা খরগোশও না মরে, তাহলে যদি ১০ মাস পর ৫৫ টা খরগোশ হয় ১১ মাস পর হবে ৮৯ টা, ১২ মাস পর হবে ১৪৪ টা।</p> <p>এখানেই শেষ না। পাশাপাশি দুটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যার যদি পরেরটাকে আগেরটা দিয়ে ভাগ করেন ১.৬১ হয়। অর্থাৎ ২৩৩ কে ১৪৪ দ্বারা কিংবা ৩৭৭ কে ২৩৩ দ্বারা ভাগ করলে ১.৬১ পাওয়া যাবে। একে বলে গোল্ডেন রেশিও। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গে এই গোল্ডেন নম্বরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যকে ১.৬১ দ্বারা গুণ করলে আরেকটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যের সমান হয়।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/Fibonacci-in-architecture.jpg" style="height:400px; width:600px" /></p> <p><em>প্যাঁচানো সিঁড়ির গঠনেও আছে গোল্ডেন রেশিও</em></p> <p>বর্তমানে মিউজিকে এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। বড় বড় ব্যান্ড দলগুলো বিভিন্ন মিউজিকে ফিবোনাচ্চির ছন্দ ব্যবহার কছে। এই ছন্দে নির্মিত মিউজিকগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।</p> <p>চমক এখনও শেষ হয়নি।<br /> পাখিরা যখন দল বেঁধে আকাশে ওড়ে, অনেকেই আমরা অবাক হয়ে এ দৃশ্য দেখি। কেউ কেউ হয়তো দুই এক ঝাঁক গুণেও ফেলেন। তবে এবার থেকে আরও ভাল করে গণণা করে দেখবেন। উড়ন্ত পাখিদের প্রতি দলে হয় ১৩টা না হয় ২১টা না হয় ৩৪ টা…অর্থাৎ ফিবোনাচ্চির সংখ্যানুযায়ী এরা দলে বিভক্ত থাকে। যদি শিকারির গুলিতে কোনো একটা পাখি মারাও পড়ে, এরা দল ভেঙ্গে আবার ফিবোনাচ্চি সংখ্যানুযায়ী দলবদ্ধ হয়।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/millipede-spiral-curl-89h.jpg" style="height:400px; width:600px" /></p> <p><em>কীটের দেহভঙ্গীমায়ও...</em></p> <p>কী বলবেন! প্রকৃতির এক অদ্ভুত রহস্য! তাই না? এই সংখ্যার গোল্ডেন রেশিওর চমক রয়েছে প্রকৃতির সর্বত্র যাকে অনুসরণ করছে মানুষ সজ্ঞানে বা অজান্তে। শিল্পকলায়, স্থাপত্যে, মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে, জীবজগতে এমনকি ছায়াপথেও পাবেন ফিবোনাচ্চি সংখ্যার ছাপ।</p> <p>হাল আমলে কম্পিউটার সফটঅয়্যার বিভিন্ন অ্যালগরিদমে বা কোডিংয়ে ফিবোনাচ্চি সংখ্যার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়। </p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2017/July/18/fibonacciSpiralALOE-0099.jpg" style="height:483px; width:800px" /></p> <p>ফিবোনানচ্চি সংখার ধারাবাহিকতার নমুনাটা আরেকবার দেখে নিতে পারেন ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭,৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪, ৪১৮১, ৬৭৬৫, ১০৯৪৬, ১৭৭১১, ২৮৬৫৭, ৪৬৩৬৮, ৭৫০২৫,১২১৩৯৩, ১৯৬৪১৮, ৩১৭৮১১,... এর পরবর্তী সংখ্যাগুলো ইচ্ছে করলে আপনিও হিসেব করে বরে করতে পারেন- কারও কারও জন্য এটা একটা মজার ধাঁধাঁ বা পাজল মেলানোর মতো খেলা হতে পারে। </p>